প্রতিশ্রুতি দেওয়া সত্ত্বেও কর্মসংস্থানসহ অন্যান্য সুযোগ-সুবিধা কিছুই মেলেনি। এই অভিযোগে ভারতীয় নাগরিকত্ব পাওয়ার এক বছর পরই সাবেক ছিটমহলবাসীদের অনেকেই বাংলাদেশেই ফিরে যেতে চাইছেন। ভারতের স্বরাষ্ট্র মন্ত্রালয় বিষয়ক সংসদীয় কমিটির চেয়ারম্যান ও কংগ্রেস সাংসদ প্রদীপ ভট্টাচার্য এই অভিযোগ করে জানান, ‘২০১৫ সালের ১ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে ছিটমহল বিনিময়ের পর যারা ভারতে চলে আসেন তাদের মধ্যে বেশ কয়েকজন বাসিন্দা ফের বাংলাদেশে চলে যাওয়ার ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন। সাবেক ছিটমহলবাসীদের কাছ থেকে আমি এমন কিছু তথ্য পেয়েছি যা থেকে এই বিষয়টি পরিস্কার হয়েছে। এই বিষয়টি খুবই উদ্বেগের। আমি এই বিষয়টি নিয়ে ভারতের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রালয়ের কাছে জানতে চাইব’।
কংগ্রেসের এই সংসদ সদস্য আরও বলেন, ‘কাজের সুযোগের অভাব ছাড়াও অন্যান্য সরকারি প্রকল্প থেকেও বঞ্চিত হচ্ছেন বলে সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দারা অভিযোগ করেছেন’।
প্রসঙ্গত, গত বছরের ১ আগস্ট ভারত-বাংলাদেশের মধ্যে থাকা ১৬১টি ছিটমহল বিনিময় হয়। এরফলে দুই দেশের মধ্যে দীর্ঘদিন ধরে ঝুলে থাকা সমস্যার সমাধান হয়। এই চুক্তি বাস্তবায়নের ফলে ভারত বাংলাদেশকে মোট ১১১টি ছিটমহলের জন্য ১৭ হাজার ১৬০ একর জমি দেয়, অন্যদিকে বাংলাদেশ ৫১টি ছিটমহল বাবদ মোট ৭ হাজার ১১০ একর জমি হস্তান্তর করা হয় ভারতকে।
ভারতীয় ছিটমহলগুলির সবটাই অবস্থিত রয়েছে পশ্চিমবঙ্গের কুচবিহার জেলায়। ৫১টি ছিটমহল ছড়িয়ে ছিটিয়ে রয়েছে জেলার দিনহাটা, মেখলিগঞ্জ, সিতাই, শীতলকুচি ও তুফানগঞ্জ এই পাঁচটি বিধানসভা কেন্দ্রে।
ছিটমহল কার্যকরা হওয়ায় ভারতে থাকা বাংলাদেশের ৫১টি ছিটমহলের ১৪,৮৬৪ জন বাসিন্দা ভারতীয় নাগরিকত্ব লাভ করেন। পাশাপাশি বাংলাদেশে থাকা ভারতীয় ছিটমহলের ৯২১ জন বাসিন্দাও ভারতে চলে এসে এদেশের নাগরিকত্ব লাভ করেন। বিষয়টি নিয়ে সাবেক ভারত-বাংলাদেশ ছিটমহল বিনিময় সমন্বয় কমিটি ও নাগরিক অধিকাররক্ষা সমন্বয় কমিটি (সিসিআরসি)-এর প্রধান আহ্বায়ক দিপ্তীমান সেনগুপ্ত অভিযোগ করে বলেন, যারা বাংলাদেশ থেকে এদেশে চলে আসেন তারা অনেকেই কাজ না পেয়ে বাংলাদেশে ফিরে যেতে চাইছেন।
দিপ্তীমান সেনগুপ্ত বলেন, ‘বাংলাদেশে থাকা ছিটমহলের যেসব বাসিন্দারা ভারতে চলে আসেন তারা এখন নিজেদের অসহায় বলে মনে করছেন। তাদের এখন না আছে কোন কর্মসংস্থানের সুযোগ না আছে আয়ের রাস্তা। তারা কিভাবে তাদের ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করবে? তাই ভবিষ্যত সুনিশ্চিত করতে তারা এখন বাংলাদেশ ফিরে যেতে চাইছেন’।
প্রতিশ্রুতি মতো ছিটমহলবাসীদের কোন প্রত্যাশ্যাই পূরণ করা হয়নি বলে অভিযোগ করে দিপ্তীমান সেনগুপ্ত বলেন, ‘ছিটমহলবাসীদের প্রধান দুইটি দাবি ছিল তাদের জন্য কর্মসংস্থান তৈরি করা এবং জমির রেকর্ড নিষ্পত্তি করা। কিন্তু এই সমস্যা এখনও মেটেনি। জমির উপযুক্ত রেকর্ড ছাড়া কোন মানুষ কি করবে?’
একই অভিযোগ করেছেন ছিটমহলের বাসিন্দা ওসমান গনি। তিনি বলেন, ‘আমরা এখনও উপযুক্ত কোন কাজ পাইনি। আমরা বাংলাদেশেই ভাল ছিলাম তাই এপাড়ে যদি অবস্থার উন্নতি না হয় তবে ফের বাংলাদেশে চলে যাব’।
কুচবিহারের জেলাশাসক পি. উল্গানাথন জানিয়েছেন, ‘সমস্ত সাবেক ছিটমহলের বাসিন্দাদের মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট (এমএনআরইজিএ) প্রকল্পের আওতায় জব কার্ড দেওয়া হয়েছে। এবং সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হওয়ার অভিযোগ এনে কেউ বাংলাদেশ ফিরে চাইছে-এমন কোন রিপোর্ট আমার কাছে আসেনি’।
যদিও ছিটমহলে বঞ্চনার কোন অভিযোগ নেই বলে জানিয়েছেন দিনহাটার তৃণমূল কংগ্রেস বিধায়ক উদয়ন গুহ। তিনি বলেন, ছিটমহলবাসীদের একাংশ ঘরে বসে থাকতে চাইছে এবং কোন কাজ করতে চায় না। তার অভিযোগ, ছিটমহলবাসীদের আসার পরই প্রথম দুই মাস রাজ্য সরকারের তরফে রান্না করা খাবার দেওযা হয়েছিল। এখন সেই সব বাসিন্দারা ঘরে থাকতে চাইছে এবং কোন কাজ করার বদলে সরকারি সহায়তার দিকে তাকিয়ে রয়েছে। যারা বাংলাদেশ থেকে এসেছিল তাদের বিভিন্ন কারখানায় কাজের ব্যবসথা করা হয়েছিল কিন্তু তারা তা করতে চায়নি। সেক্ষেত্রে সরকারের কি করার আছে? আমার মনে হয় তাদের পিছনে কোন প্ররোচনা দেওয়া হচ্ছে আর সেই কারণেই ছিটমহল বাসিন্দারা বাংলাদেশে চলে যাওয়ার কথা বলছে’। এই তৃণমূল বিধায়ক আরও জানান জমি জরিপের কাজ প্রায় শেষ পর্যায়ে। খুব শিগগির তাদের হাতে জমির কাগজপত্র তুলে দেওয়া হবে।
বিডি-প্রতিদিন/ ০৭ আগস্ট, ২০১৬/ আফরোজ