শিরোনাম
শুক্রবার, ১০ জুলাই, ২০২০ ০০:০০ টা

বাংলাদেশে আক্রান্তের হার চার মাস পরও ঊর্ধ্বমুখী

২৪ ঘণ্টায় শনাক্ত ৩৩৬০ মৃত্যু ৪১ ঢাকার চেয়ে চট্টগ্রামে মৃত্যু বেশি

নিজস্ব প্রতিবেদক

দেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার চার মাস পার হলেও সংক্রমণের হার এখনো ঊর্ধ্বমুখী। অথচ চীন, ইতালি, স্পেনের মতো অধিকাংশ দেশ প্রথম রোগী পাওয়ার সাড়ে তিন মাসের মধ্যে নিয়ন্ত্রণে নিয়ে আসে সংক্রমণ হার। নমুনা পরীক্ষার বিচারে গত ৮ জুলাই ইতালিতে সংক্রমণ হার ছিল মাত্র শূন্য দশমিক ৩৮ শতাংশ, যা বাংলাদেশে ছিল ২২ দশমিক ২৬ শতাংশ। এ ছাড়া বিশ্বের ২০টি ছোট দেশ ও অঞ্চল নিজেদের সম্পূর্ণ করোনামুক্ত করতে সক্ষম হয়েছে। ওয়ার্ল্ডোমিটারের তথ্য বিশ্লেষণে এমন চিত্র সামনে এসেছে। এদিকে বৃহস্পতিবার সকাল ৮টা পর্যন্ত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩ হাজার ৩৬০ জনের মধ্যে নতুন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ধরা পড়ায় দেশে শনাক্ত রোগীর সংখ্যা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ৭৫ হাজার ৪৯৪-এ। বাংলাদেশে প্রথম করোনা রোগী শনাক্ত হয় ৮ মার্চ। বিশ্বের অনেক দেশে তিন মাস পর করোনা সংক্রমণ কমে আসায় জুন মাসকে বাংলাদেশে করোনা সংক্রমণের ‘পিক পিরিয়ড’ উল্লেখ করেছিলেন অনেক বিশেষজ্ঞ। সে হিসেবে জুলাইয়ে এসে সংক্রমণ হার কমার কথা থাকলেও উল্টো বাড়ছে। নমুনা পরীক্ষার বিচারে ৫ জুন  দেশে সংক্রমণ হার ছিল ২০ দশমিক ০৭ শতাংশ। ১০ দিন পর ১৫ জুন ২০ দশমিক ৬১ শতাংশ, ২৫ জুন ২১ দশমিক ৯২ শতাংশ, ৫ জুলাই ১৯ দশমিক ৫৭ শতাংশ এবং গতকাল ছিল ২১ দশমিক ৪৯ শতাংশ। অথচ স্পেনে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম করোনা শনাক্তের পর ২৬ মার্চ এক দিনে ৮ হাজারের বেশি রোগী পাওয়া যায়। ২৯ মে থেকে কখনো ১ হাজারের বেশি রোগী শনাক্ত হয়নি। ইতালিতে ১৫ ফেব্রুয়ারি প্রথম রোগী শনাক্তের পর ২১ মার্চ এক দিনে ৬ হাজার ৫৫৩ জনের করোনা শনাক্ত হয়। ১৩ মে থেকে ১ হাজারের ওপরে ওঠেনি রোগী শনাক্ত। তবে দেশটিতে দৈনিক পরীক্ষা হচ্ছে প্রায় ৫০ হাজার। ৮ জুলাইর তথ্যানুযায়ী ৫০ হাজার ৪৪৩ জনের নমুনা পরীক্ষা করে দেশটিতে করোনা শনাক্ত হয় ১৯৩ জনের। এদিকে বাংলাদেশে ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে মৃত্যু হয়েছে আরও ৪১ জনের। এর মধ্যে ২৯ জন পুরুষ, ১২ জন নারী। এ নিয়ে বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে মৃতের সংখ্যা বেড়ে হয়েছে ২ হাজার ২৩৮। ৪১ জনের মধ্যে ৩৮ জনই মারা যান হাসপাতালে, তিনজনের মৃত্যু হয় বাসায়। এদিকে এখন পর্যন্ত মোট মৃত্যুর ৫০ দশমিক ৪০ শতাংশ ঢাকা বিভাগে হলেও এখন মৃত্যু বাড়ছে চট্টগ্রামে। ২৪ ঘণ্টায় মারা যাওয়া ৪১ জনের মধ্যে ১২ জন ঢাকা বিভাগের, ১৪ জন চট্টগ্রাম বিভাগের, দুজন রাজশাহী বিভাগের, ছয়জন খুলনা বিভাগের, দুজন ময়মনসিংহ বিভাগের, দুজন সিলেট বিভাগের এবং তিনজন রংপুর বিভাগের। এ পর্যন্ত যারা মারা গেছেন তার মধ্যে পুরুষ ১ হাজার ৭৭০ জন, নারী ৪৬৮ জন। নারীর চেয়ে পুরুষ মৃত্যুর হার ৪ গুণ বেশি। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদফতরের নিয়মিত বুলেটিনে যুক্ত হয়ে অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা এসব তথ্য তুলে ধরেন।

