শনিবার, ৮ সেপ্টেম্বর, ২০১৮ ০০:০০ টা

রাজধানীতে আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ

জিন্নাতুন নূর

রাজধানীতে আবারও ডেঙ্গুর প্রকোপ

রাজধানী ঢাকায় কয়েক বছরের তুলনায় এবার ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হওয়ার সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়েছে। একই সঙ্গে এবার ডেঙ্গুতে উল্লেখযোগ্য (১১ জন) মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরের লক্ষণে তারা এবার বেশ কিছু পরিবর্তন দেখছেন। আগে ডেঙ্গু আক্রান্তের শরীরে তাপমাত্রা বেশি উঠত এবং রেষ উঠত। কিন্তু এবার তাপমাত্রা খুব বেশি না হলেও ডেঙ্গু হচ্ছে এবং অনেক রোগীর শরীরে রেষ উঠতে দেখা যাচ্ছে না। আর ডেঙ্গু আক্রান্তদের মধ্যে হেমোরোজিক ডেঙ্গুতে আক্রান্তের হার বেশি। ২য় বার ডেঙ্গুুতে আক্রান্তের মধ্যে হেমোরোজিকের সংখ্যা বেশি। এর ফলে আক্রান্তদের মৃত্যু ঝুঁকিও বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে যারা ২য় বার ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়েছেন তাদের মৃত্যুঝুঁকি বেশি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রাজধানীর অভিজাত এলাকা ধানমন্ডি, গুলশান, বনানী, বারিধারা, হাতিরপুল, আজিমপুর কলোনি, পুরান ঢাকা, মিরপুর, উত্তরা, বাসাবো ও যাত্রাবাড়ীতে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেশি। স্বাস্থ্য অধিদফতরের হেলথ ইমার্জেন্সি অপারেশন সেন্টার ও কন্ট্রোল রুমের দেওয়া তথ্যে, এবার ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুমে (জুন থেকে আগস্ট) এখন পর্যন্ত ১১ জন মারা গেছে। এর মধ্যে ৮ জনই হেমোরেজিক শকের কারণে মারা যায়। আর এ জন্য চিকিৎসা নিয়েছে তিন হাজার ৩৭৪ জন। এই সংস্থা ডেঙ্গু পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণে সরকারি-বেসরকারি মোট ২২টি হাসপাতালের তথ্য নিয়মিত সংগ্রহ করছে। এর আগে ২০১৬ সালে ডেঙ্গুতে সবচেয়ে বেশি মানুষের মৃত্যু হয়। সেবার মোট ১৪ জন ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে মারা যায়। উল্লেখ্য, ডেঙ্গুর মৌসুম চলবে আগামী অক্টোবর পর্যন্ত। এ জন্য সংশ্লিষ্টরা আশঙ্কা করছেন, রোগীর মুত্যুহার আরও বৃৃদ্ধি পেতে পারে।  চিকিৎসকরা জানান, জুলাই থেকে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত ডেঙ্গু জ্বরের মৌসুম। তাদের পর্যবেক্ষণে এ বছর ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো অন্য বছরের তুলনায় আলাদা। আর অন্য বছরের তুলনায় রোগটি এবার বেশি প্রবল। এবার অল্প সময়ের মধ্যে আক্রান্ত রোগী দুর্বল হয়ে পড়ছে, অচেতন হয়ে পড়ছে। আবার অনেকে গুরুতর অবস্থায় হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে। চিকিৎসকরা বলছেন, ডেঙ্গু জ্বরকে এ বছর অবহেলা করার কোনো সুযোগ নেই। যদি ঠিকমতো চিকিৎসা করা না হয় তবে দ্রুত হেমোরেজিক ডেঙ্গুতে রক্তক্ষরণ শুরু হয়। জ্বর যদি সর্দি-কাশির বাইরে কিছু মনে হয় তাহলে রোগীকে দ্রুত চিকিৎসকের কাছে যেতে হবে। চিকিৎসকরা মশারি ব্যবহারের ওপর জোর দিচ্ছেন। এরই মধ্যে ডেঙ্গু জ্বরের বাহক এডিশ মশা নিয়ন্ত্রণে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন ক্রাশ প্রোগ্রাম শুরু করেছে। আর ডেঙ্গু জ্বরের ধরন, প্রকোপ ও প্রাদুর্ভাবের ওপর নজরদারি করছে রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান। যারা ডেঙ্গুতে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছে তাদের নমুনা সংগ্রহ করে একটি গবেষণাও করছে প্রতিষ্ঠানটি। শিগগিরই এই গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করা হবে। প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে জানানো হয়, ডেঙ্গুতে যাদের মৃত্যু হয়েছে তাদের মধ্যে কয়েকজন আগেও এই রোগে আক্রান্ত হয়েছিল।  বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন বিভাগের চেয়ারম্যান ও মেডিসিন বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. এ বি এম আবদুল্লাহ বলেন, কিছু রোগীর গায়ের তাপমাত্রা তত বেশি না হলেও তারা এই রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। আবার অন্যান্য বছর রোগীর গায়ে রেশ দেখা গেলেও এবার তা দেখা যাচ্ছে না। যারা ডেঙ্গুর  চিকিৎসা না করে রোগটিকে অবহেলা করে এবং যারা একাধিকবার এ রোগে আক্রান্ত হয়েছে তাদের মৃত্যু ঝুঁকি বেশি। খেয়াল রাখতে হবে, মশা যাতে না কামড়ায়। প্রতিরোধের জন্য সবাইকে ঘরবাড়ি পরিষ্কার রাখতে হবে। দিনের বেলাও প্রয়োজনে মশারি লাগাতে হবে। আক্রান্তদের গায়ে বেশি ব্যথা থাকলে প্যারাসিটামল খেতে পারেন। তবে চিকিৎসকের পরামর্শ ছাড়া অন্য অ্যান্টিবায়োটিক ওষুধ সেবন করা যাবে না।

সর্বশেষ খবর