৯ দিন পর মঙ্গলবার শেষকৃত্য সম্পন্ন হল আসামের রাজধানী গুয়াহাটির মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে মৃত দুলাল পালের নিথর দেহ। রাজ্যটির মুখ্যমন্ত্রীর আশ্বাস পেয়েই কার্যত ইচ্ছার বিরুদ্ধে দীর্ঘ ৯ দিন পর মঙ্গলবার সন্ধ্যায় বাবার মরদেহ গ্রহণ করেন তার তিন পুত্র আশিস, অশোক ও রোহিত।
মরদেহ বাড়িতে আসতেই কান্নায় ভেঙে পড়ে পরিবারের সদস্যরা।
এরপর এদিন সন্ধ্যায় গুয়াহাটির সোনিতপুর জেলার আলিশিঙ্গা গ্রামে বাবার সৎকার করেন বড় ছেলে আশিস পাল। ধর্মীয় রীতিনীতি মেনেই মরদেহের সৎকার করা হয়। তার আগে প্রায় ১০ কিলোমিটার দীর্ঘ রাস্তায় শোক মিছিল বের করা হয়। সেই মিছিলে যোগ দেয় কয়েক হাজার মানুষ।
ফরেন ট্রাইব্যুনাল থেকে ‘অবৈধ বিদেশি’ নাগরিক হিসাবে চিহ্নিত করার পর ২০১৭ সালের ১১ অক্টোবর থেকে তেজপুর ডিটেনশন ক্যাম্পে ছিলেন ৬৫ বছর বয়সী মানসিক ভারসাম্যহীন ওই বৃদ্ধ। কিন্তু গত সেপ্টেম্বর মাসে আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়ার পর গত ২৮ সেপ্টেম্বর প্রথমে তাকে ভর্তি করানো হয়েছিল তেজপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পরে ২৯ সেপ্টেম্বর তাকে স্থানান্তরিত করা হয় গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ এবং হাসপাতালে।
কিন্তু গত ১৩ অক্টোবর সকালে তার মৃত্যু হয়। বিদেশি নাগরিক হিসাবে ষোষণা দেওয়ায় সেই মরদেহ নিতে অস্বীকার করে তার স্ত্রী, পুত্রসহ পরিবারের সদস্যরা।
দুলাল পালের বড় ছেলে আশিষ পাল দাবি করেন, ভারতীয় বলে যাবতীয় নথি জমা দেওয়ার পরও তার বাবাকে দুই বছর ধরে বন্দি করে রাখা হয়েছে। তাই বিদেশি ব্যক্তিকে বাংলাদেশে পাঠিয়ে দেওয়া হোক।
আর এতেই তৈরি হয় অচলাবস্থা। বিপাকে পড়ে বিজেপি শাসিত আসামের রাজ্য সরকার। গত ৯ দিন ধরে গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গেই পড়ে থাকে দুলালের মৃতদেহ। এমন অবস্থায় প্রশাসনের পক্ষ থেকে মরদেহ নেওয়ার জন্য যাবতীয় প্রচেষ্টা চালিয়ে ব্যর্থ হয়। ঘটনায় ম্যাজিস্ট্রেট পর্যায়ের তদন্তের নির্দেশ দেয় আসাম সরকার। কিন্তু তাতেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। সরকারের বিরোধিতায় পথে নামে কয়েকটি সংগঠনও। অবশেষে হস্তক্ষেপ করতে হয় মুখ্যমন্ত্রী সর্বানন্দ সনোয়ালকে।
দুলাল পালের ছেলে, সারা আসাম বাঙালি যুব ছাত্র ফেডারেশনের কর্মকর্তাদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী। তিনি প্রতিশ্রুতি দেন দুলাল পালকে ভারতীয় প্রমাণ করতে সুপ্রিম কোর্টে আইনি লড়াইয়ে তার পরিবারকে রাজ্য সরকারের তরফে যাবতীয় সহায়তা করা হবে। সেই সাথে মুখ্যমন্ত্রীর তরফে এও জানানো হয় ডিটেনশন ক্যাম্পে অবস্থান করা ঘোষিত সমস্ত মানুষদের বাংলাদেশি নাগরিকের বিষয়টি পর্যালোচনা করতে একটি কমিটি গঠন করা হবে। মুখ্যমন্ত্রীর ওই আশ্বাসের পরই কঠোর অবস্থান থেকে সরে আসে দুলালের পরিবারের সদস্যরা।
এব্যাপারে আশিস পাল জানান ‘আমরা আশা করব মুখ্যমন্ত্রী ও তার সরকার সমস্ত প্রতিশ্রুতি রক্ষা করবে।’
যদিও বিশ্বস্ত সূত্রের খবর, গুয়াহাটি মেডিকেল কলেজ এন্ড হাসপাতালের রিপোর্টে আগে মৃতের পরিচয় হিসাবে দুলাল পালকে বাংলাদেশের ঢাকার নাগরিক বলে উল্লেখ্য করা হয়েছিল। কিন্তু পরিবারের অনড় মনোভাবের কারণেই সরকারি রিপোর্টে মৃত্যুর সনদে দুলাল চন্দ্র পালকে শোণিতপুর জেলার ঢেকিয়াজুলির আলিশিঙ্কা গ্রামের বাসিন্দা বলে উল্লেখ করা হয়।
এদিকে, জাতীয় নাগরিক পঞ্জি (এনআরসি) ইস্যুতে দলের সব নেতাদের নিয়ে বৈঠকে বসতে চলেছেন কংগ্রেস সভানেত্রী সোনিয়া গান্ধী। আগামী ২৫ অক্টোবর দিল্লিতে এই বৈঠক করতে পারেন সোনিয়া। সেখানেই এনআরসি ইস্যুতে দলের অবস্থান স্পষ্ট করতে পারেন তিনি।
বিডি প্রতিদিন/কালাম