আগামী ৩০ এপ্রিল ভারতের পশ্চিমবঙ্গ বিধানসভার ৫৩ আসনে ভোট। এর মধ্যে কলকাতার ৫টি কেন্দ্র (মেটিয়াব্রুজ, কলকাতা বন্দর, ভবানীপুর, রাসবিহারী, বালিগঞ্জ) রয়েছে। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ কেন্দ্রটি হল দক্ষিণ কলকাতার ভবানীপুর। কারণ এই কেন্দ্র থেকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী তৃণমূল কংগ্রেস প্রধান মমতা বন্দোপাধ্যায়। মমতাকে জোর টক্কর দিতে তৈরি বিরোধী রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরাও। বাম-কংগ্রেসের জোট প্রার্থী হিসাবে লড়াই করছেন সাবেক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী, কংগ্রেসের সাবেক সাংসদ দীপা দাশমুন্সি, অন্যদিকে বিজেপির হেভিওয়েট প্রার্থী রয়েছেন ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম সদস্য নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসুর নাতি চন্দ্র কুমার বসু। এছাড়াও বহুজন সমাজ পার্টি (বিএসপি), এসইউসিআই ও ছয় স্বতন্ত্র দলের প্রাথীরা রয়েছেন। স্বাভাবিকভাবেই এবারের নির্বাচনটা যে আগের চেয়ে একটু কঠিন, একটু আলাদা তা ভালভাবেই জানেন মমতা। আর সে কথা মাথায় রেখেই বৃহস্পতিবার পঞ্চম দফার ভোটের আগে শেষ নির্বাচনী প্রচারণায় নিজের কেন্দ্রে পদযাত্রায় সামিল হলেন তৃণমূল নেত্রী।
নির্বাচনের দিন ঘোষণা হওয়ার পর থেকে গত প্রায় এক মাস ধরেই দলীয় প্রার্থীদের হয়ে প্রচারণার জন্য উত্তরবঙ্গ থেকে শুরু করে দক্ষিণবঙ্গ, জঙ্গলমহল-রাজ্য চষে বেরিয়েছেন তিনি। এবার নিজের পালা। এদিন বিকেলে দক্ষিণ কলকাতার বেলতলা থেকে ভবানীপুর পর্যন্ত পদযাত্রা করেন মমতা। সাথে ছিলেন যাদবপুরের প্রার্থী রাজ্যটির বিদ্যুৎ দফতরের মন্ত্রী মণীশ গুপ্ত, সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী ফিরদৌস বেগম, কসবা কেন্দ্রের প্রার্থী রাজ্যের ফায়ার সার্ভিসের মন্ত্রী জাভেদ খান প্রমুখ। আর ছিলেন দলের কাউন্সিলর, কর্মী-সমর্থক এবং অসংখ্য সাধারণ মানুষ। মিছিলে প্রত্যেকের হাতেই ছিল দলীয় পতাকা এবং নানা রঙের ফেস্টুন ও পোস্টার।
এর আগে সুকান্ত সেতু থেকে গোলপার্ক পর্যন্ত পায়ে হেঁটে প্রথম মিছিলটি করেন মমতা। সেই মিছিলে মমতার সাথে পা মেলান টালিগঞ্জের তৃণমূল প্রার্থী রাজ্যের মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, রাসবিহারী কেন্দ্রের প্রার্থী শোভনদেব চট্টোপাধ্যায়, সোনারপুর উত্তর কেন্দ্রের প্রার্থী ফিরদৌস বেগম, কসবা কেন্দ্রের প্রার্থী রাজ্যের ফায়ার সার্ভিসের মন্ত্রী জাভেদ খানরা।
ভবানীপুর কেন্দ্রে মোট ভোটারের সংখ্যা ২,০২,৬৫৫। ভোটারের মধ্যে বাঙালি ছাড়াও রয়েছে মাড়ওয়াড়ি, বিহারি, গুজরাটি, শিখ সম্প্রদায়ের মানুষরাও।
২০১১ সালের বিধানসভা নির্বাচনে ভবানীপুর কেন্দ্র থেকে জিতেছিলেন তৃণমূলের বর্তমান সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক, মমতার অত্যন্ত বিশ্বস্ত সুব্রত বক্সি। পরে রেলমন্ত্রীর পদে ইস্থফা দিয়ে মমতা বন্দোপাধ্যায় যখন রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রী হন সেসময় তৃণমূলের এই সুরক্ষিত আসনটি সুব্রত বক্সী ছেড়ে দেন দলীয় নেত্রীর জন্য। এরপর ওই বছরের নভেম্বর মাসে ওই কেন্দ্রে উপনির্বাচন হয়। সেই নির্বাচনে সিপিআইএম প্রার্থীকে অধ্যাপিকা নন্দিনী মুখোপাধ্যায়-কে ৫৪২১৩ ভোটে হারিয়ে জয়লাভ করেছিলেন তৃণমূল নেত্রী।
কিন্তু ২০১৪ সালের লোকসভা নির্বাচনে বদলে যায় ছবিটা। ভারতের বর্তমান প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হাওয়ায় ভর করে বিধানসভা-ওয়াড়ি ফলাফলে দেখা যায় ভবানীপুরে এগিয়ে বিজেপি। এরপর গত বছরেই কলকাতা পৌরসভার নির্বাচনেও এই ভবানীপুর কেন্দ্রে ভাল ফল করে বিজেপি। কিন্তু সেই মোদি হাওয়া এখন আর আগের মতো নেই বলে মনে করছেন রাজনৈতিক বিশেষজ্ঞরা। তাই এই কেন্দ্রে জোট প্রার্থী হওয়ার পরই কংগ্রেসের দীপা দাসমুন্সি শাসকদলের ঘাড়ে নিশ্বাস ফেলছেন। রাত-দিন এক করে দরজায় দরজায় ঘুরে প্রচারণা সারছেন তিনি। সাড়াও পাচ্ছেন। জয়ের ব্যাপারেও অনেকটাই আত্মবিশ্বাসী রাজনীতির ‘বৌদি’। তাই কার ভাগ্যে সিঁকে ছিড়বে তা জানতে অপেক্ষা করতে হবে আগামী ১৯ মে পর্যন্ত।
বিডি-প্রতিদিন/২৮ এপ্রিল, ২০১৬/মাহবুব