যথাযথ মর্যাদার সঙ্গে পশ্চিমবঙ্গেও পালিত হচ্ছে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস ও একুশে ফেব্রুয়ারি। এ উপলক্ষে আজ রবিবার কলকাতায় অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনের পক্ষ থেকে একগুচ্ছ কর্মসূচি নেওয়া হয়েছে। সকালে কলকাতার পার্কসার্কাস সাত মাথার মোড়ে অবস্থিত বাংলাদেশ গ্রন্থাগার ও তথ্য কেন্দ্রর সামনে থেকে একটি সুদৃশ্য প্রভাতফেরি বের হয়। হাতে নানা বর্ণের মালা, পোস্টারসহ এতে কয়েকশো মানুষ যোগ দেন। পরে তা শহরের কয়েকটি জায়গা ঘুরে ৯ নং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান সরণীতে অবস্থিত বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন চত্বরে এসে শেষ হয়। তারপর মিশন প্রাঙ্গণে অবস্থিত শহীদ মিনারে পুষ্পার্ঘ অর্পণ করে সালাম-বরকতসহ ভাষা শহীদদের স্মৃতির উদ্দেশ্যে শ্রদ্ধা জানানো হয় এবং ১ মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন ডেপুটি হাইকমিশনার জকি আহাদ, হেড অব চ্যান্সেরি মিঞা মহম্মদ মইনুল কবির, ফার্স্ট সেক্রেটারি (প্রেস) মোফাকখারুল ইকবাল, ভারত-বাংলা মৈত্রী সমিতিরসহ সভাপতি তথা কংগ্রেস বিধায়ক অসিত বরণ মিত্রসহ কমিশনের অন্যান্য কর্মকর্তারা।
এরপর মিশন প্রাঙ্গণে ভাষাদিবস নিয়ে বাণী পাঠ ও আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। বিকেল সাড়ে চারটায় থাকছে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।
ভাষা দিবসের তাৎপর্য ব্যখ্যা করতে গিয়ে জকি আহাদ জানান, ‘১৯৫২ সালের এই দিনে আমার বাংলাদেশের সোনার ছেলেরা বুকের তাজা রক্ত দিয়েছিল বাংলাকে রাষ্ট্র ভাষা প্রতিষ্ঠিত করার জন্য সেই থেকে আমরা প্রতিবছরই শহীদ দিবস পালন করে আসছি। এরপর ১৯৯৯ সালে ইউনেস্কো ২১ ফেব্রুয়ারিকে ভাষার মর্যাদা দিতে গিয়ে আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে ঘোষণা করল। বাংলার সম্মান যা আমরা প্রথমে পেয়েছিলাম তা যেন আরও বহু গুণে বেড়ে গেল’। বাংলা ভাষার মর্যাদা ভবিষ্যতে আরও বৃদ্ধি পাবে বলেও আশা প্রকাশ করেন তিনি।
এদিকে, কলকাতার অ্যাকাডেমির ছাতিমতলা চত্বরেও ভাষা-চেতনা সমিতির তরফে গতকাল বিকেল থেকে শুরু হয়েছে মহান ২১ ফেব্রুয়ারি ও ভাষা আন্দোলনের ৬৪ বছর পূর্তি উপলক্ষে বিশেষ অনুষ্ঠান। রাত ১২টায় মশাল মিছিল বের হয়, দিবাগত রাত ৩.২০ মিনিটে শুরু হয় বাউল গানের আসর, চলে সারা রাত। ভাষা আন্দোলনের শহীদ স্মরণে বিভিন্ন রাজ্য থেকেও শিল্পীরা এই অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছেন।
পশ্চিমবঙ্গ রাজ্য সরকারের তথ্য ও সংস্কৃতি বিভাগের পক্ষ থেকে কলকাতার দেশপ্রিয় পার্কের ভাষামঞ্চে বিকেল ৫.৩০ টায় ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করবেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়, পঞ্চায়ত মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায়, নগরায়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম, যুবকল্যাণ মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, কলকাতার মেয়ার শোভন চ্যাটার্জিসহ বিশিষ্ট ব্যক্তিরা।
বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়েও এদিনটি যথাযত মর্যাদার সঙ্গে পালিত হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গনেই একটি অস্থায়ী শহীদ মিনার তৈরি করে সেখানে ভাষা শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, শিক্ষার্থীরা।
ভারত-বাংলাদেশের সীমান্তের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ স্থলবন্দর বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্তেও ‘দুই বাংলা মৈত্রী সমিতি’র তরফে শহীদ দিবস উপলক্ষে এদিন সকাল থেকে সারাদিন ধরে চলেছে নানা অনুষ্ঠান। সীমান্তের জিরো পয়েন্টে অস্থায়ী শহীদ বেদিতেই অসংখ্য মানুষ পুষ্পার্ঘ্য অর্পণ করে ভাষা শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
বিডি-প্রতিদিন/২১ ফেব্রুয়ারি ২০১৬/শরীফ