রবিবার, ২৪ ফেব্রুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা
নদী বাঁচাও ১৫

একদা দীর্ঘতম নদ ছিল ভৈরব

সাইফুল ইসলাম, যশোর

একদা দীর্ঘতম নদ ছিল ভৈরব

দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের দীর্ঘতম নদ ভৈরব। ২৫০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্যরে এ নদটির দুই তীরে একসময় আর্য সভ্যতা প্রতিষ্ঠা লাভ করেছিল। গড়ে উঠেছিল অসংখ্য শহর-নগর, জনপদ। ১৮ শতকের শেষভাগ পর্যন্ত এ নদটির যৌবন ছিল। উনিশ শতকের পুরোটা জুড়ে নানা উন্নয়ন কাজের নামে দখল আর দূষণে নদটির প্রাণ ওষ্ঠাগত । আর বর্তমানে নদটি মৃতপ্রায়।

ভৈরব নদে শেষ কবে জোয়ার-ভাটা দেখেছেন এখন আর কেউ মনে করতে পারেন না। একসময় বড় বড় লঞ্চ চলতো যে ভৈরবের বুকে, সেখানে শেষ কবে নৌকা চলতে দেখেছেন, তাও মনে করতে পারেন না যশোর অঞ্চলের ভৈরব পাড়ের মানুষ। এ নদে মাছ ধরে জীবিকা নির্বাহ করতেন যারা, বাধ্য হয়ে তারা চলে গেছেন অন্য পেশায়। যে ভৈরবের পাড়ে গড়ে উঠেছিল অসংখ্য শহর-নগর, জনপদ, ভৈরব অস্তিত্বহীন হলে এর পাড়ে গড়ে ওঠা শহর-নগর, জনপদগুলোও অস্তিত্ব সংকটে পড়বে। আর তাই দীর্ঘদিন ধরে ভৈরবে প্রাণ ফিরিয়ে দেওয়ার দাবি করে আসছিলেন যশোরের মানুষ। যশোরে এক জনসভায় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যশোরবাসীর প্রাণের দাবি মেনে নেওয়ার ঘোষণা দেন এবং অনুমোদন হয় ২৭৩ কোটি টাকার প্রকল্প। সদর উপজেলার কনেজপুর থেকে শুরু হয় খনন কাজ। বর্তমানে ভৈরব নদের যশোর সদর উপজেলা অংশের ফতেপুর, রাজারহাট, কনেজপুর, খয়েরতলা, হৈবতপুর, চৌগাছা উপজেলার জগদিসপুর, ঝিনাইদহের বারবাজার অংশের ৪০ কিলোমিটার এলাকায় ১২০টি স্কেভেটর দিয়ে খনন কাজ চলছে। আগামী এক মাস অর্থাৎ মার্চের মধ্যে ৯ কিলোমিটার খননকাজ সম্পূর্ণভাবে শেষ হবে বলে আশা করছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের কর্মকর্তারা। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ভৈরব নদের ৯৬ কিলোমিটার অংশ খনন করা হবে। ভৈরব নদের সঙ্গে মাথাভাঙ্গা নদীর যে সংযোগ ছিল, তা পুনস্থাপন করা হবে। খনন করা হবে দাইতলা নামক একটি খালের ২০ কিলোমিটার অংশসহ আরও চারটি খাল। মাথাভাঙ্গা নদীর সঙ্গে ভৈরবের পুনঃসংযোগ স্থাপনের জন্য আপার ভৈরবের ৩৩ কিলোমিটার খনন করা হবে।  প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, গত অর্থবছরে ২৩ কিলোমিটার ভৈরব নদ খননের কার্যাদেশ প্রদান করা হয়। চলতি অর্থবছরে আরও ১৭ কিলোমিটার এ নদ খননের কার্যাদেশ দেওয়া হয়েছে। অবশিষ্ট অংশের খনন কাজও দ্রুত শুরু হবে। নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, ভৈরব নদের যশোর শহর অংশে ১৫৫ ফুট টপ টু টপ প্রস্থে খনন করা হবে। যার গড় গভীরতা হবে ১২ থেকে ১৪ ফুট। খননকাজ শেষ হওয়ার পর যশোর শহর থেকে আরও বেশকিছুটা উজান পর্যন্ত জোয়ার-ভাটা ফিরে আসবে বলে জানান প্রবীর কুমার গোস্বামী। তিনি বলেন, গত শতকে ভৈরবের বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে ছোট ছোট ব্রিজ নির্মাণ করা হয়। এগুলো ভেঙে যদি আরও প্রশস্ত করা যায় তাহলে যশোর শহর পর্যন্ত বড় বড় নৌকা, ট্রলার খুব সহজে আসতে পারবে। তিনি বলেন, ভৈরবের পুরো নৌপথটি যদি আবারও পুনরুদ্ধার করা সম্ভব হয় তাহলে সড়কপথে পণ্য পরিবহনের চাপ অনেক কমে আসবে। যশোর ও আশপাশের শহরকেন্দ্রিক যারা ব্যবসা-বাণিজ্য করেন, তারা অনেক কম খরচে তাদের পণ্য ভৈরব নদ ব্যবহার করে আনা-নেওয়া করতে পারবেন। এতে পরিবহন খরচ ও ব্যবসায়ীদের দুর্ভোগ অনেক কমে যাবে। প্রবীর কুমার গোস্বামী বলেন, বিভিন্ন স্থানে অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ছোট ছোট ব্রিজগুলো ভেঙে প্রশস্ত ব্রিজ নির্মাণের ব্যাপারে ইতিমধ্যে পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় নির্দেশনা দিয়েছে। তিনি বলেন, ২০২০ সালে এই প্রকল্পের দ্বিতীয় ফেজের কাজ শুরু হবে। দ্বিতীয় ফেজেই এই ব্রিজগুলো প্রশস্ত করে পুনর্নির্মাণ করা হবে।

এদিকে ভৈরব নদের যশোর শহর অংশে পুনঃখননের জন্য নদের জায়গা থেকে দখলদারদের উচ্ছেদ করা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে জটিলতার। নদের দখলদাররা তাদের দখল বজায় রাখতে নানা ছলচাতুরীর আশ্রয় নিচ্ছেন। পানি উন্নয়ন বোর্ড যশোরের নির্বাহী প্রকৌশলী বলেন, দখলদার উচ্ছেদের জন্য জেলা প্রশাসনকে অনুরোধ করা হয়েছে। এ ব্যাপারে আবারও অনুরোধ করা হবে। জেলা প্রশাসক মো. আবদুল আওয়াল এ ব্যাপারে বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনার জন্য আমাদের অর্থ বরাদ্দ ছিল না। পরে বরাদ্দ পাওয়া গেছে। কিন্তু নির্বাচন সংক্রান্ত ব্যস্ততার কারণে এতদিন অভিযান পরিচালনা করা সম্ভব হয়নি। অচিরেই ভৈরব নদ থেকে দখলদারদের উচ্ছেদে অভিযান চালানো হবে’।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর