৩০ জানুয়ারি, ২০২৩ ১৯:০০
মঙ্গলবার বাংলাদেশ প্যাভিলিয়নের উদ্বোধন

পর্দা উঠলো কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার

দীপক দেবনাথ, কলকাতা

পর্দা উঠলো কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার

সোমবার দুপুর ২টা নাগাদ কলকাতার কাছেই সল্টলেকের ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ প্রাঙ্গণে এই বইমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি

আনুষ্ঠানিক উদ্বোধন হলো ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার। আজ সোমবার দুপুর ২টা নাগাদ কলকাতার কাছেই সল্টলেকের ‘সেন্ট্রাল পার্ক’ প্রাঙ্গণে এই বইমেলার আনুষ্ঠানিক সূচনা করেন পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি। একটি কাঠের পাটাতনে কাঠের হাতুড়ি দিয়ে ৪৬ বার বাড়ি মেরে এর উদ্বোধন করা হয়। 

এসময় সেখানে উপস্থিত ছিলেন স্পেনের ক্রীড়া ও সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের অধীন ‘বুকস অ্যান্ড প্রমোশন রিডিং’ বিভাগের মহাপরিচালক মারিয়া হোসে গালভেজ সালভাদর, স্পেনের রাষ্ট্রদূত হোসে মারিয়া রিদাও ডমিনগুয়েজ, বিশিষ্ট সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, কলকাতা বই আন্তর্জাতিক বইমেলার আয়োজক সংস্থা বুক সেলারস অ্যান্ড গিল্ডের সভাপতি সুধাংশু শেখর দে, গিল্ডের সম্পাদক ত্রিদিব চট্টোপাধ্যায়, কবি সুবোধ সরকার, কৃষিমন্ত্রী শোভন দেব চট্টোপাধ্যায়, পরিবহনমন্ত্রী স্নেহাশীষ চক্রবর্তী, ক্রীড়া ও যুব কল্যাণমন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস, তথ্য ও সংস্কৃতিমন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেন, পর্যটনমন্ত্রী বাবুল সুপ্রিয়, ফায়ার সার্ভিসমন্ত্রী সুজিত বসু, তৃণমুল সাংসদ দোলা সেন, বিধায়ক ও সংগীতশিল্পী অদিতি মুন্সি প্রমুখ। 

আগামীকাল মঙ্গলবার মেলা সর্বসাধারণের জন্য খুলে দেওয়া হবে।

উদ্বোধনী ভাষণে মমতা বলেন, ‘অবশেষে বইমেলা তার একটা স্থায়ী জায়গা পেয়েছে। এখানে মেলা করার ফলে বইমেলার আকর্ষণ যেভাবে বেড়েছে, তেমনি জায়গাও বেড়েছে। এটা একটা বড় সাফল্য।’ 

তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশসহ বিভিন্ন দেশ এই মেলায় অংশগ্রহণ করছে এবং আজকে সারাবিশ্ব এই বইমেলায় মিলিত হয়েছে। এটা প্রকৃত অর্থেই একটা আন্তর্জাতিক বইমেলায় পরিণত হয়েছে। এই বইমেলা অদ্বিতীয়, অসাধারণ।’ 
 
ছোট স্টলগুলোকে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেওয়ার আহ্বান জানিয়ে মমতা বলেন, ‘বড় লেখকরা প্রচার পায় তার গুণে, কিন্তু ছোট লেখকরাও কম নন। ছোটদের লেখার দামও অনেক বেশি। এ থেকে অনেক কিছু শেখা যায়।’ 

নিজেকে একজন ক্ষুদ্র মানুষ অভিহিত করে মমতা বলেন, ‘আমি খুব ক্ষুদ্র মানুষ, আমার সবটাই কারো কারো পছন্দ নাও হতে পারে। আমিও তো সমালোচনার ঊর্ধ্বে নই। আমাকে সমালোচনা করলে আমিও খুশি হই। কারণ, কোনো সমালোচনা থেকে যদি কিছু শিখতে পারি তার থেকে বড় জিনিস আর হতে পারে না। যে আমায় খারাপ বলে বলুক, তুমি বলো না, এটাই আমাদের শিক্ষা...।’

মুখ্যমন্ত্রীর অভিমত, ‘বই শুধু বইই নয়, বই হচ্ছে মানুষের জীবন, বাস্তব চেতনা। বই নতুন জিনিস জানতে শেখায়, আবিষ্কার করতে শেখায়। এখনো আমাদের অনেক কিছু শেখার বাকি আছে। আমরা যতদিন বাঁচি ততদিন শিখি। তাই বইয়ের আরেক নাম জীবন। বই হচ্ছে বিশ্বের লাইফলাইন।’

আগামী দিনে দিল্লিতেও বাংলা বইমেলা হওয়া উচিত বলে মনে করেন তিনি। সেখানে জাতি, ধর্ম, নির্বিশেষে প্রত্যেকটা জেলা অংশগ্রহণ করবে। 

ছাত্রদের প্রতি তার আহ্বান, ‘ইন্টারনেটে হয়তো অনেক কিছু পাওয়া যায় কিন্তু বইমেলা, ধুলো মাটির স্বাদ বা কলমের স্বাদ পেতে বইমেলায় আসতে হবে।’

কিছুটা আক্ষেপের সুরে মমতা বলেন, ‘একটা উইপোকা কামড়ালেও সেটা দেখানো হয় কিন্তু কেউ একজন ভালো লিখলে বা ভালো গান গাইলে সেটা নিয়ে কোন পর্যালোচনা করা হয় না। রাজনৈতিক নেতারা কি বই লিখতে পারেন না? যদিও বইমেলার উদ্বোধনী মঞ্চ থেকে এদিন নিজের লেখা ৬টা বই প্রকাশ করেন মমতা। এ নিয়ে এখনো পর্যন্ত তার লেখা ১২৮টি বই প্রকাশিত হয়েছে।’ 

মমতার বক্তব্য শুরুর আগে এদিন উদ্বোধনের মঞ্চ থেকে ‘আরপিজি সৃষ্টি সম্মান’ এ পুরস্কৃত দেওয়া হয় সাহিত্যিক শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়কে। এই পুরস্কার তুলে দেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা ব্যানার্জি এবং আরপিজির ম্যানেজিং ডিরেক্টর দেবাশীষ ব্যানার্জি। 

পড়ে শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায় বলেন, ‘আজ আমাকে যে সম্মান জানানো হলো তার জন্য আমি তাদের কাছে আন্তরিক কৃতজ্ঞ। সম্মান মানুষকে কিছুটা আলোকিত করে, কিন্তু ক্ষণিকের আলোকিত হওয়ার পেছনে যে নিরলস পরিশ্রম থাকে, যে হাড় ভাঙা খাটুনি থাকে তার ইতিহাস মানুষ জানতে পারেনা। তবু মাঝে মাঝে যখন আপনাদের মুখোমুখি হই, এরকম একটা বিচ্ছুরণ চোখে মুখে এসে পড়ে, তখন ভালোই লাগে। মনে হয় এতকাল ধরে যে পরিশ্রম করেছি সেটা হয়তো বৃথা হয়নি।’ 

বইমেলায় এবারের থিম কান্ট্রি ‘স্পেন’। স্বাভাবিকভাবে বইমেলার প্রাণকেন্দ্রে থাকছে স্পেনের বিশাল মাপের প্যাভিলিয়ন। স্পেন ছাড়াও অস্ট্রেলিয়া, ইরান, বাংলাদেশ, ইতালি, ফ্রান্স, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, জাপান, রাশিয়া, পানামা, কোস্টারিকা, গুয়েতেমালা, আর্জেন্টিনা, মেক্সিকো, কিউবা, থাইল্যান্ডসহ বিশ্বের প্রায় ২০টি দেশ অংশগ্রহণ করছে। সেক্ষেত্রে বইমেলায় প্রথমবারের মতো অংশগ্রহণ করছে থাইল্যান্ড।

তবে অন্যবারের মতো এবারের বইমেলাতেও আকর্ষণের কেন্দ্রবিন্দু হতে চলেছে বাংলাদেশ প্যাভিলিয়ন। প্রায় সাড়ে তিন হাজার বর্গফুট জায়গাজুড়ে তৈরি হচ্ছে প্যাভিলিয়ন। বাংলাদেশের বঙ্গভবনের আদলে এই প্যাভিলিয়নটি করা হচ্ছে। এখানেই অংশ নেবে বাংলাদেশের মোট ৪৩ টি প্রকাশনা সংস্থা, যার মধ্যে অন্যতম বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর, মাওলা ব্রাদার্স, অন্বেষা প্রকাশন, আহমেদ পাবলিশিং হাউস, অনিন্দ্য প্রকাশ, নালন্দা, সাহিত্য প্রকাশ, কোয়ান্টাম প্রকাশনী সংস্থা, অবসর প্রকাশনা সংস্থা প্রমুখ। মঙ্গলবার বিকাল ৪টায় বাংলাদেশ ব্যাভিলিয়নের উদ্বোধন করবেন কলকাতায় নিযুক্ত বাংলাদেশের উপ হাইকমিশনার আন্দালিব ইলিয়াস।

এবার কলকাতা বইমেলায় বাংলাদেশ দিবস পালিত হবে আগামী ৪ ফেব্রুয়ারি। ওইদিন বাংলাদেশ থেকে যোগ দেবেন দেশটির প্রথিতযশা কবি, সাহিত্যিক, লেখক, সাংবাদিক ও সাংস্কৃতিক অঙ্গনের খ্যাতিমান শিল্পীরা।

এবার বইমেলায় রেকর্ড সংখ্যক বইয়ের স্টল থাকছে। প্রায় ৯৫০টি। এর মধ্যে লিটল ম্যাগাজিনের স্টল ২০০টি। প্রতিদিন বেলা ১১টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত খোলা থাকবে বইমেলা প্রাঙ্গণ।

পাঠক ও বইপ্রেমীদের প্রবেশের সুবিধার্থে বইমেলায় ৯টি গেট করা হচ্ছে। এর মধ্যে কোনোটি স্পেনের মাদ্রিদ শহরের টোলেডো গেট, কোনোটি বিশ্ব বাংলা, জাতীয় গ্রন্থাগার, রবীন্দ্রনাথ, নেতাজি, স্বামী বিবেকানন্দ, কোনোটা আবার কাজী নজরুলের অগ্নিবীণার আদলে তৈরি হয়েছে। 

বইয়ের প্রতি আকর্ষণ বাড়াতে থাকছে লটারী-যেখানে জয়ীদের দেওয়া হবে বুক গিফট কুপন।  ৪৬তম কলকাতা আন্তর্জাতিক বইমেলার প্রধান আকর্ষণ কলকাতা সাহিত্য উৎসব। বইমেলার এসবিআই অডিটোরিয়ামে ৯ থেকে ১২ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত নবমতম এই সাহিত্য উৎসবে অংশগ্রহণ করবেন দেশ বিদেশের প্রখ্যাত লেখক, সাহিত্যিকরা। 

এদিকে এই প্রথম বইমেলার প্রতিটি অনুষ্ঠান লাইভ স্ট্রিমিং'এর ব্যবস্থা করেছে বইমেলা কর্তৃপক্ষ। যারা সশরীরে এই বইমেলা উপস্থিত হতে পারবেন না, বইমেলার স্বাদ তাদের কাছে পৌঁছে দিতে এই ব্যবস্থা করা হয়েছে। 

পাবলিশার্স অ্যান্ড বুকসেলার গিল্ডের ব্যাখ্যা বাংলাদেশ এবং গোটা বিশ্বে প্রবাসী বাঙালিদের আগ্রহ বাড়ছে। সেদিকে লক্ষ্য রেখেই বইমেলার লাইভ স্ট্রিমিং, সাক্ষাৎকার এবং বই নিয়ে আলোচনা এখন বিশ্বব্যাপী দর্শকদের জন্য উপলব্ধ হবে। সেই অর্থে এবারের এই সংস্করণটি হবে এখনও পর্যন্ত সবচেয়ে বড়। 
 
বিডি প্রতিদিন/জুনাইদ আহমেদ

  

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর