শিরোনাম
সোমবার, ১২ ফেব্রুয়ারি, ২০১৮ ০০:০০ টা

রূপগঞ্জের ওসি ইসমাইলের আমলনামা

নিজস্ব প্রতিবেদক

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ইসমাইল হোসেন ১৯৯৩ সালে পুলিশ বাহিনীতে এসআই পদে যোগ দেন। চাকরির সুপারিশ করেছিলেন কাঞ্চন পৌর এলাকার বিএনপি নেতা ও তার ভগ্নিপতি করমউদ্দিন। বিএনপি সরকারের স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আবদুল মতিন চৌধুরীর মাধ্যমে তিনি চাকরি পান। ইসমাইল ছিলেন ছাত্রদলের সক্রিয় কর্মী। তদবিরের ফাইলে সেটি উল্লেখ ছিল। ইসমাইল ছিলেন নরসিংদী সরকারি কলেজ শাখা ছাত্রদলের তৎকালীন সাংগঠনিক সম্পাদক। এ বিষয়ে রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান আবু হোসেন ভূইয়া রানু জানান, ছাত্রদলের এক কর্মী ইসমাইল এখানে নিয়োগ পাওয়ার পর যেভাবে কাজ করে যাচ্ছেন তাতে আওয়ামী লীগ নিষ্পেষিত হচ্ছে। রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান হাবিবুর রহমান হারেস জানান, ওসি সাহেবের আপন ভাই ওমর আলী। ওসির ভাই যখন মাঠে যান তখন ভয়ে কেউ কোনো কথা বলতে সাহস পায় না। জমি না কিনেও অনেক ডেভেলপার এই ওসির ছত্রছায়ায় বালু ফেলে মানুষের জমিজমা দখল করে নিচ্ছে। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, গত ৯ বছরে দায়িত্ব পালনে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছেন ইসমাইল হোসেন। গত তিন মাসে রূপগঞ্জ এলাকায় ১৮টি হত্যাকাণ্ড ঘটেছে। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য রূপগঞ্জ জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক এম এ হাসান, কাঞ্চন পৌর যুবলীগের নেতা মিজানুর রহমান ও ভুলতা ইউনিয়ন যুবলীগ নেতা জাকির হোসেন হত্যাকাণ্ড। এ ছাড়া এলাকায় বেড়েছে ডাকাতের উপদ্রব। দিনে দুপুরে ডাকাতি হলেও নিষ্ক্রিয় ভূমিকায় পুলিশ। জঙ্গি তৎপরতা রোধেও ব্যর্থ রূপগঞ্জ থানা পুলিশ। রূপগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের সিনিয়র সহ-সভাপতি খন্দকার আবুল বাশার টুকু বলেন, মাদক-হেরোইনে ছেয়ে গেছে রূপগঞ্জ। এই ওসি এবং সংসদ সদস্য মিলে যুব সমাজ ধ্বংস করছেন। স্থানীয়রা বলছেন, ওসি ইসমাইলের তত্ত্বাবধানে চলছে গ্রেফতার বাণিজ্য। নিয়মিত বখরা দিতে হয় উপজেলার দেড় শতাধিক ইটভাটা আর শীতলক্ষ্যায় চলাচলরত বালুবাহী ট্রলারকে। থানা এলাকার বিভিন্ন আবাসন কোম্পানিকে নিয়মিত চাঁদা দিতে হয়। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস প্রেসিডেন্ট হাফিজুর রহমান সজিব জানান, এমপির সব অপকর্মে সহযোগিতা করছেন ওসি। রূপগঞ্জের শত শত হিন্দুর সম্পত্তি এমপি গ্রাস করেছেন। ওসিকে ম্যানেজ করে এমপি এগুলো করিয়েছেন। রূপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সদস্য মিজানুর রহমান জানান, ওসি ৯ বছর দায়িত্ব পালনকালে ২ হাজার ৮০০ থেকে ৩ হাজারের বেশি আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর বিরুদ্ধে মামলা নিয়েছেন। রূপগঞ্জের এক ব্যবসায়ী বলছেন, ব্যবসা-বাণিজ্যসহ আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের ফাঁদে ফেলে বিএনপিকে উজ্জীবিত করার সব প্রক্রিয়া ওসি  মামলার মাধ্যমে সম্পন্ন করছেন। রূপগঞ্জ থানা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শাজাহান ভুঁইয়া জানান, আওয়ামী লীগকে ঘায়েল করার জন্য এমপি গাজীর নেতৃত্বে ওসি আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের আসামি করে বিভিন্নভাবে পুলিশ দিয়ে হয়রানি করছেন। জানা গেছে, আবাসন কোম্পানি প্রাইম রিভারভিউ থেকে ওসি ইসমাইল একটি বিলাসবহুল গাড়ি নিয়েছেন। গ্রামের বাড়ি নরসিংদীর শিলমন্দিতে রয়েছে নামে-বেনামে ৫৬ বিঘা সম্পত্তি। উত্তরার ৪ নম্বর সেক্টরের সুবাস্তু টাওয়ারে কোটি টাকা মূল্যের ৩ হাজার ২০০ স্কয়ার ফিটের আলিশান ফ্ল্যাট রয়েছে তার। বাংলাদেশে সবচেয়ে ধনি ওসিদের তালিকায় তার নাম রয়েছে। এ বিষয়ে জানতে চাইলে রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, আমার বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ মিথ্যা ও বানোয়াট। আমাকে সরাতে এই চক্রান্ত।

রূপগঞ্জ ওসির দুর্নীতি নিয়ে তোলপাড় : ‘আওয়ামী লীগ নিধনই যেন তার কাজ’ শিরোনামে রূপগঞ্জ থানার ওসি ইসমাইল হোসেনের অপরাধ-অপকর্ম ও দুর্নীতির ফিরিস্তি নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশ হওয়ায় গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিন ‘টক অব দ্য রূগগঞ্জে’ পরিণত হয়। সকাল ৯টার মধ্যেই রূপগঞ্জসহ আশপাশের সব এজেন্ট ও সংবাদপত্র বিক্রয় কেন্দ্রগুলোতে বাংলাদেশ প্রতিদিন শেষ হয়ে যায়। দুপুরের পর ঢাকা থেকে বিশেষভাবে সংগ্রহ করে বাংলাদেশ প্রতিদিনের কয়েকশ কপি রূপগঞ্জে এনে হকাররা ২০/২৫ টাকা দামে বিক্রি করেন। চাহিদা বুঝে মোগড়াপাড়া মোড় ও কাঁচপুর এলাকাতেও বাংলাদেশ প্রতিদিন দ্বিগুণ-তিনগুণ দামে কেনাবেচা হতে দেখা গেছে। ওসি ইসমাইল হোসেনের সাবেক কর্মস্থল টঙ্গী থানা এবং তার জন্মস্থান নরসিংদীর সর্বত্রও বাংলাদেশ প্রতিদিন নিয়ে রীতিমতো কাড়াকাড়ি চলে। টঙ্গী এলাকার পাঠকরা অনেকেই বাংলাদেশ প্রতিদিন ও সংশ্লিষ্ট প্রতিবেদককে  সাধুবাদ জানিয়েছেন।

তারা টঙ্গী থানায় ওসি থাকাকালীন ইসমাইল হোসেন যতসব অপরাধ অপকর্ম করেছেন তার প্রমাণাদিসহ আরেকটি প্রতিবেদন প্রকাশের অনুরোধ জানিয়েছেন। টঙ্গীর সাধারণ মানুষ জানিয়েছেন, সেখানে ইসমাইল হোসেনের তত্ত্বাবধানে তুরাগ নদ জবরদখল করে কীভাবে শিল্প প্রতিষ্ঠানের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে তার বিবরণ। সাতাইশ এলাকার কোনো ভূমিদস্যুকে সার্বক্ষণিক পুলিশ বেষ্টনী দিয়ে তার হাউজিং সোসাইটি ব্যবসা সফল করার বিনিময়ে প্রাডো গাড়ি হাতিয়ে নিয়েছেন, পাগাড়ে সালামের ইটভাটা দখল করে ওসি কীভাবে ইসমাইল স্পিনিং মিল গড়েছেন, মিলগেট বস্তি দখল করে হেলালের হাতে বুঝিয়ে দেওয়ার মাধ্যমে যেভাবে ওসি প্রতি মাসে দুই লাখ টাকা চাঁদা পান এখনো সেসব কাহিনী পাঠক-ভুক্তভোগীরা ফোনের মাধ্যমে জানাচ্ছেন অবিরাম। রূপগঞ্জের ওসি ইসমাইল হোসেন যোগদানের পর গত ২ বছরে রূপগঞ্জের দেড় হাজার আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মীর নামে দেড় শতাধিক মামলা রুজু করেছেন। ওসি ইসমাইলকে মোটা অঙ্কের টাকার জোগান দিতে না পারায় অনেক আওয়ামী লীগ নেতা-কর্মী মিথ্যা মামলার স্বীকার হয়েছেন। ওসি ইসমাইলের দ্রুত অপসারণ দাবি করেছেন ভুক্তভোগী সর্বস্তরের জনগণ।

সর্বশেষ খবর