শনিবার, ১৮ জুন, ২০১৬ ০০:০০ টা

ইফতারির আকর্ষণ বগুড়ার দই

নিজস্ব প্রতিবেদক, বগুড়া

ইফতারির আকর্ষণ বগুড়ার দই

সারা বছর ব্যাপক চাহিদার তালিকায় থাকা বগুড়ার দই ইফতারির তালিকায় উঠে এসেছে। চলতি রমজানেও এ দইয়ের কদর বেড়েছে। দিনভর রোজা পালন শেষে ইফতারের সঙ্গে যোগ করা হচ্ছে দই। কারণ শুধু স্বাদই নয়, এর পেছনে রয়েছে দারুণ স্বাস্থ্য উপকারিতার বিষয়। ভাজা-পোড়ার জায়গায় এ দই শারীরিক ক্লান্তি এবং ক্ষতিকারক প্রভাব নিমিষেই দূর করে দেয়। এমনিতেই বগুড়াকে দই-এর শহর বলা হয়। এর শুরুটা হয়েছিল বগুড়া শহর থেকে ২০ কিলোমিটার দক্ষিণে শেরপুর উপজেলায়। কথিত আছে, ৬০-এর দশকে গৌর গোপাল পাল নামের এক ব্যবসায়ী প্রথম পরীক্ষামূলকভাবে সরার দই তৈরি করেন। তখন দই সম্পর্কে সবার ভালো ধারণা ছিল না। গৌর গোপালের দই-ই ধীরে ধীরে ব্যাপক জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। বগুড়ার ঐতিহ্যবাহী নবাব পরিবার ও সাতানি পরিবারের কাছে এ দই সরবরাহ করতেন গৌর গোপাল। সে সময় এই দইয়ের নাম ছিল নবাববাড়ীর দই। নবাবি আমলে বিশেষ খাবারও ছিল এ দই। কালে কালে দিন গড়িয়ে এখনো বিশেষ খাবার হিসেবে রয়ে গেছে সেই দই। বিয়ে, রোজা, জন্মদিন, ঈদ, পূজা, আকিকা, হালখাতা বা পারিবারিক যে কোনো অনুষ্ঠানে বগুড়ার দই হলো বিশেষ খাবার। পারিবারিক অনুষ্ঠানে দই একটি অভিজাত খাবার হিসেবে পরিচিত। যুগ যুগ ধরে রয়েছে এ পরিচিতি। তা ছাড়া দই শুধু সুস্বাদুর জন্যই নয়, শরীরের ওষুধ হিসেবেও কাজ করে। বগুড়ার দই মূলত দুই ধরনের। মিষ্টি দই এবং সাদা বা টক দই। সারা বছরই ব্যাপক চাহিদার তালিকায় থাকে এ দুই প্রকার দই। এর মধ্যেই চলতি রমজান মাসে ইফতার সামগ্রীতে দই অন্যতম তালিকায় চলে এসেছে। দিন শেষে রোজাদার ইফতারে পিপাসা মেটাতে সাদা দই পান করেন। যা অনেকটাই ঘোলের মতো। ধারণা পাওয়া গেছে, তাপদাহের কারণেও বেড়েছে এ দইয়ের চাহিদা। তাই দেখা যাচ্ছে, দুপুরের পর থেকে শহরের দইয়ের দোকান থেকে শুরু করে ফুটপাথের ভাঁড়ের সাদা দই (চিনিছাড়া) কিনতে মানুষ ভিড় জমাচ্ছেন। ফলে বিকালের মধ্যেই শেষ হয়ে যাচ্ছে দই। অবশ্য এ দইয়ের সঙ্গে বিক্রি হচ্ছে মিষ্টি দইও। দইয়ের দোকানে ৮০ থেকে ১০০ টাকায় সাদা দই বিক্রি হচ্ছে। আর ফুটপাথে আকার ভেদে ৪০ থেকে ৭০ টাকায় সাদা দই বিক্রি হচ্ছে।

বগুড়া শহরের বড়গোলার বাসিন্দা আবদুস সালাম জানান, গ্রীষ্মকালীন সময়ে রোজা রেখে ইফতারে ঠাণ্ডা কিছু হলে তৃপ্তি বেশি পাওয়া যায়। শরীর ঠাণ্ডা রাখতে অনেকেই দইয়ের ঘোলের ওপর আস্থা রাখেন। কেউ বিভিন্ন প্রকার শরবত ব্যবহার করেন। কিন্তু বগুড়ার দইয়ের বিকল্প হয় না। সাদা দই ঘোল করে পান করলে শারীরিকভাবে তৃপ্তি মেলে। আর যদি ইফতারে দই বেশি পরিমাণে খেয়ে ফেলা হয়, তাহলে মিষ্টি দই হজম শক্তি বাড়িয়ে দেয়। এসব কারণেই সাদা ও মিষ্টি দই ইফতারের অপরিহার্য অঙ্গ হয়ে উঠেছে। বর্তমানে বগুড়া শহরের এশিয়া সুইট মিট ও দই ঘর, চেলোপাড়ার কুরানু, নবাববাড়ীর রুচিতা, কবি নজরুল ইসলাম সড়কের আকবরিয়া, মিঠাই, বিআরটিসি মার্কেটে রফাত দইঘর, দইবাজার, মিষ্টিমহল, সাতমাথায় দইঘর, মহরম আলী, শেরপুর দই ঘর, চিনিপাতাসহ অর্ধশত শো রুমে দই বিক্রি হচ্ছে। আবার শহরের বাইরে বাঘোপাড়ার রফাত দই ঘর, শেরপুরের রিপন দধি ভাণ্ডার, সাউদিয়া, ফুডভিলেজ দই, জলযোগ, বৈকালী ও শুভ দধি ভাণ্ডার থেকে প্রতিদিন প্রচুর দই বিক্রি হচ্ছে। এসব দইয়ের দোকানগুলোতে রোজাদাররা ইফতারের জন্য সাদা দই কিনছেন। বগুড়ার বাঘোপাড়ার রফাত দই ঘরের মালিক আবদুর রহমান জানান, দইয়ের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। বিভিন্ন জেলা থেকে অর্ডার আসে। স্বাদ ও খাঁটিমানের বলে বাজারের অন্যান্য দই থেকে বাঘোপাড়ার রফাত দইয়ের কদর একটু বেশি। রোজার মাসে বেশি বিক্রি হচ্ছে সাদা দই। এর সঙ্গে মিষ্টি দইয়ের বিক্রি আছে আগের মতোই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর