১৮ অক্টোবর, ২০২১ ০৮:১৪

যে কারণে আধুনিক সমাজে মাদরাসা শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ

অনলাইন ডেস্ক

যে কারণে আধুনিক সমাজে মাদরাসা শিক্ষা গুরুত্বপূর্ণ

কোনো সন্দেহ নেই বর্তমানে দ্বিনি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর (মাদরাসা) অস্তিত্ব মুসলমানদের জন্য আল্লাহর অনেক বড় অনুগ্রহ। এসব চার দেয়ালের দুর্বল মাদরাসাগুলো ইসলাম রক্ষায় বড় অবলম্বন। কেননা ইসলাম হল বিশুদ্ধ বিশ্বাস ও আমলের নাম। যার মধ্যে দ্বিনদারি, মুআমালাত, মুআশারাত ও আখলাক-চরিত্র সবই অন্তর্ভুক্ত। 

আমল নির্ভর করে ইলমের ওপর, আর দ্বিনি ইলমের অস্তিত্ব যদিও মৌলিকভাবে মাদরাসার ওপর নির্ভরশীল নয়; কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্বিনি শিক্ষা মাদরাসার ওপর নির্ভরশীল। বিশেষত যেহারে ধর্মহীনতা, ধর্মবিদ্বেষ ও পাপাচার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মানুষ দুনিয়ামুখী হচ্ছে, তাতে মাদরাসা শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা আরো প্রবলভাবে অনুভূত হয়। দ্বিনি ইলমের অস্তিত্ব যদিও মৌলিকভাবে মাদরাসার ওপর নির্ভরশীল নয়; কিন্তু বর্তমান প্রেক্ষাপটে দ্বিনি শিক্ষা মাদরাসার ওপর নির্ভরশীল।

কারো মনে এই সংশয় আসা উচিত নয় যে নবী-রাসুল (আ.) যেহেতু মাদরাসা প্রতিষ্ঠা করেননি তাই এগুলো অর্থহীন ও অপ্রয়োজনীয়। মাদরাসা কোনো সময়ই অর্থহীন নয়; বরং মুসলিম সমাজের জন্য মাদরাসার প্রয়োজনীয়তাকে নামাজের জন্য অজুর প্রয়োজনীয়তার সঙ্গে তুলনা করা যেতে পারে। যার গুরুত্ব কখনো লোপ পায় না।

প্রথম দিকে ‘ইলমে দ্বিন’ শ্রবণের মাধ্যমে সংরক্ষিত ছিল। দিন-রাত তার প্রচার-প্রসার হতো। কিন্তু এখন না আছে প্রথম যুগের আল্লাহভীতি এবং না আছে তাদের বিস্ময়কর মেধা ও মুখস্থশক্তি। যখন মানুষের সার্বিক দ্বিনি অবস্থার অবনতি হলো তখন পূর্বসূরি আলেমরা দ্বিন সংরক্ষণের ব্যাপারে বিশেষ মনোযোগ দিলেন। ফলে তারা হাদিস থেকে বিধি-বিধান গবেষণা ও আহরণ করে তা সংকলন করলেন। যেন মানুষের ইসলামী শরিয়তের বিধানবলি বুঝতে সমস্যা দেখা না দেয়। 

বোঝা গেল, দ্বিনের প্রচার-প্রসারের জন্য বিশুদ্ধ দ্বিনি শিক্ষার প্রয়োজন ছিল। তা সংরক্ষিত থাকার জন্য গ্রন্থাবলি প্রণয়নের প্রয়োজন দেখা দেয়। এ প্রয়োজন পূরণের জন্য একটি স্বতন্ত্র দলের প্রয়োজন ছিল। তারপর সে গ্রন্থগুলো পড়ানোর মতো শিক্ষকের প্রয়োজন ছিল। প্রথমদিকে পুরো বিষয়টি ছিল অস্থায়ী। পরবর্তী সময়ে মানুষের ব্যস্ততা বাড়ায় এমন একদল মানুষের প্রয়োজন হয়, যারা সদাসর্বদা ইলম নিয়ে ব্যস্ত থাকবে এবং জনগণের যেকোনো সমস্যার সমাধান দেবে। তারপর এলো জাতির সেবায় নিয়োজিত জামাতের বৈষয়িক প্রয়োজন পূরণের ব্যবস্থার পালা। তাদের থাকা-খাওয়ার ভালো ব্যবস্থা করা। এভাবে মাদরাসা প্রতিষ্ঠার প্রয়োজন দেখা দিয়েছে।

বর্তমানে মাদরাসাগুলোর ব্যাপারে নানা ধরনের অভিযোগ শোনা যায়। পারস্পরিক বিরোধের মতো ঘটনাও সেখানে ঘটে। তবু মাদরাসাগুলো অর্থহীন নয়। সব ধরনের অধঃপতন ও বিরোধ সত্ত্বেও মাদরাসাশিক্ষা থেকে মুসলিম সমাজ যতটুকু উপকৃত হচ্ছে সেগুলোর বিবেচনায় মাদরাসার অস্তিত্ব অপরিহার্য। তাই সব মুসলমানের দায়িত্ব ও কর্তব্য হলো মাদরাসাশিক্ষার সাহায্য-সহযোগিতায় এগিয়ে আসা। সঙ্গে সঙ্গে পরিস্থিতি সংশোধন করার যথাসাধ্য চেষ্টাও চালিয়ে যেতে হবে। 

আমি মিরাঠের এক অনুষ্ঠানে বলেছিলাম, তোমরা আলেম-উলামাদের তোমাদের মুখাপেক্ষী মনে করো। যদি বিষয়টি এমনই হয়, তবে তোমরা মাদরাসায় সাহায্য দেওয়া বন্ধ করে দাও। সবাই একজোট হয়ে সাহায্য বন্ধ করে দাও। আল্লাহর প্রতি কৃতজ্ঞতা, আমাদের সামান্য পরোয়া নেই। আমরা ভিন্ন পেশায় নিযুক্ত হব এবং অর্থ উপার্জন করব। কিন্তু তোমাদের সন্তানদের অবস্থা কোথায় গিয়ে দাঁড়াবে। তারা হয়তো ধর্মহীন হবে অথবা ভিন্ন ধর্মে দীক্ষিত হবে।

‘আল-ইলমু ওয়াল উলামা’ গ্রন্থ থেকে মো. আবদুল মজিদ মোল্লার ভাষান্তর

বিডি প্রতিদিন/আবু জাফর

সর্বশেষ খবর