বাম-কংগ্রেসের জোট কি এবার তৃণমূলের ভিত নাড়িয়ে দিতে পারবে? র্সূযকান্ত মিশ্র, অধীর চৌধুরীরা কি এবার সরকার গঠন করতে পারবনে? অফিস-আদালত থেকে শুরু করে, বাস-ট্রাম এমনকি এলাকার চা’য়ের দোকানে এখন এটাই আলোচনার বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে।
এক সপ্তাহের বেশি সময় হয়েছে রাজ্যটিতে ভোট সম্পন্ন হয়েছে। ভোট গণনা আগামী ১৯ মে। কিন্তু রাজনৈতিক কর্মী থেকে শুরু করে সাধারন মানুষের আর দেরি সইছে না। ফলাফল নিয়ে চলছে বিস্তর জল্পনা। সিপিআইএম সংসদ মহম্মদ সেলিম তো দাবি করেছেন, তৃণমূলের আসন নাকি এবার ৩ অঙ্কের সংখ্যাতে পৌঁছাবে না। অন্যদিকে তৃণমূল দাবি করেছে বিরোধীদের সমস্ত কুৎসা, অপপ্রচার রুখে দিয়ে এবার ফের ক্ষমতায় আসছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
রাজনৈতিক মহলের মতে, নির্বাচন কমিশনের কড়াকড়ি, কেন্দ্রীয় বাহিনীর নজরদারি এবং পুলিশ কর্মকর্তাদের একের পর এক বদলি এবাররে ভোটে তৃণমূলকে যথেষ্ঠ ভাবাচ্ছে। পাশাপাশি গত পাঁচ বছরের উন্নয়নের খতিয়ান দিয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রচার প্রচারণা চালালেও এবারের ভোটে জোটের হাওয়া বেশ শক্তিশালী। পাশপাশি একাধিক কারণ রয়েছে, যেগুলি খতিয়ে দেখে অনুমান করা যায় জোটকে কিন্তু এবার কিছুটা ভয়ই পাচ্ছে তৃণমূল কংগ্রস।
মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় গত পাঁচ বছরের উন্নয়নকে হাতিয়ার করে রাজ্যে প্রচার প্রচারণা চালালেও বিরোধীদের সম্পর্ককে নেতিবাচক প্রচার করেই ভোটের ময়দান কাঁপাতে হয়েছে।
তৃণমূল কংগ্রেসকে সততার প্রতীক বলে দাবি করা হয়। ক্ষমতায় আসার আগে থেকেই দলের প্রচারের প্রধান হাতিয়ারই ছিল সেই সততা। কিন্তু সততার মুখে ঝামা ঘষে দিয়েছে সারদা। সারদা আর্থিক কেলেঙ্কারিতে একের পর এক দলের নেতা-মন্ত্রীদের জড়িয়ে পড়ার ঘটনা সততার ভাবর্মূতিতে যথেষ্ট প্রভাব ফেলেছে। তবে সারদার থেকেও সততার প্রতীকে সবচেয়ে বেশি আঘাত হেনেছে নারদা ঘুষ ঘটনা।
নারদের স্টিং অপারেশনে যেভাবে দলের শীর্ষ নেতা-নেত্রীদের ক্যামেরার সামনে রুপি নিতে দেখা গেছে মানুষ সেটা একেবারেই ভালভাবে নেয়নি। এই ঘটনায় যথেষ্ট বিরক্ত প্রকাশ করেছেন তারা। নারদা প্রভাব ফেলেছে তৃণমূলের অন্দরেও। আর সেই কারণেই সুগত বসু, দীনেশ ত্রিবেদী’দের মতো সাংসদরা প্রকাশ্যে বিষয়টি নিয়ে মুখ খুলেছেন। ফলে দলের মধ্যইে নেতা-কর্মীরা নারদ নিয়ে যে বিভক্ত হয়ে পড়ছেনে, তা পরিস্কার।
বাম সরকারের শাসনকাল নিয়ে অপপ্রচার করলেও, মানুষ কিন্তু খাগড়াগড় বিস্ফোরণ, কলকাতার পার্কস্ট্রীট ও কামদুনি গণধর্ষণের ঘটনা ভুলে যায়নি। গত সাড়ে চার বছররে মধ্যেই কামদুনির প্রতিবাদীদের কখনও ‘মাওবাদী’ তকমা দেওয়া হয়েছে, আবার কখনও খাগড়াগড়ের সাথে জড়িয়ে গিয়েছে বর্ধমানের তৃণমূল নেতার নাম। দলে রয়েছে গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের প্রকোপও।
রাজ্যে ক্ষমতায় আসার পর তৃণমূলের নেতা-কর্মীদের মধ্যে বিভিন্ন জায়গায় যেভাবে একের পর এক গোষ্ঠী কোন্দল দেখা দিয়েছে, তাতেও কপালে ভাঁজ পড়েছে তৃণমূল নেতৃত্বের। সব মিলিয়ে তৃণমূল যে চাপে তা স্বীকার করে নিচ্ছেন দলের ছোট বড় সব নেতাই। কিন্তু দলনেত্রীর রোষের মুখে পড়ার ভয়েই তারা মুখ খুলছেন না।
বিডি প্রতিদিনি/ ১৩ মে, ২০১৬/ হিমেল-১৯