বৃহস্পতিবার, ২০ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

গ্যাসবোমা স্যুয়ারেজ লাইন

মাহবুব মমতাজী

গ্যাসবোমা স্যুয়ারেজ লাইন

সঞ্চালন লাইনের ফুটো থেকে গ্যাস জমছে স্যুয়ারেজ লাইনে। ড্রেনেজ এবং গ্যাস লাইনের অনিয়মিত ব্যবস্থাপনার কারণে ভয়ঙ্কর হয়ে উঠছে রাজধানীর স্যুয়ারেজ লাইন। সম্প্রতি রাজধানীতে পরপর দুটি স্থানে স্যুয়ারেজ লাইনে জমানো গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় দুজন নিহত হন। এতে এক ধরনের শঙ্কার সৃষ্টি হয়েছে বাসিন্দাদের মনে। 

১০ ও ১১ জুন শনিরআখড়া এবং মিরহাজিরবাগে বিস্ফোরণের ঘটনায় কদমতলী থানা ও শ্যামপুর থানা পৃথক তদন্ত প্রতিবেদন পুলিশের ওয়ারী বিভাগে জমা দেয়। এরপর ১৩ জুন ওয়ারী বিভাগের পক্ষ থেকে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনারের কাছে আরেকটি প্রতিবেদন দেওয়া হয় বলে জানা গেছে।

প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, কদমতলীর শনিরআখড়ায় ও শ্যামপুরে পৃথক বিস্ফোরণে ফরিদ আহমেদ এবং আবির হোসেন মিরাজ নামে দুজন নিহত হন। আহত হন অন্তত ৫ জন। কদমতলীতে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে বিস্ফোরক অধিদফতর, ফায়ার সার্ভিস, ডেসা ও পুলিশ। অনুসন্ধানে ধারণা করা হয়, তিতাস গ্যাসের সাপ্লাই লাইনের লিকেজ থেকে নিঃসরিত গ্যাস স্যুয়ারেজ লাইন দিয়ে এক্সিম ব্যাংকের বাথরুম স্টোর রুমে জমা হয়। এরপর এসি ও জেনারেটরের শর্টসার্কিট থেকে প্রচ  বিস্ফোরণ ঘটে। ঘটনাস্থলে তিতাস গ্যাসের লিকেজ এবং এক্সিম ব্যাংকের স্যুয়ারেজ লাইনের সঙ্গে সংযোগ পাওয়া যায়। এমনকি ফায়ার সার্ভিসের বিশেষজ্ঞ দল মেশিনের মাধ্যমে এক্সিম ব্যাংকের বাথরুমে ৬০ ভাগ গ্যাসের উপস্থিতি পায়, যা পরে মেরামত করা হয়। আর শ্যামপুরের পাইপ রোডে বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থলে অনুসন্ধান করে জানা যায়, সেখানেও তিতাস গ্যাসের লাইনে লিকেজ পাওয়া গেছে। সেই লিকেজ থেকে নিঃসরিত গ্যাস ময়লা-আবর্জনায় বন্ধ স্যুয়ারেজ লাইনে জমা ছিল। ওই স্যুয়ারেজ লাইনে আগে থেকে সৃষ্ট বায়োগ্যাস মজুদ ছিল। কিন্তু স্যুয়ারেজের পিঠে ওপর থেকে মজবুত করে কংক্রিটের ঢালাই থাকায় মজুদ গ্যাস বেরিয়ে যেতে পারেনি। ফলে উভয় গ্যাসের বিক্রিয়া ও চাপ এবং বায়ুম লের তাপমাত্রা বেশি থাকায় প্রচ  বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে স্যুয়ারেজের স্লাবের আঘাতে পাঁচ পথচারী গুরুতর আহত হন। এর মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে নেওয়ার পর আবির হোসেন মিরাজের মৃত্যু হয়। এখানেও তিতাস গ্যাসের লাইনের লিকেজের সঙ্গে স্যুয়ারেজের সংযোগ পাওয়া যায়। কদমতলী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) জামাল উদ্দিন মীর ও শ্যামপুর থানার ওসি মিজানুর রহমান বলেন, ‘আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করে স্যুয়ারেজে জমানো গ্যাস থেকে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে বলে জানতে পারি।’

পুলিশের ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, তিতাস গ্যাসের লাইনের অনিয়মিত রক্ষণাবেক্ষণ ও ব্যবস্থাপনা এবং সিটি করপোরেশনের অনিয়মিত ব্যবস্থাপনার জন্যই এই বিস্ফোরণ ঘটে। এ ছাড়া স্থানীয় বাসিন্দাদের অভিযোগের পরও তিতাস গ্যাস কর্তৃপক্ষ গ্যাস লাইনের ছিদ্র মেরামত না করায় বিস্ফোরণ হয়।  বিস্ফোরক পরিদফতরের প্রধান বিস্ফোরক পরিদর্শক সামসুল আলম বলেন, শনিরআখড়ায় বিস্ফোরণের পর আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করি। তবে সেখানে কোনো নাশকতা থেকে বিস্ফোরণ হয়নি। গ্যাস লাইনে ছিদ্র ছিল। সেই গ্যাস বেরিয়ে স্যুয়ারেজ দিয়ে ব্যাংকের দ্বিতীয় ও তৃতীয় তলায় গিয়ে জমা হয়। আর ঈদের ছুটির কারণে ব্যাংক কয়েক দিন বন্ধ থাকায় গ্যাস বের হতে পারেনি। ফলে সেই গ্যাস বিস্ফোরিত হয়। এর আগে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন ও ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি গ্যাস লাইনে ছিদ্রজনিত দুর্ঘটনার একটি হিসাব দেয়। সেই হিসাব থেকে জানা যায়, দুর্ঘটনা ২০১৩-১৪ সালে ছিল ৩ হাজার ৮১৯টি। ২০১৪-১৫ সালে তা বেড়ে হয় ৫ হাজার ১২৩।  জানা যায়, ২০১৬ সালের ২৮ ফেব্রুয়ারি রাজধানীর উত্তরা ১৩ নম্বরে গ্যাস লাইনের বিস্ফোরণ থেকে একই পরিবারের পাঁচজন দগ্ধ হন। এর মধ্যে তিনজন মারা যান। চলতি বছর ২০ ফেব্রুয়ারি মিরপুর সড়কের নিচের গ্যাস সঞ্চালন লাইনের ছিদ্র থেকে একটি বাস ও একটি পিকআপ ভ্যানে আগুন ধরে যায়। এতে কয়েকজন আহত হন। সর্বশেষ গত ১০ জুন সকাল ৯টার দিকে শনিরআখড়া মোড় বাসস্ট্যান্ডের পাশে মসজিদ রোডের রেহানা প্লাজায় বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ওই মার্কেটে তৃতীয় তলায় থাকা এক্সিম ব্যাংকে হঠাৎ বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে এবং পুরো এলাকা কেঁপে ওঠে। পরে আশপাশের লোকজন দেখতে পান, এক্সিম ব্যাংকের দেয়াল ধসে পড়ছে। ইট-বালু-সাইনবোর্ড খসে পড়ছে। পরদিন মিরহাজিরবাগে আরেকটি বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

সর্বশেষ খবর