শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

ক্ষত না শুকাতেই ফের বন্যার পূর্বাভাস

আজ থেকেই নদ-নদীর পানি বৃদ্ধির শঙ্কা, ২৩ জেলার আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখার নির্দেশ

নিজস্ব প্রতিবেদক

ক্ষত না শুকাতেই ফের বন্যার পূর্বাভাস

কুড়িগ্রাম সদর উপজেলার সারডোব এলাকায় বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধ হুমকির মুখে। গতকাল তোলা ছবি -বাংলাদেশ প্রতিদিন

২৬ জুন থেকে শুরু হওয়া ১১ দিনের স্বল্পমেয়াদি বন্যার ক্ষতিগ্রস্ত ১৪ জেলার ১৩ লক্ষাধিক মানুষ। পানিতে ডুবে নষ্ট হয়ে গেছে কৃষকের কষ্টের ফসল। রাস্তা-কালভার্ট ভেঙে বিচ্ছিন্ন হয়ে গেছে অনেক এলাকার যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যার পানি নামার সঙ্গে সঙ্গে অব্যাহত ভাঙনে বদলে যাচ্ছে অনেক জেলার মানচিত্র। বন্যায় উঁচু সড়ক, বেড়িবাঁধে আশ্রয় নেওয়া অসহায় মানুষগুলো সবেমাত্র ঘরে ফিরতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই ফের ধেয়ে আসছে বড় বন্যা। ইতিমধ্যে অনেক নদ-নদীর পানি বাড়তে শুরু করেছে। প্লাবিত হওয়ার আশঙ্কায় থাকা ২৩টি জেলায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে ডিসিদের নির্দেশ দিয়েছে সরকার।

গতকাল দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী  এনামুর রহমান সচিবালয় থেকে এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে জানান, ১০-১১ জুলাই থেকে আবারও পানি বাড়বে। ব্রহ্মপুত্র, যমুনা, পদ্মা ও মেঘনা নদীর পানি বৃদ্ধি পেয়ে ২০ থেকে ২৪টি জেলা প্লাবিত হবে। এ দফায় রংপুর, কুড়িগ্রাম, নীলফামারী, লালমনিরহাট, গাইবান্ধা, বগুড়া, সিরাজগঞ্জ, টাঙ্গাইল, জামালপুর, রাজবাড়ী, শরীয়তপুর, ফরিদপুর, মাদারীপুর, মানিকগঞ্জ, মুন্সীগঞ্জ, চাঁদপুর, সিলেট, সুনামগঞ্জ, নেত্রকোনা, কিশোরগঞ্জ, রাজশাহী, নাটোর ও নওগাঁ জেলা নতুন করে বন্যা দুর্গত হবে। তিনি বলেন, এবার বন্যার স্থায়িত্ব দীর্ঘায়িত হবে বলে পূর্বাভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। বন্যা মোকাবিলায় প্লাবিত হওয়ার শঙ্কায় থাকায় ২৩ জেলায় আশ্রয় কেন্দ্র প্রস্তুত রাখতে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। করোনাভাইরাসের সংক্রমণ রোধে আশ্রয় কেন্দ্রে সামজিক দূরত্ব বজায় রাখতে ও মাস্ক ব্যবহারের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই ২৩ জেলার সবকটিতে পূর্ব প্রস্তুতি হিসেবে ২০০ মেট্রিক টন করে চাল, দুই হাজার প্যাকেট শুকনা খাবার এবং শিশু খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা, গো-খাদ্যের জন্য দুই লাখ টাকা এবং নগদ তিন থেকে পাঁচ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া আমাদের কাছে পর্যাপ্ত খাদ্য মজুদ আছে। কোনো অবস্থাতেই খাবারের কোনো সংকট হবে না।

আমাদের বিভিন্ন জেলার নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিরা জানিয়েছেন বন্যার সর্বশেষ পরিস্থিতি। গাইবান্ধা : গতকাল থেকে ফের বাড়তে শুরু করেছে তিস্তার পানি। গাইবান্ধা পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, গত ২৪ ঘণ্টায় তিস্তার পানি বেড়েছে ৯ সেন্টিমিটার। তবে তিস্তা এখনো বিপৎসীমার ২৬ সেন্টিমিটার নিচে আছে। অন্যদিকে করতোয়ার পানি ১৫ সেন্টিমিটার ও ব্রহ্মপুত্রের পানি ৩ সেন্টিমিটার কমেছে এবং ঘাঘটের পানি স্থিতাবস্থায় ছিল। রংপুর : দিনভর বৃষ্টিতে রংপুরের নিম্নাঞ্চলগুলো ফের প্লাবিত হতে শুরু করেছে। এ অঞ্চলে তিস্তার নদীর পানি আবারও বিপৎসীমার কাছাকাছি চলে এসেছে। গতকাল বিকাল ৩টায় তিস্তার ডালিয়া পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ১৫ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছিল। টানা বৃষ্টিতে জনজীবনে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে শুরু কেেছ। নিম্নআয়ের খেটে খাওয়া মানুষের খাদ্য সংকট দেখা দিয়েছে। পাড়া-মহল্লার রাস্তায় জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত অব্যাহত থাকলে খেতের ফসলের ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। সিরাজগঞ্জ : বন্যায় স্বপ্নের ফসল ও ভাঙনে বসতভিটা হারিয়ে নিঃস্ব হয়ে পড়ছে যমুনা পাড়ের মানুষ। যমুনার পানি কমতে শুরু করায় ভাঙন তীব্র হয়েছে। প্রতিদিন যমুনা গর্ভে বিলীন হচ্ছে মানুষের বসতভিটা-ফসলি জমি। সিরাজগঞ্জের জেলার মানচিত্র থেকে হারিয়ে যাচ্ছে গ্রামের পর গ্রাম। আগাম বন্যায় পাট, কাউন, তিল, সবজি ও বাদাম নষ্ট হওয়ায় চরাঞ্চলের কৃষকের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়েছে। বন্যা ও ভাঙনকবলিত অসংখ্য মানুষ আশ্রয় নিয়েছে ওয়াপদা বাঁধে খোলা আকাশের নিচে। পানিবন্দী রয়েছে এখনো প্রায় ৫০ হাজার মানুষ। দেখা দিয়েছে খাদ্য সংকট।

 সরকারিভাবে যে চাল বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে তা একেবারে নগণ্য বলে জানিয়েছেন বানভাসীরা। অনেক এলাকায় এখনো কোনো খাবার পৌঁছেনি।

কুড়িগ্রাম : সবকটি নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। ঘরে ফিরতে শুরু করেছে বানভাসিরা। তবে অনেকের ঘর-বাড়িতে এখনো পানি-কাদা থাকায় তারা বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। এর মধ্যে গতকাল সকালে নদ-নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। আগামী তিন দিন অবিরাম বৃষ্টি ও উজানের পানিতে নদ-নদীর পানি আরও বেড়ে ফের বন্যা পরিস্থিতির আশঙ্কা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী আরিফুল ইসলাম। এদিকে পানি নেমে যাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে শুরু হওয়া ভাঙনে প্রতিদিন নদীগর্ভে যাচ্ছে বসতবাড়ি ও স্থাপনা। ভাঙনের কবলে পড়েছে সদর, উলিপুর ও রাজারহাট উপজেলার বিস্তর এলাকা। সদর উপজেলার হলোখানা ইউনিয়নের বন্যা নিয়ন্ত্রণ বাঁধে ধস দেখা দিয়েছে।

জামালপুর : যমুনার পানি বিপৎসীমার নিচে নেমে আসায় জামালপুরের সার্বিক বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে। তবে বেশিরভাগ বসতবাড়ি থেকে পানি নেমে গেলেও এখনো যমুনা তীরবর্তী এলাকার বসতবাড়িতে পানি রয়ে গেছে। ফলে এখনো বন্যাদুর্গত এলাকার মানুষেরা সরকারি আশ্রয় কেন্দ্র ছাড়াও বিভিন্ন উঁচু সড়ক ও বাঁধে আশ্রয় নিয়ে আছেন। বন্যার পানির স্রোতে বিভিন্ন সড়ক ভেঙে যাওয়ায় বন্ধ রয়েছে স্থানীয় ও আঞ্চলিক যোগাযোগ ব্যবস্থা। বন্যায় জেলার ১৩ হাজার ৩৪৩ হেক্টর জমির ফসল পানিতে তলিয়ে প্রায় নষ্ট হয়ে গেছে।

 

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর