শুক্রবার, ২৪ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

বুদ্দু এসেছিল ফটো তুলতে

মির্জা মেহেদী তমাল

বুদ্দু এসেছিল ফটো তুলতে

রাজধানীতে খুন-খারাবি, ছিনতাই-ডাকাতি বেড়ে গেছে। প্রায় প্রতিদিনই কোথাও না কোথাও বড় ধরনের ডাকাতির ঘটনা ঘটছে। এ নিয়ে পুলিশ প্রশাসন চরম বিপাকে। কোনোভাবেই আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী পরিস্থিতি সামাল দিতে পারছে না। পুলিশ সদর দফতরে এ নিয়ে দফায় দফায় বৈঠক। পুলিশপ্রধান তার অধীনস্থদের সেই বৈঠকগুলোতে তুলাধুনা করছেন। তিনি একটি গোয়েন্দা প্রতিবেদন হাতে নিয়ে পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, এ মুহুর্তে বুদ্দু নামের এক ভয়ংকর সন্ত্রাসীর নেতৃত্বে এসব ঘটনা ঘটছে। বুদ্দুকে যেভাবেই হোক জীবিত অথবা মৃত হাজির করাতে হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক না করতে পারলে, সবাইকে বাসায় ফিরে যাওয়ার কথাও বলেছেন পুলিশপ্রধান। ১৯৮৫ সালের শুরুতেই ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নাজুক হলে পুলিশে চরম অস্থিরতা দেখা দেয়। প্রতিটি থানা পুলিশ যার যার মতো কাজ শুরু করে। সবার টার্গেট তখন ভয়ংকর সন্ত্রাসী বুদ্দু।

পুলিশ ও গোয়েন্দারা বুদ্দুকে গ্রেফতার করতে বিভিন্নর স্থানে অভিযান চালাচ্ছে। কিন্তু কোথাও খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না তাকে। সরকারের ভিতর থেকে চাপ পড়ছে পুলিশ সদর দফতরে। সদর দফতর থেকে সেই চাপ আসছে মাঠপর্যায়ের পুলিশ কর্মকর্তাদের ওপর। পুলিশ কর্মকর্তারা নিজ নিজ সোর্সের ওপর বিশ্বাস রেখে অভিযান চালাচ্ছে। যদিও সবই ব্যর্থ অভিযান। কিন্তু মার্চের দিকে একটি সফল অভিযান পরিচালনা করে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ। গোয়েন্দা কর্মকর্তা আকরাম হোসাইনের নেতৃত্বে ওই অভিযান পরিচালিত হয়েছিল। মার্চের দ্বিতীয় সপ্তাহের শুরু। সায়েদাবাদ বাস টার্মিনালের পাশে স্বামীবাগ   প্রধান সড়কে রুমী গ্লাস হাউস। তার পাশে রয়েছে একটি ফটো স্টুডিও। দুপুর গড়িয়ে বিকাল। সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়েছে। তখন ঢাকায় এত উঁচু ভবন তৈরি হয়নি। স্টুডিওটির সামনেই সূর্যের আলো। রুমী গ্লাস হাউসের সারি সারি দাঁড় করানো বেলজিয়ামের মোটা গ্লাসগুলোতে রিফ্লেক্ট করছে। চারপাশেই সাদা পোশাকের তরুণ ও মধ্য বয়সের কয়েক ব্যক্তি নজরদারি করছে স্টুডিওটির ওপর। এর মধ্যে এক সুন্দরী তরুণী বেশ সাজগোছ করা। সঙ্গে আছেন এক তরুণ। পরনে ব্লু রঙের জিন্সের প্যান্ট, গায়ে থাইল্যান্ডের কলারওয়ালা ক্রিম রঙের গেঞ্জি। পায়ে কেডস। সেই যুগল বেশ হাস্যোজ্জলভাবেই কথা বলতে বলতে ফটো স্টুডিওতে ঢুকে পড়ল। ওই সময়ে তরুণ-তরুণীর এক ফ্রেমে ছবি তোলার একটা সংস্কৃতি ছিল। স্টুডিওর রিসিপশনে বসা লোকটি অভ্যর্থনা জানিয়ে তাদের দুজনকে ভিতরের রুমটিতে বসিয়ে দরজাটি বন্ধ করে আবার তার আসনে ফিরে এলেন। দূর থেকেই তা পর্যবেক্ষণ করা সিভিল পোশাকের লোকগুলো দ্রুত একত্রিত হয়েই স্টুডিওতে ঢুকে পড়লেন। সবাই কোমর থেকে অস্ত্র উঁচিয়ে  নিজেদের ডিবি পুলিশ পরিচয় দিয়ে তরুণীর সঙ্গে থাকা ছেলেটিকে কোনো নড়াচড়া করারও সুযোগ না দিয়ে দুই হাতে হ্যান্ডকাফ লাগিয়ে দিলেন। চোখ বেঁধে ফেললেন কালো কাপড়ে। পিচমোড়া করে চোখে রুমাল বেঁধে স্টুডিও থেকে বের করে নিয়ে এলেন। ঢাকার সন্ত্রাসী বুদ্দুকে গ্রেফতারের পর থেকেই গোয়েন্দা পুলিশের সদস্যদের চোখেমুখে আনন্দের ঢেউ। যে শিকারের অপেক্ষায় ছিল তারা। বিগত তিন মাসে অসংখ্যবার ফাঁদ পেতেও যাকে ধরা যায়নি। সেই শিকার এখন তাদের হাতের কবজায়। সেদিনও ফাঁদ পেতে স্টুডিওর চারপাশে ওতপেতে ছিলেন, তার সফল সমাপ্তি ঘটল তরুণীর সঙ্গে থাকা স্মার্ট ছেলেটিকে আটকের মাধ্যমে। এতক্ষণ যে তরুণকে আটকের বর্ণনা দিচ্ছিলাম তিনি হলেন পুরান ঢাকার সন্ত্রাসী বুদ্দু। ছিনতাই, ডাকাতি, খুনসহ বহু অপরাধের অভিযোগে ১৯৮৫ সালের মার্চ মাসে কোনো এক বিকালে প্রেমিকার সঙ্গে স্টুডিওতে ছবি তুলতে আসা অপ্রস্তুত বুদ্দুকে আটকের মধ্যে এসি আকরাম হোসাইনের আরেকটি সফল অভিযানের সমাপ্তি ঘটে। তার কাছে আগেই খবর ছিল সন্ত্রাসী বুদ্দু তার বান্ধবীকে নিয়ে দুপুরের পর এই স্টুডিওতে ছবি তুলতে আসবে। সোর্সের পাক্কা খবরে নিশ্চিত হয়ে এ অভিযানের প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। ডিবি অফিসে ব্যাপক জিজ্ঞাসাবাদে বুদ্দু ঢাকায় ছিনতাই, খুনসহ বহু অপরাধের বর্ণনা দেয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর