২৩ সেপ্টেম্বর, ২০২২ ১৯:৪৯

বাংলাদেশির মরদেহ দেশে আনতে বিপাকে স্বজনরা, পাশে দাঁড়ালো ইন্দোবাংলা প্রেসক্লাব

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

বাংলাদেশির মরদেহ দেশে আনতে বিপাকে স্বজনরা, পাশে দাঁড়ালো ইন্দোবাংলা প্রেসক্লাব

মৃতের স্বজনরা

ভারতে চিকিৎসা ও ভ্রমণের উদ্দেশে গিয়ে অসুস্থ হয়ে মৃত্যু হয় এক বাংলাদেশি নাগরিকের। কিন্তু সেই মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনতে বিপাকে পড়েন স্বজনরা। মরদেহ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য স্থানীয় হাসপাতাল ও সংশ্লিষ্ট জেলা প্রশাসনের কাছ থেকে প্রয়োজনীয় অনুমতিপত্র নিয়েও ভারত-বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক সীমান্তে ঘণ্টার পর ঘণ্টা অপেক্ষা করে থাকেতে হয় বলে অভিযোগ। শেষ পর্যন্ত কার্যত হতাশ হয়ে সীমান্ত থেকে ফের হাসপাতালে ফিরে আসতে হয় মৃতের স্বজনদের।

বিষয়টি জানতে পেরে ওই মরদেহ নিজের দেশে নিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় ইন্দোবাংলা প্রেসক্লাব, কলকাতা। এরপর কলকাতায় বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের সাথে যোগাযোগ করে। এরপরই মিশনের উদ্যোগে ওই মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য মেলে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র। 

জানা গেছে, গত ১৬ সেপ্টেম্বর (শুক্রবার) ভারতে যান বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বেনিচক গ্রামের বাসিন্দা শ্রীমন্ত কর্মকার ও সন্তোষ কর্মকার নামের দুই ব্যক্তি। আত্মীয়দের বাড়িতে ভ্রমণ এবং সেদেশে চিকিৎসা- মূলত এই দুই উদ্দেশ্য নিয়ে তাদের ভারতে যাওয়া।

শুক্রবারই পশ্চিমবঙ্গের মালদা জেলার মঙ্গলবাড়ী খইহাট্টা গ্রামে এক আত্মীয়র বাড়িতে ওঠেন শ্রীমন্ত। এরপর চলতি বুধবার মালদা শহরের বুড়াবুড়িতলা এলাকায় অন্য এক আত্মীয়ের বাড়িতে ঘুরতে যান। কিন্তু সেখানে গিয়েই অসুস্থ হয়ে যান শ্রীমন্ত কর্মকার নামে ৫০ বছর বয়সী ওই বাংলাদেশি নাগরিক। এরপর দ্রুত তাকে মালদা মেডিকেল কলেজে ভর্তি করলে সেখানে তার মৃত্যু হয়। তারপর মরদেহ ময়নাতদন্তও করা হয়। 

এরপর হাসপাতাল এবং স্থানীয় জেলা প্রশাসনের তরফে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র নিয়ে বাংলাদেশের উদ্দেশে রওনা দেন মৃত শ্রীমন্ত কর্মকারের স্বজনরা। কিন্তু হিলি সীমান্তে মরদেহ নিয়ে গেলও কিছু আইনি জটিলতার কারণে তাদের ফের মালদা হাসপাতালে ফিরে যেতে হয়। এমন অবস্থায় সরকারের কাছে তারা দাবি জানান, মরদেহ যেন বাংলাদেশে পাঠানোর ব্যবস্থা করা হয়।

