রবিবার রাতে দিল্লির জহরলাল নেহেরু বিশ্ববিদ্যালয় (জেএনইউ) শিক্ষার্থীদের ওপর সশস্ত্র হামলার ঘটনায় তীব্র নিন্দা জানিয়েছেন পশ্চিমবঙ্গের ক্ষমতাসীন দল তৃণমূল কংগ্রেস নেত্রী ও রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। তার অভিমত এই হামলা পূর্বপরিকল্পিত।
সোমবার দক্ষিণ ২৪ পরগনার সাগরে গণমাধ্যম এর প্রশ্নের উত্তরে হামলা প্রসঙ্গে মমতা বলেন, "জেএনইউ-তে যেটা হয়েছে-সেটা একটা ফ্যাসিস্ট স্ট্রাইক হয়েছে। চূড়ান্ত বর্বরতা হয়েছে। যেভাবে ছেলেদের ওপর আক্রমণ করা হয়েছে, বিশেষ করে মেয়েদের ওপর, এমনকি শিক্ষকদের পর্যন্ত ছাড়া হয়নি। আমরা দেখতে পাচ্ছি জেএনইউ থেকে শুরু করে আলিয়া মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয়, আইআইটিসহ বিভিন্ন জায়গায় শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ওপর একটা আঘাত হচ্ছে।"
তবে গতকালের হামলার পর রাতেই এই ঘটনার তীব্র নিন্দা জানিয়েছিলেন মমতা। এই হামলায় জেএনইউ শিক্ষার্থীদের পাশে দাঁড়াতে দিল্লিতে তৃণমূলের এক প্রতিনিধিদলকেও পাঠানো হয়।
যদিও সোমবার ওই প্রতিনিধিদলকে জেএনইউ ক্যাম্পাসের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি বলে জানা গেছে। এ ব্যাপারে মমতা বলেন, 'আজকে আমাদের দলের নেতা দীনেশ ত্রিবেদীর নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধি দল সেখানে পাঠানো হয়েছে, কিন্তু তাদের ভিতরে ঢুকতে দেওয়া হয়নি। আমাদের তাদের নৈতিক সমর্থন দেওয়ার জন্য অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের তরফ থেকে এই প্রতিনিধি দল পাঠানো হয়েছে। আমরা পুরোপুরিভাবে শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছি।'
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'আমি সমস্ত ছাত্র ভাই এবং বোনদের আবেদন জানাবো তারা যেন একত্রিত থাকে, এবং একসাথে কথা বলে ও একসাথে লড়াই করে।'
জেএনইউ হামলা পরিকল্পিত ভাবে সংঘটিত হয়েছে বলেও এদিন অভিযোগ করেন। তিনি বলেন, 'এটা পুরোপুরি ভাবে পূর্বপরিকল্পিত হামলা।' তার প্রশ্ন কীভাবে বহিরাগতরা নিয়ে অস্ত্র নিয়ে ভিতর ঢুকে পড়ল? তারা শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের নির্দয় ভাবে মারধর করলো? সে সময় প্রশাসন উপস্থিত থাকলেও তাদেরকে কেউ উদ্ধার করতে আসেনি।'
তৃণমূল নেত্রীর অভিমত, 'সকাল থেকে রাত প্রতিনিয়ত এরকম ধরনের ঘটনা ঘটে চলেছে। এই মুহূর্তে দেশের গণতন্ত্র বিপদের মুখে, শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে তাদের নিরপেক্ষতা, মত প্রকাশের স্বাধীনতা বিপদের মুখে।'
এদিন পাকিস্তানের প্রসঙ্গ টেনে আনেন মমতা ব্যানার্জি। তিনি বলেন, 'ভারত মৌলবাদ তান্ত্রিক দেশ নয়, ভারত গণতান্ত্রিক দেশ। পাকিস্তানের মৌলবাদে বিশ্বাস করে কিন্তু আমরা তা করি না। সেই জন্যই ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে অনেক পার্থক্য রয়েছে। আমরা পাকিস্তানকে সমর্থন করি না, এটা একটা পৃথক দেশ। তাছাড়া সেখানে কোনো গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়া নেই। কিন্তু এই ভারতে গণতন্ত্র আছে, সেই কারণে আমরা আমাদের দেশের জন্য গর্ববোধ করি। আমাদের দেশের গণতন্ত্র একটা বৈশিষ্ট্য আছে কিন্তু এখন আমরা দেখছি একটি রাজনৈতিক দল ক্ষমতায় এসে সবাইকে মারতে চলে যাচ্ছে, সব প্রতিষ্ঠানকে ভেঙে ফেলছে। সবার স্বাধীনতা কেড়ে নেওয়া হচ্ছে। এভাবে কতো দিন দেশ চলবে? দেশের জন্য এটা খুব খারাপ খবর। এটা আমরা পছন্দ করি না।'
বিজেপির বিরুদ্ধে সমাজের কণ্ঠরোধ করার অভিযোগ এনে তিনি বলেন "শিক্ষার্থী, যুবসমাজ, কৃষক, শিল্পপতি, নাগরিক সমাজ প্রত্যেকের কণ্ঠরোধ করার চেষ্টা হচ্ছে।'
উল্লেখ্য, রবিবার রাতে জেএনইউ ক্যাম্পাসে হামলা চালায় একদল দুর্বৃত্ত। মুখ ঢাকা অবস্থায় লাঠি, লোহার রড, ছুরি, হকি স্টিক নিয়ে শিক্ষার্থী-শিক্ষকদের উপর হামলা চালানো হয় বলে অভিযোগ। এই ঘটনায় অখিল ভারতীয় বিদ্যার্থী পরিষদ (এবিভিপি) এর উপর অভিযোগের আঙুল উঠেছে, যদিও এই অভিযোগ অস্বীকার করেছে তারা। ওই হামলায় মারাত্মকভাবে আহত হয়ে হয় ছাত্র সংসদের সভাপতি ঐশী ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক সতীশ কুমার যাদবসহ অন্তত ২০ জন শিক্ষার্থী ও শিক্ষক-শিক্ষিকা। আহতদের রাতেই ভর্তি করা হয় দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিকেল সাইন্সস (এইমস)-এ।
বিডি প্রতিদিন/হিমেল