মঙ্গলবার, ৫ জুলাই, ২০২২ ০০:০০ টা

ভাঙন দুর্ভোগে আতঙ্ক কাটছে না

বন্যাদুর্গত এলাকায় নানা সংকট, পানি কোথাও বাড়ছে কোথাও কমছে

প্রতিদিন ডেস্ক

ভাঙন দুর্ভোগে আতঙ্ক কাটছে না

কোথাও কোথাও বন্যার পানি এখনো বাড়ছে, আবার কোথাও কমছে। তবে দুর্গত এলাকায় ভাঙন, দুর্ভোগ আর আতঙ্ক অব্যাহত রয়েছে। আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো সর্বশেষ খবর-

সিলেট : গত তিন দিন সিলেটের আবহাওয়া বেশ রৌদ্রোজ্জ্বল। দীর্ঘ বন্যার পর এখন কাঠফাটা রোদ আর তাপপ্রবাহে পুড়ছে সিলেট। ধীরগতিতে নামছে পানি। যে কারণে সিলেটের বেশ কয়েক জায়গা এখনো জলাবদ্ধ। হাঁটুজল পেরিয়ে যাতায়াত করছেন মানুষ। সব মিলিয়ে বানভাসি মানুষের দুর্ভোগ কমেনি। সেইসঙ্গে বিভিন্ন স্থানে রাস্তাঘাট ভেঙে যাওয়ায় ঝুঁকি নিয়ে চলাচল করতে হচ্ছে সবাইকে।

সরেজমিন দেখা গেছে, দক্ষিণ সুরমার কয়েকটি এলাকার কোথাও হাঁটুপানি আবার কোথাও কোমরসমান পানি রয়েছে। দক্ষিণ সুরমা সরকারি কলেজ প্রাঙ্গণেও পানি দেখা গেছে। বঙ্গবীর সড়ক ও চন্ডীপুল মোড়ে জ্বালানি তেলের দুটি পাম্প পানিতে তলিয়ে থাকায় তেল সরবরাহ বন্ধ রয়েছে। সিলেট রেলওয়ে স্টেশন প্রাঙ্গণেও প্রায় হাঁটু পর্যন্ত পানি দেখা গেছে। এতে রেলস্টেশনে নামার পর গন্তব্যে যেতে যাত্রীদের দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে। অনেক যাত্রীকে মালপত্র নিয়ে ময়লা পানি মাড়িয়ে স্টেশনে প্রবেশ করতে দেখা গেছে। একইভাবে জলাবদ্ধতার দৃশ্য লক্ষ্য করা গেছে নগরীর উপশহরসহ জেলার নিম্নাঞ্চলে। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা জানান, কুশিয়ারা নদীর পানি না কমায় এলাকার পানি নামছে না। একই সঙ্গে এই এলাকার খাল, ছড়া ও বক্স কালভার্টে ময়লা-আবর্জনা জমে পানিপ্রবাহে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হওয়ায় পানি নামছে খুব ধীরে।

এদিকে বন্যাকবলিত এলাকায় রাস্তাঘাটে জমে থাকা ময়লা পানি ও আবর্জনা থেকে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। বন্যায় ভেঙে যাওয়া ক্ষতবিক্ষত রাস্তায় চলাচল করতে গিয়ে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন সংশ্লিষ্ট এলাকার বাসিন্দারা।

সিরাজগঞ্জ : যমুনা নদীর পানি বাড়তে থাকায় আতঙ্কে দিন কাটছে অরক্ষিত অঞ্চলসহ নিম্নাঞ্চলের মানুষের। নিম্নাঞ্চল ফের প্লাবিত হয়ে পড়েছে। রাস্তাঘাট তলিয়ে যাওয়ায় চলাচলে দুর্ভোগ শুরু হয়েছে। পানিবাহিত রোগ দেখা দিচ্ছে। বন্যাকবলিত এলাকার কৃষক-শ্রমিকের কাজ না থাকায় পরিবারের আর্থিক সংকট দেখা দিয়েছে। অন্যদিকে পানি বাড়ায় যমুনার অরক্ষিত অঞ্চলে ভাঙনও অব্যাহত আছে। প্রতিদিন ভাঙনে ফসলি জমিসহ বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে যাচ্ছে। মাত্র ১৫ দিনের ব্যবধানে জেলার চৌহালী, কাজিপুর ও শাহজাদপুরের অন্তত ১১ শতাধিক বসতভিটা নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। এসব পরিবারের লোকজন খোলা আকাশের নিচে মানবেতর জীবনযাপন করছেন। এসব পরিবারের পাশে ইউপি চেয়ারম্যান বা সরকারিভাবে কোনো সহায়তা পৌঁছেনি। এ ছাড়াও ফসল হারিয়ে কৃষক দিশাহারা। সব মিলিয়ে বন্যা ও ভাঙনকবলিত মানুষগুলো চরম কষ্ট ও আতঙ্কের মধ্য দিয়ে দিন পার করছেন। সিরাজগঞ্জ পানি উন্নয়ন বোর্ডের নির্বাহী প্রকৌশলী শফিকুল ইসলাম জানান, ২৪ ঘণ্টায় যমুনা নদীর পানি সিরাজগঞ্জ পয়েন্টে ৮ সেন্টিমিটার বৃদ্ধি পেয়ে বিপৎসীমার ৪৩ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। পানি দুই-একদিনের মধ্যে কমতে শুরু করবে।

কুড়িগ্রাম : কুড়িগ্রামে নদ-নদীর পানি কমে বন্যা পরিস্থিতির সার্বিক উন্নতি হয়েছে। তবে বানভাসিদের কষ্ট রয়েই গেছে। বাড়িঘর থেকে পানি নেমে যেতে শুরু করলেও অনেকেই উঁচু স্থান ও আশ্রয় কেন্দ্র থেকে নিজ বাড়িতে ফিরতে পারছেন না। এদিকে দেখা দিয়েছে নানা পানিবাহিত রোগ। খাদ্য সংকট অনেক এলাকায় দেখা দিলেও সরকারি বেসরকারি পর্যায়ে যে ত্রাণ সহায়তা দেওয়া হচ্ছে, তা পর্যাপ্ত নয় বলে জানান বানভাসিরা। অনেকেই একবার ত্রাণ পেলেও আরও প্রয়োজন বলে জানান। এ ছাড়া এক সপ্তাহ ধরে জেলার সব কটি নদ-নদীতে দেখা দিয়েছে ভাঙন। বিকালে স্থানীয় পানি উন্নয়ন বোর্ড জানায়, তিস্তা, ধরলা, দুধকুমর ও ব্রহ্মপুত্র নদের ২২টি পয়েন্টে দেখা দিয়েছে নদীভাঙন। এক সপ্তাহের ব্যবধানে তিস্তা নদীর তীব্র ভাঙনে রাজারহাট উপজেলার ঘড়িয়ালডাঙা ইউনিয়নের পাড়ামৌলা, ঘড়িয়ালডাঙা ও খিতাবখাঁ এলাকায় এবং সদর উপজেলার ধরলা নদীর ভাঙনে হলোখানা ইউনিয়নের সারডোব গ্রাম এবং উলিপুরে ব্রহ্মপুত্র নদের তীব্র ভাঙনে বজরা গ্রামে দেড় শতাধিক বাড়িঘর নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে। এ ছাড়াও আরও ঘর বাড়ি, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ও অন্যান্য স্থাপনা নদীভাঙনে হুমকিতে রয়েছে।

বগুড়া : সারিয়াকান্দিতে যমুনা নদীর পানি আবারও বাড়তে শুরু করেছে। দুশ্চিন্তায় রয়েছেন বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। কয়েক দিন আগে তারা বাড়িঘরের যাবতীয় প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে বন্যা নিয়ন্ত্রণ বেড়িবাঁধে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পানি নেমে যাওয়ায় তারা আবার জিনিসপত্র নিয়ে ঘরে এসেছিলেন। পানি বেড়ে যাওয়ার খবরে তারা আবারও দুশ্চিন্তায়। এভাবে পানি বাড়তে থাকলে পুনরায় আবারও ঘরের জিনিসপত্র এবং গবাদিপশু নিয়ে ফের উঁচু কোথাও যেতে হবে।

সারিয়াকান্দিতে দায়িত্বে থাকা গেজ রিডার পরশুরাম জানিয়েছেন, শনিবার দুপুর ১২ ঘটিকা পর্যন্ত যমুনা নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৬.৫২ মিটার যা বিপৎসীমার ২৮ সেন্টিমিটার  নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। অন্যদিকে বাঙালি নদীতে পানির উচ্চতা ছিল ১৪.৪৯ মিটার যা বিপৎসীমার ১৩৬ সেন্টিমিটার নিচ দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

লালমনিরহাট : লালমনিরহাটে তিস্তার পানি নামলেও কমেনি নদীপারের মানুষের ভোগান্তি। চরাঞ্চলের অনেক বাড়িতে এখনো জমে আছে বন্যার পানি। ভেঙেচুরে লণ্ডভণ্ড হয়ে পড়েছে পাকা সড়ক। সংযোগ সেতু ভেঙে চরের লাখো মানুষের যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন রয়েছেন। বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, তিস্তার ঢলে অসংখ্য পাকা ও কাঁচা রাস্তা ভেঙে গেছে। কোথাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে ব্রিজ-কালভার্ট। নদীতীরের অনেক বাড়িঘর বিধ্বস্ত হয়েছে। কয়েকটি এলাকার বাঁধ হয়েছে ক্ষতিগ্রস্ত। লালমনিরহাটের কালীগঞ্জ, পাটগ্রাম, হাতীবান্ধা ও সদর উপজেলার কিছু এলাকায় এখনো রয়ে গেছে বন্যার পানি।

মৌলভীবাজার : দীর্ঘস্থায়ী বন্যার কারণে মৌলভীবাজার জেলার শতাধিক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বিগত ১৬ দিন ধরে বন্ধ রয়েছে। জেলা শিক্ষা অফিসার মোহাম্মদ ফজলুর রহমান জানান, জেলায় মোট মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান রয়েছে ৩২০টি। বন্যাকবলিত হয়েছে ৪১টি। পাঠদান বন্ধ রয়েছে ৬২টিতে। আশ্রয় কেন্দ্র খোলা হয়েছে ২৯টিতে। সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত জুড়ী উপজেলায়। স্থানীয়রা জানান, জুড়ী কুলাউড়া ও বড়লেখা এলাকায় বৃষ্টি ও উজানের ঢলের পানি হাকালুকি হাওরে গিয়ে পড়ে। সেখান থেকে তা সিলেটের ফেঞ্চুগঞ্জ এলাকায় অবস্থিত কুশিয়ারা নদী দিয়ে নিষ্কাশিত হয়। কিন্তু কুশিয়ারা নদীতে এখন পানি বেশি। এ কারণে হাওরের পানি ধীরগতিতে কমছে এবং দুই উপজেলায় বন্যা প্লাবিত এলাকাগুলো থেকে পানি নামছে না।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর