সোমবার, ৯ ডিসেম্বর, ২০১৯ ০০:০০ টা

চমক নেই গঠনতন্ত্রে

আওয়ামী লীগের সম্মেলনে স্লোগান চূড়ান্ত, বাড়ছে নারী সদস্যের সংখ্যা, প্রথমবারের অঙ্গীকার থাকছে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের উন্নয়নের

রফিকুল ইসলাম রনি

চমক নেই গঠনতন্ত্রে

‘শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বঙ্গবন্ধুর স্বপ্ন পূরণে গড়তে সোনার দেশ, এগিয়ে চলেছি দুর্বার, আমরাই তো বাংলাদেশ।’- এই স্লোগানকে প্রতিপাদ্য ধরে আগামী ২০-২১ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হচ্ছে আওয়ামী লীগের ২১তম জাতীয় সম্মেলন। এবারের সম্মেলনে বাড়ছে না কার্যনির্বাহী সংসদ ও উপদেষ্টা পরিষদের আকার। গঠনতন্ত্রে বড় কোনো চমক থাকছে না। প্রথমবারের মতো তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের উন্নয়নে অঙ্গীকার থাকছে ঘোষণাপত্রে। জেলা-উপজেলায় উপদেষ্টা পরিষদের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া ছাড়াও ছোটখাটো কিছু সংশোধনী আনা হচ্ছে। দলের গঠনতন্ত্র উপকমিটির নেতারা সংশোধনী খসড়া প্রস্তাব তৈরির কাজ শেষ পর্যায়ে নিয়ে এসেছেন। এগুলো দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার কাছে দেওয়া হবে। এ প্রসঙ্গে আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র উপকমিটির সদস্য সচিব এবং দলের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক আফজাল হোসেন বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘এবার দলের গঠনতন্ত্রে বড় কোনো চমক নেই। যে বিষয়গুলো নিয়ে বিশেষ করে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে নৌকা প্রতীক থাকবে কি থাকবে না, সে বিষয়ে জনগণের নানা রকম প্রত্যাশা ছিল। কিছু সমস্যাও সৃষ্টি হয়েছে। কিন্তু আমরা এ ব্যাপারে কোনো সিদ্ধান্ত  নেব না। নৌকা মার্কা স্থানীয় পর্যায়ে চালু হয়েছে, মানুষ অভ্যস্ত হয়েছে। নৌকা প্রতীক ঐক্যের প্রতীক হিসেবেই আমরা রাখব। কোনো পরিবর্তন করব না। তবে ছোটখাটো সংযোগ ও বিয়োজনের কাজ শেষ পর্যায়ে রয়েছে।’  আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় কমিটির আকার না বাড়লেও এবার নারী সদস্যের সংখ্যা বাড়ছে। কারণ নির্বাচন কমিশনের বাধ্যতামূলক নির্দেশনা থাকায় আগামী ২০২০ সালের মধ্যে প্রত্যেক রাজনৈতিক দলকে ৩৩ শতাংশ নারী নেতৃত্ব আনতে হবে। সে কারণেই এবার কমিটিতে নারী নেত্রীর সংখ্যা বাড়বে। আওয়ামী লীগের সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত ১১টি উপকমিটির সদস্যরা নিয়মিত বৈঠক করছেন। সবকাজ শেষ পর্যায়ে। অভ্যর্থনা উপকমিটির দাওয়াতপত্র ছাপানোর এবং নিমন্ত্রণ জানানোর কাজ প্রায় শেষ। একইভাবে দলের সম্মেলনে ২৫ হাজার অতিথিকে পাটের ব্যাগ উপহার দেবে প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটি। ওই ব্যাগে একটি আওয়ামী লীগের ইতিহাস সংবলিত একটি সুভেনি, শোক প্রস্তাব, দলের সভানেত্রী ও সাধারণ সম্পাদকের ভাষণ থাকবে। সম্মেলন উপলক্ষে গঠিত প্রচার ও প্রকাশনা উপকমিটির সদস্য এবং দলের উপপ্রচার সম্পাদক আমিনুল ইসলাম আমিন এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন। গঠনতন্ত্র উপকমিটির একাধিক সদস্য জানান, কেন্দ্রীয় কমিটির মতো তৃণমূলেও এবার দলের ‘থিংক ট্যাংক’ হিসেবে পরিচিত উপদেষ্টা পরিষদের সদস্যের সংখ্যা নির্দিষ্ট করে দেওয়া হচ্ছে। বৈঠকে জেলা কমিটিতে ২১ এবং উপজেলা ১৭ জন উপদেষ্টা করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আওয়ামী লীগের প্রাথমিক সদস্য পদের ফরমে মোবাইলে নম্বর এবং জাতীয় পরিচয়পত্রের নম্বর সংযুক্ত করার বিষয়ে প্রস্তাব করা হবে। একই সঙ্গে গঠনতন্ত্র অনুসারে এত দিন আওয়ামী লীগের আইনজীবীদের সংগঠনের নাম ছিল ‘আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’। বর্তমানে এই সংগঠনটির নাম ‘বঙ্গবন্ধু আওয়ামী আইনজীবী পরিষদ’। পরিবর্তিত নামটি এবার গঠনতন্ত্রে সংযোজন করা হবে। এ ছাড়া কিছু শব্দ ও ভাষাগত পরিমার্জন আসবে গঠনতন্ত্রে। গঠনতন্ত্রের ‘অঙ্গীকার’ শিরোনামের ১০ নম্বর উপধারায় ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন’ এর সঙ্গে মাদক যুক্ত করে ‘জঙ্গিবাদ, সন্ত্রাস, মাদক ও দুর্নীতিমুক্ত সমাজ গঠন’ করার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছে। একই শিরোনামের ১৭ নম্বর উপ-ধারায় ‘ভাতের অধিকার নিশ্চিত করা’র স্থলে ‘খাদ্যের পুষ্টির অধিকার’ যুক্ত করা হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দলীয় নেতাদের যুক্তি হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকারের অভাবনীয় উন্নয়ন ও অগ্রগতির ফলে ইতিমধ্যে দেশের মানুষের ‘ভাতের অধিকার’ নিশ্চিত হয়েছে। এখন পুষ্টিমান নিশ্চিত করতে হবে। এ কারণেই দলীয় অঙ্গীকারনামায় এটি যুক্ত করা হচ্ছে। এবার প্রথমবারের মতো আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্রে তৃতীয় লিঙ্গের মানুষের জীবন যাত্রার মান উন্নয়নের অঙ্গীকার করা হচ্ছে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর