শুক্রবার, ৩ আগস্ট, ২০১৮ ০০:০০ টা
কৃষি

বারমাসি তরমুজ চাষে সফলতা

রাশেদ খান, মাগুরা

বারমাসি তরমুজ চাষে সফলতা

সমন্বিত কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে মাগুরা সদর উপজেলার শিবরামপুর গ্রামের ফেরদৌস আহমেদ দিদার ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছেন। উচ্চশিক্ষা গ্রহণের পরও চাকরির   পেছনে না ছুটে তিনি কৃষি কাজকেই বেছে নিয়েছেন। কৃষিতে তার এই সাফল্যে অনুপ্রাণিত হয়ে এই এলাকার অনেক কৃষকই আধুনিক চাষাবাদে এগিয়ে আসছেন। এরই ধারাবাহিকতায় তিনি মাগুরায় এই প্রথম মালচিং পলি পেপারের মাধ্যমে বিশেষ পদ্ধতিতে জমিকে আবৃত করে সবজি চাষ করেছেন। যার মধ্যে অন্যতম হচ্ছে বারোমাসি তরমুজ। এই পদ্ধতির চাষাবাদে তার সার ও কীটনাশকের ব্যবহার একদিকে যেমন ৫০ শতাংশ কমে গেছে তেমনি সবজির ফলন হয়েছে বেশি। তার দেড় বিঘা জমিতে বিশেষ ধরনের পলিথিন পেপার (মালচিং) ব্যবহার করে জমিতে বেড তৈরি করে তরমুজের পাশাপাশি অন্যান্য সবজির আবাদ করেছেন। সরেজমিন শিবরামপুর গ্রামে গিয়ে কথা হয় কৃষক দিদারের সঙ্গে। তিনি জানান, ইন্টারনেটে ইসরায়েল ও ভারতে এ ধরনের পদ্ধতিতে চাষাবাদের তথ্য নিয়ে স্থানীয় কৃষি বিভাগের সঙ্গে আলোচনার পর এই পদ্ধতিতে চাষ শুরু করি। চাষের জন্য প্রথমে জমিতে বেড তৈরি করে কালো রঙের মালচিং পলি পেপার দিয়ে ঢেকে দেওয়া হয়। তারপর পলি পেপারে গোলাকৃতির ছিদ্র করে বীজ বপন করা হয়।

বীজ অংকুরিত হলে গাছের বৃদ্ধির সঙ্গে সঙ্গে উপযোগী মাচা তৈরি করে গাছগুলোকে তার ওপর ছড়িয়ে দেওয়া হয়। এই পদ্ধতির চাষাবাদে গাছের শেকড় পলি পেপারের নিচে ঢাকা থাকে। সে কারণে পোকামাকড়ের আক্রমণ কম হয়। মালচিং পেপার ভেদ করে সূর্যের অতি বেগুনি রশ্মি মাটিকে স্পর্শ করতে পারে না বিধায় মাটির স্বাস্থ্য ভালো থাকে। পাশাপাশি বেড তৈরিসহ বিভিন্ন সময় যে সার দেওয়া হয় তা মালচিং পেপারে আবৃত থাকার কারণে মাটির রস অক্ষুণ্ন থাকে পাশাপাশি বৃষ্টিতে সহজে ধুয়ে যায় না। একই কারণে জমিতে আগাছা হয় না বললেই চলে। এই পদ্ধতির চাষাবাদ মাটি ও পরিবেশের জন্য অত্যন্ত ভালো। সেই সঙ্গে উৎপাদন খরচও কম। এই তরমুজ খেতে গিয়ে দেখা গেছে, ছোট ছোট মাচা আকৃতির শেডে শতাধিক তরমুজ ধরেছে মাত্র ৬০ দিনে। যার প্রতিটির ওজন ২ থেকে ৩ কেজি পর্যন্ত। এটি বারোমাসি বিশেষ জাতের তরমুজ বলে দিদার জানান। তরমুজের ৫ শতক জমি তৈরিতে দিদারের ২ হাজার টাকার মালচিং পেপার ক্রয় করতে হয়েছে। দিদার জানান, মাত্র ৫ শতক জমিতে তিনি এই প্রথম বারোমাসি তরমুজ ও সবজি চাষ করেছেন। মালচিং পেপার দামের দিক দিয়ে সাশ্রয়ী। এ কারণে কৃষকরা এটি সহজেই ব্যবহার করতে পারেন। দিদারের দেখাদেখি স্থানীয় অন্যান্য কৃষক এ পদ্ধতিতে চাষাবাদ করার ব্যাপারে আগ্রহী হচ্ছেন। মাগুরা সদর উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা রুহুল আমিন জানান, ‘দিদার হোসেন একজন আদর্শ কৃষক। তার মাধ্যমে মালচিং পদ্ধতিতে বারোমাসি তরমুজ চাষ জেলায় এই প্রথম। এর আগে ব্যক্তি উদ্যোগে সমন্বিত কৃষি প্রযুক্তির মাধ্যমে তিনি বিষমুক্ত পেয়ারাসহ বিভিন্ন ফল ও সবজি বাগান করে ব্যাপক সফল হয়েছেন। আমরা তাকে প্রয়োজনীয় পরামর্শ দিচ্ছি। এ ছাড়া তার রয়েছে একটি বড় ধরনের মাছের খামার। তিনি নতুন নতুন চাষাবাদে সব সময়ই অগ্রগামী।

সর্বশেষ খবর