নোবেল জয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেন বলেছেন, জয় শ্রীরাম, রাম নবমী- এ সব কোনও কিছুর সঙ্গেই বাঙালির কোনও যোগ নেই। এখানে দুর্গাপূজা হয়। বাংলা সংস্কৃতিতে কোনও কালেই এ ধরনের স্লোগানের কোনও জায়গা ছিল না। বাংলায় এ সব ‘ইদানীংকালে’র আমদানি। মানুষকে মারার অজুহাত হিসেবে এ স্লোগান ব্যবহার করা হচ্ছে।
শুক্রবার বিকেলে যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে 'স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তাঁর স্মৃতিতে কলকাতা' বিষয়ে বক্তৃতা দেন অর্মত্য সেন। ওই দিন সকালেও শিশির মঞ্চে এক অনুষ্ঠানে যোগ দিয়েছিলেন তিনি। সেখানেও অমর্ত্য সেন বঙ্গ সংস্কৃতি এবং হিন্দুত্ববাদের ‘আস্ফালন’ নিয়ে মন্তব্য করেছিলেন।
অমর্ত্য সেন বলেছিলেন, যখন শুনি কাউকে রিকশা থেকে নামিয়ে কিছু একটা বুলি আওড়াতে বলা হচ্ছে এবং তিনি বলেননি বলে মাথায় লাঠি মারা হচ্ছে, তখন শঙ্কা হয়। বিভিন্ন জাত, বিভিন্ন ধর্ম, বিভিন্ন গোষ্ঠীর মধ্যে পার্থক্য আমরা রাখতে দিতে চাই না। ইদানীং এটা বেড়েছে।
অমর্ত্য সেন বলেন, আজ যখন শুনি বিশেষ বিশেষ সম্প্রদায়ের মানুষ ভীত, শঙ্কিত হয়ে রাস্তায় বেরোন এই শহরে, তখন আমার গর্বের শহরকে চিনতে পারি না। এ সব নিয়ে প্রশ্ন তোলা দরকার। নতুন এই সংস্কৃতি আমদানির পিছনে বিভেদের রাজনীতি কাজ করছে। এক সময় হিন্দু মহাসভা এ ধরনের সংস্কৃতির আমদানি ঘটানোর চেষ্টা করেছিল বাংলায়। বিভেদের রাজনীতির বাতাবরণ তৈরি করার চেষ্টা করেছিল। এখন বিজেপি ঠিক সেই একই উদ্দেশ্যে বাংলায় ‘জয় শ্রীরাম’ সংস্কৃতির আমদানি ঘটানোর চেষ্টা করছে।
বক্তৃতায় পঞ্চাশের দশকে ‘এলিট’ প্রেসিডেন্সির পড়াশোনা, ছাত্র রাজনীতি থেকে কফি হাউস, ক্যামব্রিজ থেকে ফিরে এসে তরুণ বামমনস্ক ছাত্রের যাদবপুর বিশ্ববিদ্যালয়ে চাকরি পাওয়া এবং সেই সূত্রে অর্থনীতির পাঠ্যক্রম নিয়ে তার ভাবনাচিন্তা- সব প্রসঙ্গই ছুঁয়ে যান অমর্ত্য সেন। মনে করিয়ে দেন, কলেজ স্ট্রিট, প্রেসিডেন্সি, যাদবপুরের বৌদ্ধিক সাংস্কৃতিক পরিমণ্ডল।
অমর্ত্য সেনের বক্তব্য শোনার জন্য এ দিন উপচে পড়েছিল যাদবপুরের গান্ধী ভবন প্রেক্ষাগৃহ। ছাত্রদের ভিড়ে সাময়িক বিশৃঙ্খলাও তৈরি হয়। যার জেরে অনুষ্ঠান শুরু হয় প্রায় আধ ঘণ্টা দেরিতে। কানায় কানায় পূর্ণ প্রেক্ষাগৃহকে শৃঙ্খলায় আনতে অমর্ত্যর অবশ্য সময় লাগে এক মিনিট। মঞ্চে উঠেই তিনি ঘোষণা করেন, এখনও ছাত্রদের এই উৎসাহই তাকে আনন্দ দেয়।
সূত্র: আনন্দবাজার পত্রিকা
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা
