বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

দখল-দূষণে মরছে কীর্তনখোলা

বিপর্যয় ঠেকাতে উদ্যোগ দাবি পরিবেশবিদদের

রাহাত খান, বরিশাল

দখল-দূষণে মরছে কীর্তনখোলা

৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কীর্তনখোলা নদী মরতে বসেছে। অন্তত আটটি পয়েন্টে ডুবোচর জেগেছে। বরিশাল নগরীর অক্সিজেন ব্যাংকখ্যাত কীর্তনখোলার ছয়টি পয়েন্টে ময়লা-আবর্জনা ফেলে অব্যাহতভাবে দূষিত করা হচ্ছে। নগরীর অন্তত ১০টি ওষুধ কোম্পানির বর্জ্য কোনো ধরনের শোধন ছাড়াই সরাসরি মিশছে কীর্তনখোলার পানিতে। সরকারি-বেসরকারি ও ব্যক্তি পর্যায়ে নদীর তীর দখলের মহোৎসব চলছে। এভাবে চলতে থাকলে আগামীতে কীর্তনখোলা নদী অস্তিত্ব হারাবে আশঙ্কা পরিবেশবদিদের। তবে, সরকারি বিভিন্ন সেবাদানকারী প্রতিষ্ঠানের সহায়তায় কীর্তনখোলা নদীর দখল-দূষণ প্রতিরোধে উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, মেহেন্দিগঞ্জ সংলগ্ন মেঘনার শাখা নদীর মোহনা থেকে ঝালকাঠির গাবখান চ্যানেলের মোহনা পর্যন্ত ৪০ কিলোমিটার দীর্ঘ কীর্তনখোলা বরিশালসহ দক্ষিণের মানুষের প্রাণ বলা যায়। এই নদীতে মাছ শিকার করে জীবিকা নির্বাহ করেন হাজারো পরিবার। নৌপথে পণ্য ও যাত্রী পরিবহন, বন্যা থেকে রক্ষাসহ এ অঞ্চলের জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কীর্তনখোলা নদীর গুরুত্ব অপরিসীম। অথচ প্রতিনিয়ত ময়লা-আবর্জনা ফেলে কীর্তনখোলা নদীর নির্মল পানি দূষণ করছে দুই পাশের বাসিন্দারা। বিভিন্ন বাসাবাড়ির টয়লেটের মানববর্জ্যও সরাসরি ড্রেনের মাধ্যমে মিশছে কীর্তনখোলার পানিতে। যাত্রী ও পণ্যবাহী নৌযান থেকেও প্রতিনিয়ত মানববর্জ্য নদীতে ফেলা হচ্ছে কোনো ধরনের শোধন ছাড়া। নগরীতে থাকা ১০টি ওষুধ কোম্পানির বর্জ্যও সরাসরি মিশছে কীর্তনখোলার পানিতে। এতে দিন দিন বিষাক্ত হয়ে পড়ছে কীর্তনখোলার পানি। ওষুধ কোম্পানির বর্জ্য পড়ায় নদীর পানি ব্যবহারের অযোগ্য হয়ে পড়ছে বলে জানিয়েছেন কীর্তনখোলার তীরবর্তী বাসিন্দারা। এছাড়া সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তি পর্যায়েও নদীর তীর দখলের অভিযোগ রয়েছে। সম্প্রতি বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের জরিপে নগরী সংলগ্ন ছয়টি পয়েন্ট বেলতলা, জেলখাল, রসুলপুর, চরকাউয়া খেয়াঘাট, ডিসি ঘাট এবং ত্রিশ গোডাউন এলাকায় কীর্তনখোলা নদী দখল এবং দূষণের চিত্র পেয়েছে। সংগঠনের বিভাগীয় সমন্বয়কারী রফিকুল আলম বলেন, এভাবে চলতে থাকলে প্রাণের কীর্তনখোলা নদী আগামীতে অস্তিত্ব হারাতে পারে। দক্ষিণের মানুষের জীবন-জীবিকাসহ জীববৈচিত্র্য রক্ষায় কীর্তনখোলার দখল-দূষণ প্রতিরোধে সমন্বিত পদক্ষেপ নেওয়ার দাবি জানিয়েছেন বরিশাল নদী-খাল বাঁচাও আন্দোলনের আহ্বায়ক রনজিৎ দত্ত। এদিকে কীর্তনখোলার লামছড়ি, চরমোনাই, চড়বাড়িয়া, দপদপিয়া ও গাবখান চ্যানেলের মোহনাসহ অন্তত আটটি পয়েন্টে ডুবোচর জেগেছে বলে জানিয়েছেন বরিশাল পানি উন্নয়ন বোর্ডের উপ-বিভাগীয় প্রকৌশলী মো. জাভেদ। ডুবোচর অপসারণে পানি উন্নয়ন বোর্ডের নানা পরিকল্পনায় রয়েছে বলে তিনি জানান। সরকারের সেবাদানকারী সংস্থাগুলোর সহায়তায় কীর্তনখোলার তীর দখলমুক্ত করাসহ দূষণ বন্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার কথা জানিয়েছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান। ওষুধ কোম্পানির বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেললে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তিনি। আগামী প্রজন্মের বাসযোগ্য বরিশাল গড়ার জন্য কীর্তনখোলা নদী রক্ষার বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেছেন বরিশালের জেলা প্রশাসক এস এম অজিয়র রহমান।

সর্বশেষ খবর