মঙ্গলবার, ৬ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড়ছে মানুষ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড়ছে মানুষ

গ্রাম ছেড়ে শহরে ভিড়ছে মানুষ। অর্থনৈতিক উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশে দ্রুত গতিতে নগরায়ণ ঘটছে। বিশ্বব্যাংকের এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ২০০০ সালে বাংলাদেশের শহরাঞ্চলে বসবাসকারী জনসংখ্যার হার ছিল ২৪ শতাংশ, এটি ২০২০ সালে বেড়ে ৩৮ শতাংশে উন্নীত হয়েছে। ২০৫০ সালের মধ্যে আনুমানিক ৬০ শতাংশ জনসংখ্যা বসবাস করবে নগর এলাকায়।

দক্ষিণ এশিয়ার জলবায়ু ও উন্নয়নবিষয়ক প্রতিবেদন (অক্টোবর, ২০২২)-এ বাংলাদেশ বিষয়ে এ তথ্য দিয়েছে বিশ্বব্যাংক। গ্রাম থেকে মানুষের শহরে আসার পেছনে জলবায়ু পরিবর্তনের অভিঘাতকে প্রধান কারণ হিসেবে দেখিয়েছে ওয়াশিংটনভিত্তিক এই দাতা সংস্থাটি। বিশ্বব্যাংক বলছে, করোনা মহামারির আগে গত এক দশকে অর্ধেকেরও বেশি দরিদ্র পরিবার শহরে বসবাসের জন্য অভিবাসিত হয়েছে। দেশের প্রধান দুটি শহর ঢাকা এবং চট্টগ্রামে দরিদ্র মানুষের অভিবাসন বেড়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত ওই প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গ্রাম ছেড়ে শহরে আসা মানুষ প্রবৃদ্ধি অর্জন, পণ্য এবং সেবা খাতের উৎপাদন বাড়াতে সহায়তা করছে। তবে স্থানীয় সরকারের সীমিত সক্ষমতার কারণে শহরে এসব বাড়তি মানুষের জন্য প্রয়োজনীয় সেবা ও অবকাঠামো সুবিধা নিশ্চিত করা যায়নি। ফলে শহরগুলোতে ব্যাপক যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। পানি, বায়ুদূষণসহ পরিবেশের অবনতির পাশাপাশি সংক্রামক ও জীবাণুবাহিত রোগের প্রকোপ বেড়ে ভয়াবহ স্বাস্থ্যঝুঁকি তৈরি করছে। এ বিষয়ে আন্তর্জাতিক পানি ও পরিবেশ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক আইনুন নিশাত বলেন, বাংলাদেশে যা ঘটেছে বিশ্বব্যাংক তাই বলেছে, এটা নতুন কিছু নয়। তিনি বলেন, বাংলাদেশের উপকূলীয় অঞ্চল-যেখানে কৃষি উৎপাদন কম হয়, সেসব এলাকা থেকে মানুষজন জীবিকার উদ্দেশ্যে শহরে ভিড় করছে। এ ছাড়া দুর্যোগপ্রবণ এলাকা থেকে কর্মসংস্থানের লক্ষ্যেও মানুষ শহরমুখী হচ্ছে। ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের এই ইমেরিটাস প্রফেসর বলেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যে দেশগুলো বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে, তার মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম প্রধান  দেশ। কাজেই অভিযোজনের কাজে সক্ষমতা অর্জন অত্যন্ত জরুরি। এ কাজে জাতীয় মহাপরিকল্পনা তৈরি হয়েছে। আমরা দুর্যোগ ঝুঁকিতে থাকা দরিদ্রপ্রবণ অঞ্চলগুলোতে কর্মসংস্থান সৃষ্টির লক্ষ্যে ১৩০টি প্রকল্প গ্রহণের সুপারিশ করেছি। এসব প্রকল্প বাস্তবায়ন হলে সংশ্লিষ্ট এলাকায় কর্মসংস্থান সৃষ্টি হবে, ফলে শহরমুখী মানুষের অভিবাসন কমবে। 

দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় বিনিয়োগ বাড়ানোর পরামর্শ : একই ধরনের পরামর্শ এসেছে বিশ্বব্যাংকের প্রতিবেদনেও। বলা হয়েছে, জলবায়ু পরিবর্তন বাংলাদেশের ঝুঁকিপ্রবণ এলাকাকেন্দ্রিক প্রভাবসহ বেশির ভাগ দরিদ্র ও ঝুঁকিতে থাকা মানুষের ওপর বৈরীভাবে তীব্র প্রভাব ফেলতে পারে। তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা বৃদ্ধিসহ পরিবেশের ক্ষয় এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগের ক্ষয়ক্ষতি আরও বাড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারের সামনে টেকসই ও সমতাভিত্তিক প্রবৃদ্ধি নিশ্চিত করা একটি উন্নয়ন চ্যালেঞ্জ। এ জন্য বরেন্দ্র এলাকা, উপকূল, হাওর ও পার্বত্য এলাকার মতো হটস্পট এবং বিশেষত তিনটি এলাকা- যথাক্রমে ময়মনসিংহের পশ্চিমের ও রংপুরের পূর্বের উপজেলাগুলো এবং খুলনার দক্ষিণ অংশ উচ্চ দারিদ্র্য হার এবং ঘন ঘন প্রাকৃতিক দুর্যোগপ্রবণ এলাকায় সহিষ্ণুতা বাড়াতে বিনিয়োগে অগ্রাধিকার দেওয়া উচিত।

সর্বশেষ খবর