সোমবার, ১৬ আগস্ট, ২০২১ ০০:০০ টা
কৃষি

নানা গুণের ননী ফলের চাষ হচ্ছে যশোরে

সাইফুল ইসলাম, যশোর

নানা গুণের ননী ফলের চাষ হচ্ছে যশোরে

জাতিসংঘ মিশনে ২০০৮ সালে আফ্রিকার কঙ্গোতে গিয়েছিলেন সেনা সদস্য খন্দকার কবীর হোসেন। সেখানেই ননী ফলের ভালো একটি জাতের সন্ধান পান তিনি। সেখানকার স্থানীয় এক বাসিন্দার কাছ থেকে দুই প্যাকেট বিস্কুটের বিনিময়ে ৫টি ননী ফল কেনেন তিনি। পরে মিশন শেষে দেশে ফিরে যশোর সদর   উপজেলার ছাতিয়ানতলা এলাকায় নিজের বাড়িতে ওই ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করেন। এর বৈজ্ঞানিক নাম ‘গ্রেভিওলা’। তবে ননী ফল নামেই বেশি পরিচিত। ক্রান্তীয় অঞ্চল তথা ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিকভাবেই গুল্মজাতীয় এ গাছটির একটি বুনো জাত জন্মায়। এর শেকড়, বাকল, পাতা, ফল প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সর্দি-কাশি, লিভারের সমস্যা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ননী ফলের রস ব্যবহার করা হয়। তবে আধুনিক গবেষণায় এই ফলের নানা গুণের কথা বেরিয়ে আসায় তা মানুষের মাঝে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। ক্যান্সারসহ বিভিন্ন সংক্রমণজনিত রোগ, আথ্রাইটিস, মধুমেহ, হাঁপানি, উচ্চরক্তচাপ, শরীরের যে কোনো ধরনের ব্যথা নিরাময়ের উপাদান আছে এতে। এই ফলে ক্যান্সার ফাইটিং নিউট্রিয়েন্ট ও টিউমার ফাইটিং উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি ভালো কাজ করে বলে জানা যাচ্ছে। ননী ফলের রস রক্ত পরিষ্কার করে ও শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। এর রসে এন্টি ফ্যাঙ্গল ও এন্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকায় পেটের সমস্যা, চর্মরোগ, স্ক্যাল্পের বিভিন্ন অস্বস্তি, চুলকানি, খুসকি কমাতে সাহায্য করে। ননী গাছে ছয় মাস বয়স থেকেই ফল আসতে শুরু করে। সারাবছরই এতে ফল ধরে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-১২, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, আয়রন, ফসফরাসসহ নানা উপাদান বিদ্যমান।

কবীর হোসেন বলেন, ছয় মাসের মধ্যেই এসব গাছে ফল ধরতে শুরু করে। কিন্তু প্রথম প্রথম এই ফল সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন কিছু জানতো না। পরে ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এই ফলের গুণাগুণ ছড়িয়ে পড়লে মানুষের মাঝে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। যশোরে এক বিঘা জমি এবং গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৫ বিঘা জমিতে তিনি ননী ফলের চাষ করেছেন। ফল এবং চারার জন্য প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ তার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন। এ জন্য তিনি একটি ফেসবুক পেজও খুলেছেন। এই পেজের মাধ্যমেই এখন দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে লোকজন ননী ফল ও চারা সংগ্রহ করছেন। কবীর হোসেন বলেন, ননী ফলের চারা ছোট-বড় ভেদে এক হাজার থেকে তিন হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া ননী ফল বিক্রি করছেন প্রতি কেজি তিন হাজার টাকা। তবে অসহায় দরিদ্র মানুষ রোগ-শোকের কারণে তার কাছে ননী ফল চাইলে তিনি তা বিনামূল্যেই প্রদান করেন।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, কবীর হোসেন তার পারিবারিক নার্সারিতে ননী ফলের পাশাপাশি দেড় শতাধিক ধরনের ঔষধি বৃক্ষের চারা তৈরি করছেন, যার বেশিরভাগই বিভিন্ন দেশ থেকে তিনি সংগ্রহ করেছেন। এসব বৃক্ষের মধ্যে রয়েছে আফ্রিকার করসল (ক্যান্সার প্রতিষেধক), সাওয়ার সপ, কোরিয়ান জিনসেং, ইনসুলিন প্ল্যান্ট, শ্বেতচন্দন, ট্যাং, সাদা লজ্জাবতী, সুইট লেমন, পিলিপিনো কালো আখ, এভোগাডো, বারাব্বা, পিস ফল, আখরোট, পিনাট বাটার, ফলসা, আফ্রিকড, ডুরিয়ান, রামবুটান, রোলেনিয়া, জয়তুন, সৌদি ত্বিন প্রভৃতি। কবীর হোসেন বলেন, ননী, জিনসেং ও ইনসুলিন প্ল্যান্টের বিষয়েই মানুষ সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখাচ্ছে।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর