রাশিয়াকে চিন্তার মধ্যে ফেলে দিয়েছে ন্যাটোভুক্ত দেশগুলোর একটি সিদ্ধান্তে। যুক্তরাষ্ট্র, ব্রিটেনসহ একাধিক ন্যাটো অন্তর্ভুক্ত দেশ এর আগে ইউক্রেনে দূরপাল্লার অনেক ক্ষেপণাস্ত্র সাহায্য দিয়েছিল। যদিও তা ব্যবহারের অনুমতি ছিল শুধুমাত্র দেশের অন্দরে অনুপ্রবেশ করা রুশ সেনার ওপর। দীর্ঘদিন ধরে এই নিষেধাজ্ঞা তোলার দাবি জানিয়েছিলেন ইউক্রেনের প্রেসিডেন্ট জেলেনস্কি। অবশেষে সেই আবেদনে সারা দিয়েছে ন্যাটোর অনেক সদস্য রাষ্ট্র। ফলে রাশিয়ার অভ্যন্তরে এখন থেকে হামলা চালাতে পারবে ইউক্রেন।
আর সেই নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় এবার প্রচারের আলোয় চলে এসেছে ব্রিটেনের তৈরি ক্রুজ মিসাইল স্ট্রোম স্যাডো। জানা গেছে, ২৫০ কিলোমিটার দূরত্বে নির্ভুল লক্ষ্যে আঘাত হানতে সক্ষম এই ক্ষেপণাস্ত্র। ৫.১০ মিটার লম্বা এই ক্ষেপণাস্ত্রের ওজন ১৩০০ কিলোগ্রাম। এর বিশেষ ক্ষমতা হলো, দিন হোক বা রাত, যে কোনো আবহাওয়ায় এটি হামলা চালাতে সক্ষম। ফলে রণকৌশল বদলে যাচ্ছে ইউক্রেনের। এতে রাশিয়ার ওপর চাপ বাড়বে। জানা গেছে, রাশিয়া ও ইউক্রেনের মধ্যে যুদ্ধ শুরু হওয়ার পর এই ক্ষেপণাস্ত্র ইউক্রেনকে দিয়েছিল ব্রিটেন ও ফ্রান্স। যদিও শর্ত দেওয়া হয় নিজেদের সীমার বাইরে এর ব্যবহার করা যাবে না। স্ট্রোম স্যাডো মিসাইল ফাইটার বিমান থেকে নিক্ষেপ করা যায়। নিক্ষিপ্ত হওয়ার পর শব্দের গতিতে ছুটে হামলা চালায় লক্ষ্য বস্তুতে। মূলত শত্রুপক্ষের বাঙ্কার, গোলাবারুদের ভা ার ধ্বংস করতে ব্যবহৃত হয় এই ক্ষেপণাস্ত্র। ১৯৯৪ সালে ‘মাত্রা’ ও ‘ব্রিটিশ অ্যারোস্পেস’ তৈরি করে এই মারণাস্ত্র। ‘স্ট্রোম স্যাডো’ ব্রিটেনের দেওয়া নাম, ফ্রান্স এটিকে বলে ‘স্ক্যাল্প-ইজি’। জানা যাচ্ছে, এই মিসাইলের এক একটির দাম ১ মিলিয়ন ডলার। অর্থাৎ ভারতীয় মুদ্রায় ৬.৫ কোটি। শত্রুর এয়ারবেস, রাডার ও যোগাযোগব্যবস্থাকে ধ্বংস করতে এর জুড়ি মেলা ভার। সাম্প্রতিক সময়ে ইউক্রেনের অস্ত্র ভা ার ও বিদ্যুৎক্ষেত্রকে নিশানা করতে এই ধরনের ক্ষেপণাস্ত্রই ব্যবহার করেছে রাশিয়া। ন্যাটোকে পুতিনের হুমকি : ২০২২ সালে ইউক্রেনের ওপর হামলা শুরুর পর থেকেই রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভøাদিমির পুতিন পশ্চিমা বিশ্বের উদ্দেশে একাধিক হুমকি দিয়েছেন। ইউক্রেনের জন্য কোনো বিশেষ অস্ত্র বা সামরিক সহায়তার সম্ভাবনা দেখা দিলেই তিনি সরাসরি ন্যাটোর সঙ্গে রাশিয়ার সামরিক সংঘাত সম্পর্কে সতর্ক করে দিয়েছেন। তাতে কিছুটা কাজও হয়েছে। এর মধ্যেই এবার পশ্চিমাদের তৈরি দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করে রাশিয়ার ভূখে ইউক্রেইনকে আঘাত হানার অনুমতি দিচ্ছে। আর এই সিদ্ধান্ত পশ্চিমা দেশগুলো রাশিয়ার সঙ্গে সরাসরি যুদ্ধে জড়াবে বলে সতর্ক করেছেন প্রেসিডেন্ট পুতিন। এ ধরনের কিছু হলে তা ইউক্রেইন যুদ্ধের প্রকৃতি ও আওতা পুরোপুরি পাল্টে দেবে বলে বৃহস্পতিবার হুঁশিয়ার করেছেন রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট।
পুতিন বলেছেন, এ ধরনের পদক্ষেপ কিয়েভকে দীর্ঘপাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র সরবরাহ করা দেশগুলোকে সরাসরি এই যুদ্ধে জড়িয়ে ফেলবে, যেহেতু স্যাটেলাইটের লক্ষ্যস্থল বিষয়ক তথ্য ও ক্ষেপণাস্ত্রের ফ্লাইট পথের নির্দিষ্ট প্রোগ্রামিং নেটোর সামরিক সদস্যদেরই করতে হবে কারণ ইউক্রেইনের এ সক্ষমতা নেই। রাশিয়ার রাষ্ট্রায়ত্ত টেলিভিশনে পুতিন বলেছেন, এ কারণে এটি শুধু ইউক্রেইন সরকারকে এসব অস্ত্র দিয়ে রাশিয়ায় আঘাত হানার অনুমতি দেওয়ার প্রশ্ন না। ন্যাটো দেশগুলো একটি সামরিক সংঘাতে সরাসরি জড়াবে কি না, এটি সেই সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্ন। যদি এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়, তাহলে তা নেটো দেশগুলোর, যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় দেশগুলোর ইউক্রেইনের যুদ্ধে সরাসরি জড়িয়ে যাওয়া ছাড়া অন্য কিছু হবে না। এটি হবে তাদের সরাসরি অংশগ্রহণ আর এটি অবশ্যই সংঘাতের গতি প্রকৃতি ও ধরন উল্লেখযোগ্যভাবে পাল্টে দেবে। এই নতুন হুমকির ভিত্তিতে রাশিয়া ‘উপযুক্ত সিদ্ধান্ত’ নিতে বাধ্য হবে বলে জানিয়েছেন পুতিন। সেই ‘সিদ্ধান্তগুলো’ কী হবে তা নিয়ে কিছু বলেননি পুতিন।