মৃত শ্রীমন্ত কর্মকারের চাচাতো ভাই লিটন কর্মকার জানান, মৃত শ্রীমন্ত কর্মকার বাংলাদেশের চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলার গোমস্তাপুর উপজেলার বেনিচক গ্রামের বাসিন্দা। গত গতকাল বৃহস্পতিবার মৃত ব্যক্তির ময়নাতদন্ত করা হয়। বাংলাদেশে মৃতদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য জেলা প্রশাসনের তরফ থেকে লিখিত আনা হয়। কিন্তু সেই মরদেহ নিয়ে যাওয়ার জন্য পশ্চিমবঙ্গের দক্ষিণ দিনাজপুর জেলার হিলি আন্তর্জাতিক সীমান্তে এলে বিএসএফের পক্ষ থেকে আটকে দেওয়া হয়। বিএসএফের তরফে বলা হয়, মরদেহ নিজ দেশে নিয়ে যাওয়ার জন্য কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশনার থেকে প্রয়োজনীয় ছাড়পত্র নিয়ে আসতে হবে। এরপর উপায়ান্ত না দেখে পুনরায় সেই মরদেহ সীমান্ত থেকে ঘুরিয়ে মালদা মেডিকেল কলেজ ও হাসপাতালে মর্গের সামনে রাখা হয়। ইতোমধ্যে ওই মরদেহ থেকে দুর্গন্ধ ছড়িয়ে পড়ে। কিন্তু কার্যত নিরুপায় হয়ে ওই মরদেহ নিয়েই তারা মেডিকেল কলেজ চত্বরে বসে থাকেন। মরদেহ কীভাবে বাংলাদেশে নিয়ে আসবেন, তা ভেবেই অকূল কিনারায় পড়েন তারা। যদিও বিশেষ অনুরোধের পর ওই মরদেহ ফের হাসপাতালের মর্গের ভেতরে রাখা হয়। 

মৃত ব্যাক্তির আত্মীয় তপন কর্মকার বলেন, ‘শ্রীমন্ত কর্মকারের মরদেহ হিলি সীমান্তে নিয়ে যাওয়ার পরই বিএসএফের কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশ হাইকমিশনের তরফ থেকে ছাড়পত্র লাগবে। এরপরই আমরা মরদেহ নিয়ে মালদহ জেলা হাসপাতালে ফিরে আসি।’ 

যদিও ওই মরদেহ দেশে ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথি সংগ্রহের জন্য মৃত ব্যক্তির সাথে থেকে ভারতে আসা সন্তোষ কর্মকার শুক্রবার সকালে মালদা থেকে কলকাতায় বাংলাদেশ ডেপুটি হাইকমিশন কার্যালয়ের উদ্দেশে রওনা দেন।

এরই মধ্যে খবরটি পাওয়ার পরই সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দেয় কলকাতার ইন্দোবাংলা প্রেসক্লাব। ফোনে লিটন কর্মকার এবং সন্তোষ কর্মকারের সাথে যোগাযোগ করা হয়। 
অন্যদিকে বাংলাদেশ উপ-দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা মো. বশির উদ্দিনকেও বিষয়টি জানানো হয়। তিনি আশ্বাস দেন মিশরের তরফ থেকে দ্রুত প্রয়োজনীয় নথি সরবরাহ করা হবে। এরপর এদিন দুপুরের দিকে মিশনে পৌঁছান সন্তোষ কর্মকার এবং শ্রীমন্ত কর্মকারের মরদেহ বাংলাদেশে নিয়ে আসার ব্যাপারে প্রয়োজনীয় নথি সন্তোষের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

সন্তোষ কর্মকার বলেন,‘আমরা চিকিৎসা করাতে এসেছিলাম কিন্তু তার আগেই আমাদের ওই সহকর্মী মারা যান। এরপর আইনি বিষয়টি না জেনেই আমরা হিলি সীমান্তে চলে যাই। কিন্তু সেখান থেকে বলা হয়, প্রয়োজনীয় নথি ছাড়া মরদেহ নিয়ে যাওয়া যাবে না। এরপরই ইন্দোবাংলা প্রেসক্লাবের সহযোগিতা এবং কলকাতার বাংলাদেশ উপ হাইকমিশনের তৎপরতায় খুব দ্রুত কাজটি সম্পন্ন হয়।’ 

ইন্দোবাংলা প্রেসক্লাবের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়ে মিশনের কর্মকর্তা বসির উদ্দীন বলেন,‘ক্লাবের তরফ থেকে আমরা জানতে পারি যে, বাংলাদেশের এক নাগরিক তিনি মালদায় মারা যান এবং তাকে সীমান্তে দিয়ে পার করা যাচ্ছে না। এরপরই তার আত্মীয়-স্বজনদের উপকমিশনে আসতে বলা হয়। এরপর মিশরের তরফে ফরেনার রিজিওনাল রেজিস্ট্রেশন অফিসের সাথে যোগাযোগ করে যাবতীয় প্রক্রিয়া সম্পন্ন করা হয়।’ 

সবকিছু ঠিক থাকলে শনিবারই শ্রীমন্তের মরদেহ বাংলাদেশে পৌঁছাবে। 

বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

 

এই রকম আরও টপিক

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর