শনিবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা

মহেশখালী হচ্ছে ডিজিটাল দ্বীপ

আয়ুবুল ইসলাম, কক্সবাজার

মহেশখালী হচ্ছে ডিজিটাল দ্বীপ

পর্যটননগর কক্সবাজারসংলগ্ন মহেশখালী দ্বীপকে ডিজিটাল দ্বীপে রূপান্তর করা হচ্ছে। কক্সবাজার সদর থেকে প্রায় ১২ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে কক্সবাজার ও কুতুবদিয়ার মধ্যবর্তী এলাকায় বঙ্গোপসাগরের মোহনার এই বিচ্ছিন্ন দ্বীপ ঘিরে সরকারের নানা কর্মযজ্ঞ শুরু হয়েছে। তার মধ্যে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সুবিধা নিশ্চিত করে একটি উদীয়মান প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলা হচ্ছে মহেশখালীকে। জানা গেছে, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা (আইওএম)-এর ডিজিটাল দ্বীপ প্রকল্প দেশের দ্রুতগতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে মহেশখালীকে বিচ্ছিন্ন উপদ্বীপ থেকে একটি উদীয়মান প্রযুক্তি কেন্দ্র হিসেবে  রূপান্তর করতে যাচ্ছে। এ প্রকল্পটি আইওএম বাংলাদেশ মিশনের প্রথম পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ (পিপিপি) প্রকল্প। আইওএম, কোরিয়া টেলিকম, বাংলাদেশ সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগ এবং বাংলাদেশ কম্পিউটার কাউন্সিল যৌথভাবে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।

প্রকল্পটির অর্জনগুলোর মধ্যে রয়েছে- মহেশখালীতে বিদ্যমান একটি টাওয়ার সংস্কার ও গিগা মাইক্রোওয়েভ স্থাপন; যার ফলে মহেশখালীর বাসিন্দারা ১০০ এমবিপিএসের বেশি গতিসম্পন্ন ইন্টারনেট সুবিধা পাচ্ছেন। মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. জামিরুল ইসলাম বলেন, ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড একটি বহুমুখী প্রকল্প; যা বাংলাদেশের অন্যতম বিচ্ছিন্ন জনগোষ্ঠীটিকে দেশের দ্রুততম গতির ইন্টারনেটের মাধ্যমে বিশ্বের সঙ্গে যুক্ত করেছে।’ সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলেছেন, দ্রুততর ইন্টারনেট সুবিধা স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে উন্নত স্বাস্থ্য, শিক্ষা ও কর্মসংস্থানের পরিষেবাগুলো নিশ্চিতে ভূমিকা রাখছে। ইন্টারনেটের মাধ্যমে দ্বীপটির বাসিন্দাদের শিক্ষার সরঞ্জামাদি ও চিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য অনলাইন স্বাস্থ্য পরিষেবাও দেওয়া হয়। স্থানীয় শুঁটকি উৎপাদনকারীদের উৎপাদিত শুঁটকি বিক্রির জন্য ই-কমার্সের মাধ্যমে কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্য (এসডিজি) পূরণে ডিজিটাল আইল্যান্ড দ্বীপ উদ্যোগও বাংলাদেশের অগ্রগতির একটি অংশ। মহেশখালী দ্বীপটিকে এ প্রকল্পের জন্য নির্বাচন করা হয়েছিল। কারণ এটি বাংলাদেশের অন্যতম স্বল্পোন্নত জনগোষ্ঠীর দ্বীপ। এখানে নিরক্ষরতার হার বেশি এবং মাটির লবণাক্ততা কৃষি ফলনকে বাধাগ্রস্ত করে। স্থানীয় যুবসমাজ দ্বীপ থেকে স্থানান্তরিত হচ্ছে ফলে এ দ্বীপের ভবিষ্যৎ প্রশ্নবিদ্ধ হচ্ছে। ডিজিটাল দ্বীপ প্রকল্পটির লক্ষ্য হলো সরকারের তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের বিদ্যমান জনসুবিধার আরও প্রসার ঘটিয়ে মহেশখালীর বাসিন্দাদের জন্য সুযোগ তৈরি করা। আইওএম গত ২১ অক্টোবর এ দ্বীপে আয়োজন করে ‘ডিজিটাল আইল্যান্ড ফেস্ট’। এ আয়োজনে স্থানীয় শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা নানা সামাজিক-সাংস্কৃতিক পরিবেশনা এবং ভিডিও অনলাইনের বিভিন্ন বিষয়ে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে ‘ডিজিটাল দ্বীপ’-কে তুলে ধরে। ডিজিটাল দ্বীপের বৈশিষ্ট্য হলো, ২৫টি স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠানে দ্রুতগতির ইন্টারনেট সংযোগ স্থাপিত হয়েছে। জাগো ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ১০টি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এক থেকে তৃতীয় শ্রেণির শিক্ষার্থীদের দূরশিক্ষণ পরিষেবা দেওয়া হচ্ছে। এ প্রক্রিয়ায় রাজধানীর শিক্ষকরা মহেশখালী দ্বীপের শিক্ষার্থীদের তৎক্ষণা ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে ইংরেজি কোর্সে শিক্ষা দেন। প্রকল্পটি ই-টিচিং ও ই-লার্নিংয়ের মাধ্যমে স্থানীয় শিক্ষকদের সক্ষমতা উন্নত করছে। ই-কমার্সের মাধ্যমে উৎপাদিত পণ্য বিক্রি করে আয় বাড়ানো ও মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য কমাতে উৎসাহিত করা হচ্ছে। চারটি কমিউনিটি স্বাস্থ্য ক্লিনিক ও একটি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের মাধ্যমে মোবাইল স্বাস্থ্য পরিষেবা পাওয়া যাচ্ছে। স্থানীয় ও সরকারি কর্মকর্তাদের কম্পিউটার দক্ষতাবিষয়ক প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে। সমাজকল্যাণ মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সমন্বয় করে একটি কমিউনিটি ক্লাব ও কম্পিউটার প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে কম্পিউটার এবং দ্রুতগতির ইন্টারনেট সর্বসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হয়েছে।

সর্বশেষ খবর