রবিবার, ১৪ জুলাই, ২০১৩ ০০:০০ টা

ভাঙছে নদীতীর, প্লাবিত হচ্ছে নিম্নাঞ্চল

যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তার পানি বৃদ্ধি অব্যাহত

উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলে সৃষ্ট বন্যা পরিস্থিতির আরও অবনতি হয়েছে। যমুনা, ব্রহ্মপুত্র ও তিস্তাসহ কয়েকটি নদ-নদীর পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। অনেক স্থানে বিপদসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। সবচেয়ে খারাপ অবস্থা বগুড়া, সিরাজগঞ্জ এবং গাইবান্ধায়। এ তিন জেলায় প্রায় লক্ষাধিক মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছেন। তলিয়ে গেছে ফসলের মাঠ। ভেঙে গেছে কয়েক হাজার ঘরবাড়ি। লালমনিরহাটে দুই শতাধিক ঘর-বাড়ি নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে তিস্তা ও ধরলার ভাঙনে। নওগাঁয় বাঁধ ভেঙে ৫০ গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ৫ শতাধিক পরিবার। প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীসহ সিরাজগঞ্জের অভ্যন্তরীণ চলনবিল, করতোয়া, বড়াল, ফুলজোড়, গোহালা ও হুড়াসাগর নদীতে পানি বৃদ্ধি অব্যাহত রয়েছে। যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৫ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়েছে। সিরাজগঞ্জ সদর, বেলকুচি, কাজিপুর, শাহজাদপুর ও চৌহালী উপজেলার যমুনা নদীর তীরবর্তী এলাকার বিভিন্ন স্থানে ভাঙন দেখা দিয়েছে। চরাঞ্চল, চলনবিলসহ জেলার সব নিম্নাঞ্চল প্লাবিত হয়ে হাজার হাজার মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। অনেকে ওয়াপদা বাঁধে আশ্রয় নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এখন পর্যন্ত সরকারিভাবে কোনো সহায়তা দেওয়া হয়নি।

বগুড়া : বগুড়ার ধুনটে যমুনা নদীর পানি অস্বাভাবিকভাবে বৃদ্ধি পেয়ে বন্যানিয়ন্ত্রণ বাঁধের পূর্ব পাশের ১৪টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি ৭ সে.মি. কমলেও এখনো বিপদসীমার ১০ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

গাইবান্ধা : গত ২৪ ঘণ্টায় গাইবান্ধায় করতোয়া নদীর পানি ৩ সে.মি. ও ঘাঘটের পানি দশমিক শূন্য তিন সে.মি. বৃদ্ধি পেয়েছে। অন্যদিকে তিস্তা নদীর পানি ২৩ সে.মি. হ্রাস পেয়েছে আর গাইবান্ধার ফুলছড়ি পয়েন্টে ব্রহ্মপুত্রের পানি ১২ সে.মি. কমে তা এখনো বিপদসীমার ১৪ সে.মি. ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল বলে পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়।

জেলা প্রশাসন জানায়, এ পর্যন্ত জেলার ১৯টি ইউনিয়নের মোট ৫ হাজার ৭০০ মানুষ পানিবন্দী অবস্থায় রয়েছে। এসব এলাকায় ১০টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ও ৩০ কিলোমিটার সড়ক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার জন্য ত্রাণ মন্ত্রণালয় থেকে ২০০ মেট্রিক টন চাল ও ৫ লাখ টাকা পাওয়া গেছে।

নওগাঁ : নওগাঁর মান্দা উপজেলার আত্রাই নদীর বাঁধ ভেঙে কমপক্ষে ৫০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। গত কয়েক দিন ধরে মান্দার আত্রাই নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে বিপদসীমার ১০০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। জানা গেছে, আত্রাই ও ফকিরানী নদীর দুই পাড়ে বাঁধের অন্তত আরও দশটি পয়েন্ট ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। বাঁধভাঙা পানিতে তলিয়ে গেছে আউশ ধান, পাট, রোপা আমনের বীজতলাসহ কয়েক শ একর জমির ফসল।

লালমনিরহাট : গত দুই দিনে তিস্তা ও ধরলা নদীর ভাঙনে জেলার ৫টি উপজেলায় তিস্তার ভাঙনে ২ শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে চলে গেছে। সহসাধিক একর আবাদি জমি বিলীন হয়ে গেছে। ধরলা ও তিস্তার ভাঙনের মুখে অবস্থান করা আরও কয়েক শ ঘর-বাড়ি অন্যত্র সরিয়ে নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছে পাউবো কর্তৃপক্ষ। গতকাল দুপুর পর্যন্ত জেলার হাতিবান্ধা উপজেলায় ৪৫, পাটগ্রাম উপজেলায় ২৩, কালিগঞ্জ উপজেলায় ২২, আদিতমারী উপজেলায় ২৫ ও সদর উপজেলায় ৩২টি বসতঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। নদীভাঙনের শিকার মানুষগুলো আশ্রয় নিয়েছে সরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, উঁচু বাঁধ ও আত্দীয়-স্বজনের বাড়িতে। শত শত নারী-পুরুষ ও শিশু না খেয়ে মানবেতর জীবনজাপন করছেন। সরকারিভাবে এ পর্যন্ত মাত্র ১১০ মেট্রিক টন চাল বিতরণ করা হয়েছে, যা চাহিদার তুলনায় অনেক কম।

 

 

সর্বশেষ খবর