মঙ্গলবার, ২৫ মে, ২০২১ ০০:০০ টা

কক্সবাজার রেললাইন কাজ এগিয়েছে ৫৭ শতাংশ

সাইদুল ইসলাম, চট্টগ্রাম

কক্সবাজার রেললাইন কাজ এগিয়েছে ৫৭ শতাংশ

সরকারের অন্যতম অগ্রাধিকার প্রকল্প দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুমধুম রেললাইন প্রকল্পের নির্মাণকাজ। চলমান করোনা মহামারীর কারণে লকডাউন থাকলেও এ প্রকল্পের নির্মাণকাজ থেমে নেই। প্রকল্পের রেললাইন তৈরি করতে মাটি কাটা এবং তৈরি করা লাইনগুলোতে সিগন্যাল তার বসানোর কাজও চলছে দ্রুতগতিতে। ইতিমধ্যে দোহাজারী এলাকার প্রায় ৩ কিলোমিটারের সিগন্যাল তার বসানো হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের নির্দেশনা ও স্বাস্থ্যবিধি মেনেই দ্রুতগতিতে চলছে মাটি কাটা ও ব্রিজ নির্মাণ, রেলট্র্যাকসহ অন্য কাজগুলো। প্রকল্পের কাজের সঙ্গে থাকা দায়িত্বশীল কর্মকর্তা ও শ্রমিকরা নিজেদের স্বাস্থ্যবিধি মেনেই কাজ করছেন এবং চলতি বছরের এপ্রিল পর্যন্ত প্রকল্পের সার্বিক অগ্রগতি ৫৭ শতাংশ হয়েছে বলে প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা জানান। প্রকল্পের সিগন্যালের জন্য রেললাইনের মধ্যে তার বসানোর কাজসহ ৫৭ শতাংশ অগ্রগতি হয়েছে জানিয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন প্রকল্প পরিচালক (পিডি) মো. মফিজুর রহমান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, করোনা পরিস্থিতি ও লকডাউন মিলে কিছুটা সমস্যা হলেও করোনা সংক্রমণ রোধের জন্য শ্রমিকদের প্রকল্প এলাকায় রেখেই কাজ চালিয়ে নেওয়া হচ্ছে। ধারাবাহিকভাবে মাটি কাটা, ব্রিজ নির্মাণ ও রেলট্র্যাক বসানোর কাজ চলমান রয়েছে। তিনি বলেন, ২০২২ সালের মধ্যে এ রেললাইন প্রকল্পটির কাজ সম্পন্ন করে পর্যটন নগরী কক্সবাজারের সঙ্গে রেল যোগাযোগ চ‚ড়ান্তভাবে চালু হবে বলে আশা করছি। ফলে অপার সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়ে যাবে দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের। যোগাযোগ ব্যবস্থায় সাধিত হবে আমূল পরিবর্তন। একই কথা বললেন প্রকল্পের সহকারী প্রকল্প পরিচালক (এপিডি) আবুল কালাম চৌধুরী। প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, জানুয়ারি থেকে রেলট্র্যাক বা রেললাইন বসানোর কাজ শুরু হয়েছে কক্সবাজার সদরের রামু উপজেলার পানির ছড়া বাজার এলাকা থেকে। ইতিমধ্যে দুই থেকে তিন কিলোমিটার রেলট্র্যাক বসানো হয়েছে। কোনো সমস্যা না হলে প্রতি মাসে সর্বনিম্ন ৮ থেকে ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত রেলট্র্যাক বা রেললাইন বসানোর সম্ভাবনা রয়েছে। ওই এলাকার পানির ছড়া বাজারের দলির ছড়া মৌজা থেকে শুরু হয়ে কক্সবাজারের দিকে লাইনটির কাজ শুরু হয়েছে। এর আগে থেকেই চলছে প্রকল্পের আওতাধীন মাটি কাটা, ব্রিজ নির্মাণ, লেভেল ক্রসিং, কালভার্ট, স্টেশন তৈরিসহ প্রকল্পের সার্বিক কাজ। রেললাইনটি দ্রুত নির্মাণের মাধ্যমে যাতায়াত শুরু হলে ঢাকা-চট্টগ্রাম-কক্সবাজারসহ সারা দেশের সঙ্গে অর্থনীতি, পর্যটকদের আনাগোনাসহ নানা বিষয়ে যোগাযোগে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন ঘটবে এ অঞ্চলের মানুষের।

প্রকল্প সূত্রে জানা গেছে, সরকার তথা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকার প্রকল্প চট্টগ্রাম হয়ে দোহাজারী-কক্সবাজার-ঘুনধুম রেললাইন নির্মাণের প্রায় ৫৭ শতাংশের কাজ ইতিমধ্যে দৃশ্যমান শেষ হয়েছে। সরকারের এই অগ্রাধিকার প্রকল্পটি ২০২২ সালের শেষের দিকে শেষ হবে বলে জানিয়েছিলেন রেলপথমন্ত্রী মো. নুরুল ইসলাম সুজন। রেলপথমন্ত্রীসহ প্রকল্পের সঙ্গে যুক্ত এবং রেলওয়ের দায়িত্বশীল ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার পরিদর্শনে এসেছেন প্রকল্পের বিভিন্ন স্পটে।

প্রকল্প-সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, দোহাজারী-কক্সবাজার রেললাইন প্রকল্পের ব্যয় ধরা হয়েছে ১৮ হাজার ৩৫ কোটি টাকা। ২০১১ সালের ৩ এপ্রিল দোহাজারী-রামু-কক্সবাজার এবং রামু-ঘুনধুম পর্যন্ত মিটারগেজ রেলপথ নির্মাণকাজের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। দোহাজারী থেকে রামু পর্যন্ত ৮৮ কিমি, রামু থেকে কক্সবাজার ১২ কিমি এবং রামু থেকে ঘুনধুম পর্যন্ত ২৮ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণ হচ্ছে। এ প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে পর্যটক ও স্থানীয় জনগণের জন্য নিরাপদ, আরামদায়ক, সাশ্রয়ী যোগাযোগ ব্যবস্থার প্রবর্তন হবে। সহজে ও কম খরচে মাছ, লবণ, কাগজের কাঁচামাল, বনজ ও কৃষিজ দ্রব্য পরিবহন করা যাবে। সূত্র জানায়, ১২৮ কিমি রেলপথে স্টেশন থাকছে ৯টি। এগুলো হলো- সাতকানিয়া, লোহাগাড়া, চকরিয়া, ডুলাহাজারা, ঈদগাও, রামু, কক্সবাজার সদর, উখিয়া ও ঘুনধুম। এতে থাকবে কম্পিউটার বেইজড ইন্টারলক সিগন্যাল সিস্টেম এবং ডিজিটাল টেলিকমিউনিকেশন সিস্টেম। সাঙ্গু, মাতামুহুরী ও বাঁকখালী নদীর ওপর নির্মাণ করা হবে তিনটি বড় সেতু। এ ছাড়া এ রেলপথে নির্মিত হবে ৪৩টি ছোট সেতু, ২০১টি কালভার্ট এবং ১৪৪টি লেভেল ক্রসিং। সাতকানিয়ার কেঁওচিয়া এলাকায় তৈরি হবে একটি ফ্লাইওভার এবং রামু ও কক্সবাজার এলাকায় দুটি হাইওয়ে ক্রসিং।

সর্বশেষ খবর