সোমবার, ১৩ ডিসেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

টর্নেডোয় লণ্ডভণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের ছয় রাজ্য নিহত শতাধিক

প্রতিদিন ডেস্ক

টর্নেডোয় লণ্ডভণ্ড যুক্তরাষ্ট্রের ছয় রাজ্য নিহত শতাধিক

৩৬৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানা টর্নেডোর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি রাজ্য। এতে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে কেনটাকির ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অবকাঠামো নিশ্চিহ্ন হয়ে গেছে -এএফপি

এক দশকের মধ্যে সবচেয়ে ভয়াবহ টর্নেডোর আঘাতে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেছে যুক্তরাষ্ট্রের ছয়টি রাজ্য। গত শুক্রবার রাত থেকে শনিবার পর্যন্ত অন্তত ৩০টি টর্নেডো ৩৬৫ কিলোমিটার বেগে আঘাত হানে রাজ্যগুলোতে। টর্নেডোর আঘাতে শতাধিক ব্যক্তি নিহত হয়েছেন। সূত্র : রয়টার্স, বিবিসি।

রাজ্য ও স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, নিহতদের মধ্যে অন্তত ৭০ জন কেনটাকির। এ ছাড়া আরকানসাসে দুজন, টেনিসিতে চারজন, ইলিনয়সে ছয়জন ও মিসৌরিতে দুজন নিহত হয়েছেন। টর্নেডোগুলো মধ্য ও দক্ষিণাঞ্চলে যাত্রাপথের ২০০ মাইলের মধ্যে বাড়িঘর, ব্যবসা প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন অবকাঠামো নিশ্চিহ্ন করে দিয়ে গেছে।  কেনটাকির একটি ছোট শহরের মোমবাতি কারখানা, অগ্নিনির্বাপণ ও পুলিশ স্টেশন পুরোপুরি ধ্বংস হয়ে গেছে। ধ্বংসস্তূপ আটকে পড়া মানুষের উদ্ধারের আপ্রাণ চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন উদ্ধারকারীরা।

আরেক খবরে বলা হয়েছে, শীতের মাসগুলোয় এ ধরনের শক্তিশালী টর্নেডোকে অস্বাভাবিক বলছেন আবহাওয়াবিদরা। টর্নেডো ও অগ্নিকাণ্ডে কেনটাকিতে একটি মোমবাতির কারখানা ও একাধিক পুলিশ স্টেশন বিধ্বস্ত হওয়া ছাড়াও পাশের মিজৌরি অঙ্গরাজ্যে একটি নার্সিংহোম ধ্বংস হয়েছে। ইলিনয়ে আমাজনের গুদামঘর বিধ্বস্ত হয়ে ছয় কর্মী নিহত হয়েছেন। এবারের টর্নেডোকে কেনটাকির ইতিহাসে সবচেয়ে ভয়াবহ বলে আখ্যায়িত করেছেন গভর্নর অ্যান্ডি বেশিয়ার। তিনি জানান, মেফিল্ড শহরে মোমবাতি কারখানা থেকে ৪০ জনকে জীবিত উদ্ধার করা হয়েছে। ঘটনার সময় কারখানাটির ভিতর প্রায় ১১০ জন কর্মী ছিলেন। সংবাদ সম্মেলনে কেনটাকির গভর্নর বলেন, ‘আমার জীবনে এমন বিপর্যয় কখনো দেখিনি। এই কষ্ট ভাষায় প্রকাশ করতে পারছি না। এখানে এই কেনটাকিতে সম্ভবত ১০০ জনের বেশি মানুষ প্রাণ হারিয়েছেন।’ উদ্ধার তৎপরতায় সহায়তার জন্য ন্যাশনাল গার্ডের ১৮৯ জন সদস্য  মোতায়েনের কথা জানিয়েছেন বেশিয়ার। মূলত, মেফিল্ডের বেশির ভাগ এলাকাজুড়ে উদ্ধার তৎপরতা চালানো হচ্ছে। কেনটাকির দক্ষিণ-পশ্চিমের ছোট একটি শহর মেফিল্ড। এ শহরে ১০ হাজার মানুষের বাস। এখানেই মিলিত হয়েছে ইলিনয়, মিজৌরি ও আরাকানসাস অঙ্গরাজ্য। এদিকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমগুলোয় পোস্ট হওয়া ভিডিও ফুটেজ ও ছবিতে মেফিল্ড শহরে ইটের তৈরি ভবনগুলো মাটির সঙ্গে মিশে যেতে দেখা গেছে। বাড়িঘরের পাশে রাখা গাড়িগুলো ধ্বংসস্তূপের নিচে চাপা পড়েছে। গ্রেভস কাউন্টির ঐতিহ্যবাহী একটি গির্জা ভেঙে পড়েছে। কাছাকাছি আরেকটি গির্জার একাংশও ভেঙেছে। এ বিপর্যয়কে সম্ভবত যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় টর্নেডোর একটি বলে উল্লেখ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন। স্থানীয় সময় গত শনিবার তিনি কেনটাকিতে জাতীয় জরুরি পরিস্থিতি ঘোষণা করেন। এ কারণে ফেডারেল সরকারের তরফ থেকে তহবিল ও অন্যান্য সহযোগিতা পাবে কেনটাকি।

শক্তিশালী এই টর্নেডোতে বিপর্যস্ত সব এলাকাকে সাহায্য করার জন্য ফেডারেল সরকার সম্ভাব্য সবকিছু করবে বলে ঘোষণা দিয়েছেন জো বাইডেন। জানা গেছে, রাতে ধারাবাহিক কয়েকটি বজ্রঝড় থেকে টর্নেডোগুলোর উৎপত্তি হয়।

এর মধ্যে আরকানসের উত্তরাঞ্চলে উৎপত্তি হওয়া একটি ‘সুপার সেল’ ঝড়ও ছিল। এই ঝড়টি আরকানস থেকে মিজৌরি, টেনেসি ও কেনটাকিতে প্রবেশ করে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্রের আবহাওয়াবিদ রজার অ্যাডওয়ার্ড বলেন, ‘দুর্ভাগ্যজনকভাবে এটি এগিয়ে যাওয়ার সময় কয়েকটি প্রাণঘাতী টর্নেডো সৃষ্টি করে। এদের মধ্যে একটি সম্ভবত অনেক দূর পর্যন্ত গিয়েছে। প্রাণঘাতী টর্নেডোটি এর অংশ ছিল।’ নর্দান ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ভৌগোলিক ও বায়ুমণ্ডলীয় বিজ্ঞানের অধ্যাপক ভিক্টর জেনসিনি জানান, অস্বাভাবিক উচ্চ তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বছরের এই সময়ে এ ধরনের চরম আবহাওয়াজনিত ঘটনার পরিবেশ তৈরি করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিসের ঝড় পূর্বাভাস কেন্দ্র জানিয়েছে, ইলিনয়, কেনটাকি, টেনেসি, মিজৌরি, আরকানস ও মিসিসিপি থেকে টর্নেডো হওয়ার ৩৬টি প্রতিবেদন পেয়েছে তারা। শনিবার বিকাল পর্যন্ত কেনটাকির প্রায় ৯৯ হাজার ও টেনেসির ৭১ হাজারেরও বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎবিহীন অবস্থায় ছিলেন।

সর্বশেষ খবর