মঙ্গলবার, ১৮ জানুয়ারি, ২০২২ ০০:০০ টা
ঢাবির শিক্ষক খুন

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে নির্মাণ শ্রমিক আনারুল

গাজীপুর প্রতিনিধি

গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছে নির্মাণ শ্রমিক আনারুল

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারকে খুনের ঘটনায় গ্রেফতার নির্মাণশ্রমিক আনারুল ইসলামকে তিন দিনের রিমান্ডে নিয়ে জিজ্ঞাসাবাদে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য মিলেছে। রিমান্ড শেষে আজ তাকে আদালতে হাজির করা হচ্ছে।

গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের (জিএমপি) উপ-পুলিশ কমিশনার (অপরাধ-উত্তর) জাকির হাসান জানান, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার (৭১) নিখোঁজের তিন দিন পর ১৪ জানুয়ারি তাঁর লাশ গাজীপুর সিটি করপোরেশনের কাশিমপুর থানার দক্ষিণ পাইনশাইল এলাকার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের একটি ঝোপের ভিতর থেকে উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাঁর নির্মাণাধীন বাড়ির শ্রমিক আনারুল ইসলামকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে বৃহস্পতিবার রাতে গ্রেফতার করা হয়। তার দেওয়া তথ্যের ভিত্তিতে অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের লাশ পরদিন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য ১০ দিনের রিমান্ড চেয়ে শনিবার আদালতে পাঠানো হয়। গাজীপুরের অতিরিক্ত চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালত-২-এর বিচারক মেহেদী পাভেল সুইট তিন দিনের রিমান্ড মঞ্জুর করেন। গ্রেফতারকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য শনিবারই পুলিশ হেফাজতে নেওয়া হয়। জিজ্ঞাসাবাদকালে পুলিশের কাছে অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য দিয়েছেন আনারুল। আজ তার রিমান্ডের শেষ দিন। এদিন তাকে আদালতে হাজির করা হবে। স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি না দিলে পুনরায় রিমান্ডে নেওয়ার জন্য আদালতে আবেদন করা হতে পারে। পুলিশ ও নিহতের পরিবার জানায়, গাজীপুর সিটির দক্ষিণ পানিশাইল এলাকার মোশারফ হোসেন মৃধার বাড়ির দ্বিতীয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ভাড়ায় থাকতেন অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার। ভাড়া বাসায় থেকে তিনি একই এলাকায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক আবাসন প্রকল্পের ভিতরে নিজ প্লটে বাড়ি নির্মাণ করছিলেন। মঙ্গলবার সন্ধ্যার পর ওই নির্মাণাধীন বাড়ির কাজ পরিদর্শন শেষে ভাড়া বাসায় ফিরছিলেন সাইদা গাফ্ফার। কিছুদূর যাওয়ার পর তাঁর পার্টস থেকে টাকা ছিনিয়ে নিতে পেছন থেকে তার নাক-মুখ চেপে ধরেন তারই বাড়ির রাজমিস্ত্রির হেলপার আনারুল ইসলাম। গলায় ওড়না পেঁচিয়ে শ্বাসরোধে তাঁকে হত্যা করে তাঁর হাত থেকে ১০ হাজার টাকাসহ দুটি মোবাইল ছিনিয়ে নেন। লাশ পাশের ঝোপের ভিতর লুকিয়ে রেখে ঘটনাস্থল ত্যাগ করেন আনারুল। এ আবাসন প্রকল্পে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নেই বলে জানান তারা। এদিকে অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারের খোঁজ না পেয়ে স্বজনরা খোঁজাখুঁজি করতে থাকেন। মায়ের সন্ধান না পেয়ে মেয়ে শাহিদা আফরিন বুধবার কাশিমপুর থানায় একটি সাধারণ ডায়েরি করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে পুলিশ নির্মাণাধীন বাড়ির প্লটে গিয়ে খোঁজখবর নেয়।

তদন্তকালে আনারুলকে অনুপস্থিত পাওয়া যায়। নানা তথ্যের ভিত্তিতে ওই প্লটে কর্মরত রাজমিস্ত্রির জোগালি আনারুলকে গাইবান্ধার সাদুল্লাহপুর থেকে ১৩ জানুয়ারি রাতে আটক করা হয়। তার কাছ থেকে নিহতের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোন উদ্ধার করা হয়। এ ঘটনায় নিহতের একমাত্র ছেলে সাউদ ইফখার বিন জহির থানায় মামলা করেন। পুলিশ জানায়, অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফারকে হত্যার পর ওই রাতেই ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে গাইবান্ধার পলাশবাড়ী উপজেলার শ্বশুরবাড়ি যান আনারুল। সেখানে রাতযাপন করে পরদিন সাদুল্লাহপুরের বুজুর্গ জামালপুর গ্রামে নিজ বাড়ি গিয়ে আত্মগোপন করেন। সেখান থেকেই তাকে গ্রেফতার করা হয়। নিহতের ছেলে ব্যাংকার সাউদ ইফখার বিন জহির জানান, ২০১৬ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে অবসর গ্রহণ করেন অধ্যাপক সাইদা গাফ্ফার। তিনি পুষ্টি ও খাদ্য বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক ছিলেন। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক অধ্যাপক মৃত কিবরিয়া উল খালেক তাঁর স্বামী। তাঁর তিন মেয়ে ও এক ছেলে। দুই মেয়ে অস্ট্রেলিয়ায় থাকেন। একমাত্র ছেলে ও এক মেয়ে বাংলাদেশে থাকেন। অধ্যাপক কিবরিয়া উল খালেক ১৯৯৬ সালে হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যান।

সর্বশেষ খবর