শুক্রবার, ১৫ মে, ২০২০ ০০:০০ টা

অগ্রিম করের ৭৫০ কোটি টাকা দ্রুত ফেরত চান সিমেন্ট শিল্প মালিকরা

নিজস্ব প্রতিবেদক

সরকারি কোষাগারে জমা দেওয়া পুঞ্জীভূত অগ্রিম আয়করের ৭৫০ কোটির বেশি টাকা দ্রুত ফেরত চেয়েছেন সিমেন্ট শিল্প মালিকরা। তাদের সংগঠন বাংলাদেশ সিমেন্ট ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিসিএমএ) বলেছে, করোনাভাইরাস সিমেন্ট শিল্পে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। দেশে বিক্রি ৪৬ শতাংশ কমেছে। এখন প্রতি মাসে খরচ হওয়া ১০০ কোটিরও বেশি টাকা লোকসান হচ্ছে। সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর ব্যবসা করার ক্ষমতা দিন দিন কমে যাচ্ছে। সরকারি কোষাগারে জমা হওয়া অগ্রিম আয়করে যদি ১০ শতাংশ হারেও সুদ বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে শুধুমাত্র সুদ হিসাবে প্রতি বছর ৭৫ কোটি টাকা হারাচ্ছে সিমেন্ট খাত।

বিসিএমএ গতকাল জাতীয় রাজস্ব বোর্ড-(এনবিআর)-কে এক চিঠিতে এসব কথা বলেছে। সংগঠনটির সভাপতি আলমগীর কবির স্বাক্ষরিত এ চিঠিতে আরও বলা হয়- দুর্ভাগ্যবশত, বিগত কয়েক বছর ধরে সিমেন্ট শিল্প বিভিন্ন সমস্যায় ভুগছে। কঠিন প্রতিযোগিতার সম্মুখীন হওয়ায় কয়েক বছর ধরে সিমেন্টের দাম ক্রমান্বয়ে কমছে। মার্কিন ডলারের বিপরীতে টাকার অবমূল্যায়ন হওয়ায় কাঁচামালের দাম বেড়েছে। অন্যান্য খরচের মধ্যে গ্যাস-বিদ্যুৎ বিল, শ্রম ব্যয় ও পরিবহন খরচ বেড়েছে। ঋণের সুদ উল্লেখযোগ্য হারে বৃদ্ধি পাওয়ায় অর্থায়নের খরচও বেড়েছে। তীব্র প্রতিযোগিতার কারণে আদায়যোগ্য অর্থের পরিমাণ ব্যাপক হারে বেড়ে যাওয়ায় চলতি মূলধনের প্রয়োজন।

বিসিএমএ বলেছে, আয়কর অধ্যাদেশ ১৯৮৪ এর ১৪৬ নম্বর সেকশন অনুযায়ী, করদাতার পরিশোধিত টাকা পরিশোধযোগ্য করের চেয়ে বেশি হলে তা ফেরত পাওয়ার যোগ্য। ফেরত দিতে দেরি হলে সরকার যতক্ষণ পর্যন্ত না তা ফেরত দিবে, ততক্ষণ পর্যন্ত তার ওপর সাড়ে ৭ শতাংশ হারে সুদ প্রদান করবে। কিন্তু দুঃখের বিষয় এই ফেরতযোগ্য টাকাগুলো বছরের পর বছর পরে থাকে এবং বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও তা নগদে ফেরত পাওয়া যায় না। পুঞ্জীভূত অগ্রিম আয়কেরর টাকাগুলো দ্রুত ফেরত বা ছাড় করার বিষয়ে এনবিআরের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে বিসিএমএ বলেছে- ওই টাকা ফেরত পেলে অর্থাভাবগ্রস্ত কোম্পানিগুলো কিছু নগদ অর্থের সরবরাহ পাবে। এই কঠিন পরিস্থিতিতে অর্থায়নের খরচ কিছুটা কমিয়ে আনতে পারবে। সিমেন্ট কোম্পানিগুলো প্রাণ ফিরে পাবে।

বিসিএমএ বলেছে, সিমেন্ট উৎপাদনে ব্যবহার্য শতভাগ আমদানি নির্ভর কাঁচামালেই অগ্রিম আয়কর হিসেবে ৩ শতাংশ হারে উৎসে কর আদায় করা হচ্ছে। আমদানি পর্যায়ে কাঁচামালের মূল্যায়িত দাম সাধারণত ২৫ শতাংশ বেশি হয়। ফলে কার্যকরী অগ্রিম আয়কর হয় প্রায় ৪ শতাংশ। অধিকন্তু, সেকশন ৫২ ও ৫৩ এর অধীনে সব পণ্য ও সেবার বিপরীতে ৫ শতাংশেরও বেশি হারে উৎসে কর আদায় করা হচ্ছে। যদি ভোক্তার কাছে বিক্রির সময় উৎসে কর এবং রপ্তানির সময় উৎসে কর বিবেচনায় নেওয়া হয়, তাহলে কার্যকরী অগ্রিম আয়কর হয় প্রায় ৯ শতাংশ।

বিসিএমএ বলেছে, চলতি ২০১৯-২০ অর্থবছর থেকে আমদানি পর্যায়ে ৩ শতাংশ অগ্রিম আয়কর ন্যূনতম কর দায় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। পাশাপাশি সেকশন ৮২সি ধারা অনুযায়ী অন্যান্য উৎস করও ন্যূনতম করদায় হিসেবে বিবেচনা করা হবে। এমতাবস্থায়, প্রায় ৯ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর মুনাফার সঙ্গে সমন্বয় করা যাবে না। এই অগ্রিম আয়কর সিমেন্ট কোম্পানিগুলোর জন্য বাধ্যতামূলক হয়ে গিয়েছে। সিমেন্ট কোম্পানিগুলো কর পূর্ববর্তী খুব সামান্য মুনাফা করে, ফলে এ বছর সমস্ত সিমেন্ট কোম্পানিরই লোকসান হচ্ছে। এই পরিস্থিতি সামনের বছরগুলোতে আরও ভয়াবহ হবে।

বিসিএমএ বলেছে, করোনাভাইরাস সিমেন্ট শিল্প খাতে বড় ধরনের আঘাত হেনেছে। গত বছরের এপ্রিল মাসের তুলনায় এ বছরের এপ্রিল মাসে সারা দেশে সিমেন্ট বিক্রির পরিমাণ ৪৬ শতাংশ কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে অর্থনীতিতে গতি ফিরে আসতে সময় লাগবে। চলতি এ বছরের পুরোটাই হয়তো সিমেন্ট বিক্রিতে মন্দাভাব বিরাজ করবে। তবে নির্মাণ খাতে গতি ফিরে আসতে আরও বেশি সময় লাগবে। প্রবাসী আয় ভয়াবহ হারে কমে গিয়েছে। প্রবাসী আয়ের প্রায় পুরোটাই গ্রামে বাড়ি-ঘর নির্মাণে খরচ হয়ে থাকে। মানুষের আয় কমে যাবে, তাই তারা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের জন্যই বেশি খরচ করবে এবং নির্মাণ খাত কম প্রাধান্য পাবে। সিমেন্ট খাত শ্রম ঘন হওয়ায় কোম্পানিগুলো তাদের শ্রমিকদের বেতন-ভাতা প্রদান করে যাচ্ছে। এ জন্য প্রতি মাসে খরচ হওয়া ১০০ কোটিরও বেশি টাকা লোকসান হচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর