টাঙ্গাইলে ‘কিলার গ্যাং’/‘হত্যাকারী দল’ নাম সংবলিত একটি প্যাডে চিঠি দিয়ে মাছ ব্যাবসায়ীর কাছে ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বিএনপির তিন নেতাসহ পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ। গত দুই দিনে টাঙ্গাইল পৌরসভার সন্তোষ এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়। গতকাল দুপুরে টাঙ্গাইল সদর থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) তানভীর আহমেদ গ্রেপ্তারের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। গ্রেপ্তাররা হচ্ছেন- টাঙ্গাইল শহর বিএনপির ৮ নম্বর ওয়ার্ডের সভাপতি গোলাম রাব্বানী, সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম মিয়া, ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের হোসেন, স্থানীয় আবদুল্লাহ আল মামুন ও সাব্বির মিয়া।
সদর থানার ওসি তানভীর আহমেদ জানান, জেলা গোয়েন্দা পুলিশের সহযোগিতায় পৃথক অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়েছে। তবে টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক ইজাজুল হক সবুজ জানান, বিএনপি নেতা-কর্মীদের ষড়যন্ত্রমূলকভাবে ফাঁসানো হয়েছে।
জানা যায়, বৃহস্পতিবার রাতে টাঙ্গাইল সদরের সন্তোষ এলাকার মাছ ব্যবসায়ী মো. আজাহারুল ইসলামের কর্মচারীর হাতে অচেনা এক লোক একটি চিঠি দিয়ে চলে যায়। সেটি শুক্রবার সকালে ওই কর্মচারী ব্যবসায়ী মো. আজাহারুল ইসলামকে দেন। চিঠিতে উল্লেখ করা হয়- ‘চিঠি পাওয়ার পর তুই যদি বিষয়টি নিয়ে কারও সঙ্গে শেয়ার করস বা আইনি প্রক্রিয়ায় যাস তাহলে তোকে কবর দেওয়ার জন্য তোর লাশ পরিবার খুঁজে না পাওয়ার ব্যবস্থা আমরা করব।’ চিঠিতে আরও উল্লেখ করা হয়- ‘মনে রাখবি প্রশাসন তোর সঙ্গে সব সময় থাকবে না। আর বাঁচতে পারবি না। সঠিক বুদ্ধিমত্তা দিয়ে সিদ্ধান্ত নিলে তুইসহ পরিবারের সবাই সুরক্ষিত থাকবে। দীর্ঘদিন ধরে মাছ ব্যবসা করে যাচ্ছিস। তোর কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী নাই। ৫ লাখ টাকা তোর কাছে কিছু না। ৩ আগস্ট রবিবার সন্ধ্যা ৭টার সময় একটি শপিং ব্যাগে করে কাগমারী মাহমুদুল হাসানের বাসার সামনে একটি গাছে ফরহাদের ছবি লাগানো আছে। সেই গাছের নিচে রেখে যাবি।’ মাছ ব্যবসায়ী মো. আজাহারুল ইসলাম জানান, তার কর্মচারী নিশার কাছে বৃহস্পতিবার রাতে অচেনা একজন লোক একটি চিঠি দেয়। সেটি শুক্রবার সকালে তার হাতে আসে। এ সময় কর্মচারী বলেন, একটি ক্লাব থেকে আপনাকে এই চিঠি দিয়ে গেছে। চিঠি খুলে পড়ে তিনি ভীত সন্ত্রস্ত হয়ে পড়েন। বিষয়টি সন্তোষ পুলিশ ফাঁড়িতে মৌখিকভাবে জানান। বিষয়টি নিয়ে তিনি ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি সদর থানায় লিখিত অভিযোগ করেন। সন্তোষ বাজার কমিটির আহ্বায়ক জুবায়ের হোসেন জানান, ব্যবসায়ী আজাহার দীর্ঘদিন ধরে মাছ ব্যবসা করছেন। হঠাৎ করে তিনি শুনতে পান তার কাছে একটি চিঠি এসেছে এবং ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেছে। এ ধরনের ঘটনা সন্তোষ এলাকায় দেশ স্বাধীন হওয়ার পর এ পর্যন্ত শুনেননি। তাই এ চিঠিতে ব্যবসায়ী মহলে এক ধরনের আতঙ্ক কাজ করছে। টাঙ্গাইলের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) এইচ এম মাহবুব রেজওয়ান সিদ্দিকী জানান, বিষয়টি জানতে পেরে তিনি সদর থানার ওসির সঙ্গে কথা বলে প্রয়োজনীয় নির্দেশনা দেন। একই সঙ্গে জেলা গোয়েন্দা পুলিশকে সংযুক্ত করে দ্রুত প্রাথমিক তদন্তের পর অভিযুক্তদের শনাক্তপূর্বক পাঁচজনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
তিন বিএনপি নেতা বহিষ্কার : ৫ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে গ্রেপ্তার বিএনপির তিন নেতাকে বহিষ্কার করেছে জেলা বিএনপি। তারা হলেন- টাঙ্গাইল শহর বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক ও ৭ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সাধারণ সম্পাদক জুবায়ের, শহর বিএনপির ধর্ম বিষয়ক সম্পাদক ও ৮ নম্বর ওয়ার্ড বিএনপির সভাপতি গোলাম রাব্বানী, শহর বিএনপির সদস্য ও ৮নং ওয়ার্ডের সাধারণ সম্পাদক শাহ আলম।
এর আগে গত শুক্রবার রাত ও গতকাল ভোরে টাঙ্গাইল পৌর এলাকার সন্তোষ থেকে ৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়। এর মধ্যে বিএনপির ৩ নেতা রয়েছে। গতকাল দুপুরে তাদের আদালতে পাঠানো হয়।