ভারতর উত্তরপ্রদেশে আসন্ন বিধানসভা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে দিল্লির রাজনীতিতে যখন জলঘোলা শুরু হয়েছে, ঠিক সেই পরিস্থিতিতে সর্বভারতীয় স্তরে আরও বেশি করে নিজেদের তুলে ধরার প্রয়াস শুরু করে দিতে চাইছে তৃণমূল কংগ্রেস। লোকসভা ভোটের এখনও অনেক বাকি। কিন্তু তার আগেই হিন্দি বলয়ের একাধিক রাজ্যে বিধানসভা ভোটকে সামনে রেখে বিজেপির বিরুদ্ধে সমস্ত সমমনোভাবাপন্ন ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলিকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার জন্য উসকে দিতে চাইছেন পশ্চিমবঙ্গে মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। বস্তুত, জাতীয় রাজনীতি নিয়ে তৃণমূল নেত্রীর বরাবরই আগ্রহ রয়েছে। তৃণমূল সূত্রে বলা হচ্ছে, মমতার এ বারের লক্ষ্য বৃহত্তর। ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলিকে একজোট করার ক্ষেত্রে অন্যতম ভূমিকা নিতে চাইছেন তিনি। খবর আনন্দবাজার পত্রিকার।
রাজ্য ও জাতীয় স্তরে ক্ষমতাসীন বিজেপির বিরুদ্ধে প্রচার গড়ে তোলার জন্য ইতিমধ্যেই দলের নেতাদের নির্দেশ দিয়েছেন মমতা। সেই প্রচারের মূল বিষয়বস্তু নির্ধারণ করে একটি পুস্তিকা রচনার জন্য কমিটিও গড়ে দিয়েছেন তিনি। কালীপূজার আগেই ওই পুস্তিকা প্রকাশ করার কথা ছিল। সময়ের অভাবে তা হয়ে ওঠেনি। তবে সূত্রের খবর, ওই পুস্তিকার খসড়ার অন্যতম বিষয়ই হল, কেন্দ্রে নরেন্দ্র মোদি সরকার তথা বিজেপির বিরুদ্ধে সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির সঙ্গে ‘রাজনৈতিক সমঝোতা’ গড়ে তোলার প্রস্তাব। পুস্তিকায় এ কথাই বলা হতে পারে যে, অতি সম্প্রতি জাতীয় দল হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে তৃণমূল। তাই দলের উপরে এখন গুরুদায়িত্ব এসে পড়েছে। মোদি-শাসনে যে ভয়ঙ্কর পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে, তাতে দেশে বৈচিত্র্যের পরিবেশকে অক্ষুণ্ণ রেখে উন্নয়নের জন্য ধর্মনিরপেক্ষ দলগুলির প্রতিরোধ জরুরি। যদিও রাজনৈতিক সমঝোতা গড়ে তোলার কথা বলা হলেও এখনই নির্বাচনী সমঝোতার কথা সেখানে বলা হবে না।
প্রশ্ন উঠতেই পারে, কেন্দ্রে মোদি সরকারের মেয়াদ শেষ হতে এখনও আড়াই বছর বাকি। সর্বভারতীয় স্তরে রাজনৈতিক সমঝোতার ভিত গড়তে মমতার এত তাড়াহুড়ো কেন? জবাবে তৃণমূলের এক শীর্ষ নেতা বলেন, রাজনীতিতে হাওয়া বদল আঁচ করার ক্ষমতা দিদির সাংঘাতিক। মমতা অনুমান করতে পারছেন, বিজেপি দ্রুত জনপ্রিয়তা হারাচ্ছে। কিন্তু সেই শূন্যস্থান একা দখলের ক্ষমতা কারও নেই। বরং, জাতীয় স্তরে বিজেপি-বিরোধী ধর্মনিরপেক্ষ শক্তিগুলির জোট গঠন হওয়া ক্রমশ সময়ের দাবি হয়ে উঠবে। বাজপেয়ী জমানার শেষ দিকে যেমন হয়েছিল। তাই সমমনোভাবাপন্ন দলগুলির মধ্যে ঐক্যের ডাক দিয়ে মমতা সেই খেলায় কিছুটা হলেও নিজেকে এগিয়ে রাখতে চাইছেন।
প্রসঙ্গত, গত লোকসভা ভোটে উত্তরপ্রদেশে ৮০টি আসনের মধ্যে ৭১টিই জিতেছিল বিজেপি। তৃণমূল নেতৃত্বের মতে, হিন্দি বলয়ের সব চেয়ে বড় রাজ্যে বিজেপির সেই অবস্থা আর নেই। আসন্ন বিধানসভা ভোটে বিজেপি উত্তরপ্রদেশে সংখ্যাগরিষ্ঠ দল হিসাবে নির্বাচিত হতে না পারলে, জাতীয় রাজনীতির খেলাটাই বদলাতে শুরু করে দিতে পারে। সূত্রের খবর, সেই কারণেই উত্তরপ্রদেশে রাজনীতির সমস্ত ওঠা-পড়ার উপরে নজর রাখছেন মমতা।
উত্তরপ্রদেশের সঙ্গেই আগামী বছর পঞ্জাব, গোয়া, উত্তরাখণ্ড ও মণিপুরে বিধানসভা ভোট হওয়ার কথা। নির্বাচন কমিশনের এক কর্তার মতে, ফেব্রুয়ারি-মার্চ মাসে এই পাঁচ রাজ্যে একই সঙ্গে ভোট করাতে পারে কমিশন। তৃণমূল সূত্রে খবর, এর মধ্যে উত্তরপ্রদেশ, পঞ্জাব ও মণিপুরে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে এক প্রকার নীতিগত সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছে দল। ফলাফলের সম্ভাবনা যা-ই থাকুক, সেখানে ভোটের প্রচারে মমতার যাওয়ার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে না।
বিডি-প্রতিদিন/৩০ অক্টোবর, ২০১৬/মাহবুব