বৃহস্পতিবার, ৩ ডিসেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

কখনো পুলিশ কর্মকর্তা কখনো সাংবাদিক

অভিনব প্রতারণা

নিজস্ব প্রতিবেদক

কখনো প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ পুলিশ সুপার, কখনো থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি)। তিনিই আবার বহুজাতিক কোম্পানির পরিচালক, ডজনখানেক এনজিওর প্রধান। প্রয়োজনে হয়ে যান সাংবাদিকও। ওবায়দুর রহমান নামে এক ব্যক্তির এমন পরিচয়ের যেন শেষ নেই। তার বাড়ি ফরিদপুরের বোয়ালমারী উপজেলায়। পুলিশ বলছে, এতসব পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি আসলে একজন প্রতারক। ভুয়া পরিচয় দিয়ে পাওনা টাকা উদ্ধার, জমি দখল, চাকরি, প্লটের ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন তদবিরের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রতারণা করে আসছিলেন তিনি। এই প্রতারককে গ্রেফতারের পর সামনে এসেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। প্রতারণার মাধ্যমে হাতিয়েছেন ৩০ লাখ টাকা। গত ৩০ নভেম্বর রাজধানীর মগবাজার মোড়ে হাতিরঝিল হোটেলের সামনে থেকে তাকে গ্রেফতার করে হাতিরঝিল থানা পুলিশ। এ ঘটনায় গত ১ ডিসেম্বর একটি মামলা করেন প্রতারণার শিকার ডা. মো. মুস্তাহিদুর রহমান নামে এক ব্যক্তি।

মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, পোশাক কারখানার এক্সেসরিজ প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠান এসিস গার্মেন্টস সলিউশনের মালিক মুস্তাহিদুর রহমানের সঙ্গে গত মার্চে পরিচয় হয় ওবায়দুর রহমানের। ওবায়দুর নিজেকে পরিচয় দেন স্পেশাল ব্রাঞ্চের বিশেষ পুলিশ সুপার হিসেবে; দায়িত্ব পালন করছেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে। পরিচয়ের একপর্যায়ে যে কোনো সমস্যা সমাধানের আশ্বাস দেন ওবায়দুর। পরে ব্যবসায়ী বিভিন্ন কোম্পানির কাছে তার পাওনা কয়েক কোটি টাকা আদায় করে দেওয়ার অনুরোধ জানান। দেনাদারদের নাম-ঠিকানা পেয়ে পুলিশ সুপার পরিচয়ে চট্টগ্রামের এক ব্যবসায়ীকে ফোনে হুমকি দেন ওবায়দুর। টাকা পরিশোধের পাশাপাশি নিজের জন্য দাবি করেন একটি গাড়ি। ভয় পেয়ে দুই দিনের মধ্যে ২১ লাখ ৬০ হাজার টাকা ও একটি গাড়ি পাঠিয়ে দেন ওই ব্যবসায়ী।

ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) তেজগাঁও বিভাগের অতিরিক্ত উপকমিশনার (এডিসি) হাফিজ আল ফারুক এ প্রতিবেদককে জানান, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের এসপি পরিচয়ে ওবায়দুর ওশেন অ্যাপারেলসের কাছ থেকে নিয়েছে ২১ লাখ ৬৭ হাজার টাকা। এরশাদ নিট ফ্যাশনের কাছ থেকে নিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। ফ্যাশন ক্র্যাফটের কাছ থেকে নিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। অন্যান্য আরও কয়েকজনের কাছ থেকে নিয়েছেন ৩ লাখ টাকা। এভাবে প্রতারণার মাধ্যমে তিনি ৩০ লাখ ৬৭ হাজার টাকা আত্মসাৎ করেছেন। তদন্ত সংশ্লিষ্টরা জানান, ওবায়দুর এমডির ছোটভাই, স্পেশাল ব্রাঞ্চের এসপি পরিচয় দিয়ে ওই টাকাগুলো নিয়েছেন। কখনো হাতিরঝিল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) পরিচয়ে ওয়ারেন্ট আছে এই ভয় দেখিয়ে অনেকের কাছ থেকে নিয়েছেন মোটা অঙ্কের টাকা। শুধু পুলিশ কর্মকর্তাই নয়, ওবায়দুর কখনো নিজেকে পরিচয় দেন বহুজাতিক কোম্পানির পরিচালক, সাংবাদিক, এনজিওর প্রধান, আবার কখনো ট্রাভেল এজেন্সি, সিকিউরিটি সার্ভিস ও ফুড অ্যান্ড বেভারেজ কোম্পানির মালিক হিসেবে।

এ বিষয়ে ডিএমপির তেজগাঁও বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, ওবায়দুরের কাছ থেকে প্রচুর দলিল, অনেকগুলো ভুয়া সিম কার্ড, মোবাইল সেটসহ তার গাড়ি থেকে ওয়্যারলেস সেট জব্দ করা হয়েছে। তার বিরুদ্ধে এর আগেও একাধিক মামলার তথ্য পেয়েছে পুলিশ।

সর্বশেষ খবর