ব্রিফিংয়ের তথ্যানুযায়ী মৃত ৪১ জনের মধ্যে ৫০ বছরের কম বয়সী সাতজন। পঞ্চাশোর্ধ্ব ৩৪ জন। অর্থাৎ ৫০ বছরের নিচের চেয়ে পঞ্চাশোর্ধ্ব মানুষের মৃত্যু ৫ গুণ বেশি। এর মধ্যে শূন্য থেকে ১০ বছরের একজন, ১১ থেকে ২০ বছরের একজন, ত্রিশোর্ধ্ব দুজন, চল্লিশোর্ধ্ব তিনজন, পঞ্চাশোর্ধ্ব ১১ জন, ষাটোর্ধ্ব ১২ জন, সত্তরোর্ধ্ব নয়জন এবং ৮০ বছরের বেশি বয়সী দুজন রয়েছেন।

অধ্যাপক নাসিমা সুলতানা জানান, ২৪ ঘণ্টায় ৭৬টি ল্যাবরেটরিতে ১৫ হাজার ৬৩২টি নমুনা পরীক্ষা করে নতুন করে ৩ হাজার ৩৬০ জনের করোনা শনাক্ত হয়েছে। তবে বাসা ও হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আরও ৩ হাজার ৭০৬ জন রোগী সুস্থ হয়ে উঠেছেন গত ২৪ ঘণ্টায়। তাতে সুস্থ রোগীর মোট সংখ্যা দাঁড়াল ৮৪ হাজার ৫৪৪ জনে। করোনা পরীক্ষার ফি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, বেসরকারি হাসপাতাল ও ডায়াগনস্টিক সেন্টারে বহির্বিভাগ ও অন্তর্বিভাগে করোনা পরীক্ষার ফি নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ হাজার ৫০০ টাকা। অনুমোদনপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানগুলো বাসায় গিয়ে নমুনা সংগ্রহ করলে ১ হাজার টাকা অতিরিক্ত ফি নিতে পারবে।

প্রসঙ্গত, বাংলাদেশে করোনাভাইরাসের প্রথম সংক্রমণ ধরা পড়ে ৮ মার্চ, তা দেড় লাখ পেরিয়ে যায় গত ২ জুলাই। ১৮ মার্চ বাংলাদেশে করোনাভাইরাসে প্রথম মৃত্যুর খবর নিশ্চিত করে স্বাস্থ্য অধিদফতর। ৫ জুলাই তা ২ হাজার ছাড়িয়ে যায়। এর মধ্যে ৩০ জুন এক দিনেই ৬৪ জনের মৃত্যুর খবর জানানো হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর