কলকাতার পোস্তা এলাকায় নির্মাণাধীন ফ্লাইওভার দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করলেন কংগ্রেস সভাপতি রাহুল গান্ধী। শনিবার সকাল সোয়া ৯টায় দিল্লি থেকে কলকাতা বিমানবন্দরে এসে পৌঁছান কংগ্রেস সহ-সভাপতি। এরপর বিমানবন্দর থেকে সড়কপথে তিনি সোজা চলে যান দুর্ঘটনাস্থলে। রবীন্দ্র সরণী দিয়ে সাড়ে ১০টার দিকে ঘটনাস্থলে প্রবেশ করেন তিনি। এসময় তার সাথে ছিলেন পশ্চিমবঙ্গের কংগ্রেস সভাপতি অধীর রঞ্জন চৌধুরী, কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাশমুন্সি, সন্তোষ পাঠক।
দুর্ঘটনাস্থলের ৪০ নম্বর পিলারের কাছে গিয়ে জাতীয় বিপর্যয় মোবাকিলা দল, কলকাতা পুলিশসহ উদ্ধারকারী বিভিন্ন এজেন্সির সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলেন, বেশ কিছু জায়গা ঘুরে দেখেন। উদ্ধারকাজ কতটা এগিয়েছে, কাজ সম্পূর্ণ করতে আরও কতটা সময় লাগবে, এখনও কোন লাশ আটকে আছে কি না সব কিছু খতিয়ে দেখেন। সব মিলিয়ে পাঁচ মিনিট ঘটনাস্থলে ছিলেন রাহুল। রাহুল যখন বেরিয়ে যান সেসময় দুর্ঘটনাস্থলের পাশ থেকে ‘উই ওয়ান্ট জাস্টিস’ বলে স্লোগান দিতে থাকেন অনেকে।
এরপর দুর্ঘটনাস্থল থেকে রাহুল চলে যান কলকাতা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। গত বৃহস্পতিবার উত্তর কলকাতার পোস্তা
এলাকায় নির্মাণাধীন বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার ধসে পড়ে যারা আহত হয়েছিলেন, তাদের বেশিরভাগই এই হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। হাসপাতালে ভিতর গিয়ে আহত ব্যক্তিদের সাথে কথা বলার পাশাপাশি রোগীদের স্বজন এবং চিকিৎসকদের সাথে কথা বলে আহতদের চিকিৎসার খোঁজ খবর নেন রাহুল। প্রায় বিশ মিনিট ছিলেন হাসপাতালে। হাসপাতালে রাহুলের সাথে ছিলেন অধীর রঞ্জন চৌধুরী, কংগ্রেস নেতা সি.পি.যোশী।
হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে ফ্লাইওভার ধসে পড়ার ঘটনাকে ‘ট্র্যাজিডি’ (ভয়াবহ) বলে অভিহিত করে রাহুল বলেন, ‘এই ঘটনায় আমি মর্মাহত। এটা একটা ভয়াবহ ঘটনা। আহতদের সাথে দেখা করতে আমি হাসপাতালে এসেছি। এখন দুর্গতদের পাশে থাকার সময়। আমার যা সহায়তা করার দরকার আমি সেটা করছি’।
তবে ফ্লাইওভার ধসের ঘটনাকে ঘিরে রাজ্যজুড়ে যে রাজনৈতিক তরজা চলছে তা নিয়ে কোন কথা বলতে চাননি রাহুল। রাহুলের সফর ঘিরে দুর্ঘটনাস্থল কেন্দ্র ও হাসপাতালে যথেষ্ট জোরদার করা হয়েছিল নিরাপত্তা ব্যবস্থা। যদিও খালি মাথায় কোন হেলমেট ছাড়া দুর্ঘটনাস্থলে রাহুলসহ অন্যান্য কংগ্রেস নেতা এবং তাদের ব্যক্তিগত নিরাপত্তা রক্ষীদের যাওয়া নিয়ে বিভিন্ন মহলে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে। কারণ যে অংশের কাছে তারা যান সেই অংশটি অত্যন্ত বিপজ্জনক।
এরপর হাসপাতাল থেকে বেরিয়ে হেলিকপ্টার করে বর্ধমান জেলার কুলটির উদ্যেশ্যে রওনা দেন কংগ্রেস সহ-সভাপতি। সেখানে একটি নির্বাচনী প্রচারণায় যোগ দেবেন রাহুল। বর্ধমান ও বাঁকুড়া জেলার তিনটি প্রচারণায় অংশ নেওয়ার কথা তার।
প্রচারণায় অংশ নেওয়ার পূর্ব নির্ধারিত কর্মসূচি থাকলেও দুর্ঘটনাস্থলে যাওয়ার কোন পরিকল্পনা ছিল না। কিন্তু মর্মান্তিক এই দুর্ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে শুক্রবার দুপুরেই তড়িঘড়ি রাহুলের পোস্তার কর্মসূচি স্থির করে কংগ্রেস হাইকমান্ড।
প্রসঙ্গত, গত বৃহস্পতিবার দুপুর সাড়ে বারোটা নাগাদ হঠাৎ করেই হুড়মুড়িয়ে ধসে পড়ে উত্তর কলকাতার পোস্তা এলাকায় নির্মাণাধীন বিবেকানন্দ ফ্লাইওভার ধসে পড়েছিল। ওই ঘটনায় নিহতের সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৪, আহত হয়েছেন ৮৯। ভোটের মুখে পোস্তা ফ্লাইওভার দুর্ঘটনার তীব্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে রাজ্যবাসীর মধ্যে।
এদিকে, এই ফ্লাইওভার ধসে পড়ার ঘটনাকে ‘ম্যানমেড’ বলে অভিযোগ করেছেন কংগ্রেস নেত্রী দীপা দাসমুন্সি। এদিন রাহুলের সাথে দুর্ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে দীপা অভিযোগ করে বলেন এই ঘটনায় রাজ্য সরকারই দায়ী। একটা কালো তালিকাভুক্ত সংস্থাকে দিয়ে এই সরকার কিভাবে কাজ করাচ্ছিল।
বিডি-প্রতিদিন/ ০২ এপ্রিল, ২০১৬/ রশিদা