বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা
বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন ট্যারিফ কমিশনের

ইস্পাত শিল্পের সুরক্ষায় উচ্চ শুল্ক ভোগাচ্ছে ভোক্তাকে

নিজস্ব প্রতিবেদক

ইস্পাত শিল্পের সুরক্ষায় উচ্চ শুল্ক ভোগাচ্ছে ভোক্তাকে

আন্তর্জাতিক বাজারে চার মাস ধরে স্ক্র্যাপের দাম কমলেও স্থানীয় বাজারে এর প্রভাব নেই বলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে পাঠানো এক প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছে বাংলাদেশ ট্রেড অ্যান্ড ট্যারিফ কমিশন।

প্রতিষ্ঠানটি বলছে, রড তৈরির কাঁচামাল স্ক্র্যাপের মূল্য আন্তর্জাতিক বাজারে ধারবাহিকভাবে কমছে। ডলারের দামও এখন স্থিতিশীল রয়েছে। এ অবস্থায় আন্তর্জাতিক বাজার মনিটরিং করে দেশের বাজারে রডের দাম সমন্বয়ের পরামর্শ দিয়েছে ট্যারিফ কমিশন।

সূত্র জানায়, গত ৩০ আগস্ট তারিখে বাণিজ্যমন্ত্রীর সভাপতিত্বে মন্ত্রণালয়ে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত একটি সভা হয়। এই সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী প্রতিবেদনটি তৈরি করে ট্যারিফ কমিশন। দেশের ইস্পাত শিল্পের সুরক্ষায়

উচ্চ শুল্কের বিষয়টি তুলে ধরে ট্যারিফ কমিশন বলছে, স্থানীয় বাজারে রডের দাম না কমায় ভোক্তারা  ভোগান্তিতে পড়ছে।

কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়, গত মে মাসে প্রতি মে. টন স্ক্র্যাপের গড় আমদানি মূল্য ছিল ৫৯০ দশমিক ৭৫ ইউএস ডলার। যেটা সেপ্টেম্বর মাসে কমে দাঁড়িয়েছে ৫২১ দশমিক ২৯ ডলারে। অর্থাৎ চার মাসের ব্যবধানে আন্তর্জাতিক বাজারে গড় আমদানি মূল্য ১১ দশমিক ৫ শতাংশ কমেছে।

শুধু কাঁচামালই নয়, চার মাস আগে আমদানি ব্যয় পরিশোধে ডলারপ্রতি বিনিময় হার ছিল ১০৮-১১২ টাকা, যা বর্তমানে ১০১-১০৫ টাকায় নেমে এসেছে। এসব বিষয় বিবেচনায় নিলে বর্তমানে এম এস রডের দাম কমানো সম্ভব বলে মনে করছে কমিশন। টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে ৬০ গ্রেডের প্রতি মে. টন রড স্থানীয় মার্কেটে ৮৫ হাজার থেকে ৯৩ হাজার ৫০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। এটি গতবারের তুলনায় প্রায় ১২ দশমিক ৫ শতাংশ বেশি। গত বছর এই সময়ে ৬০ গ্রেড রড প্রতি টনের দাম ছিল ৮১ হাজার ৫০০ টাকা। সংশ্লিষ্টদের মতে, আন্তর্জাতিক বাজারের দাম সমন্বয় করলে স্থানীয় বাজারে রডের বর্তমান দাম অন্তত ৭ দশমিক ৫ শতাংশ মূল্য কমিয়ে আনা সম্ভব। দেশে বর্তমানে প্রতি বছর এম এস রডের চাহিদা ৭০ লাখ মে. টন। এর বিপরীতে স্থানীয় উৎপাদন ক্ষমতা ৯০ লাখ মে. টন। স্থানীয় এই উৎপাদন ক্ষমতার ৫০ শতাংশ দেশের কয়েকটি বড় মিল পূরণ করে থাকে।

এদিকে ট্যারিফ কমিশনের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, রড উৎপাদনের মধ্যবর্তী কাঁচামাল বিলেট আমদানিতে ৪৪ শতাংশ শুল্ক ও প্রতি মেট্রিক টনে ৫০০ টাকা অগ্রিম আয়কর রয়েছে। সবমিলিয়ে রড আমদানির বিপরীতে ৮৯ দশমিক ৩২ শতাংশ শুল্ক আরোপ করে স্থানীয় শিল্পকে সুরক্ষা দেওয়া হয়েছে।

অপরদিকে স্ক্র্যাপ আমদানিতে প্রতি মেট্রিক টনে কাস্টমস ডিউটি স্পেসিফিক শুল্ক ১৫০০ টাকা এবং অগ্রিম আয়কর রয়েছে ৫০০ টাকা। পাশাপাশি রডের বিক্রয় পর্যায়ে সর্বনিম্ন আয়কর হার ২ শতাংশ। এই কাঁচামালের অগ্রিম আয়কর এবং বিক্রয় পর্যায়ের আয়কর হার সমন্বয় করা হয় না। এ কারণে স্ক্র্যাপ আমদানিতে অগ্রিম আয়কর ৫০০ টাকা থেকে কমিয়ে ৩০০ টাকা এবং বিক্রয় পর্যায়ে ২ শতাংশ কর কমিয়ে ১ শতাংশ করার সুপারিশ করেছে কমিশন। একই সঙ্গে নভেম্বরে কম মূল্যের যেসব কাঁচামাল দেশে প্রবেশ করবে সেগুলোর মূল্য সমন্বয় হচ্ছে কি না তা উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানের বাজারমূল্য পর্যবেক্ষণ করারও সুপারিশ করা হয়েছে।

এ ছাড়া স্থানীয় উৎপাদন স্থিতিশীল রাখার জন্য গ্যাস বিদ্যুতের সরবরাহ ঠিক রাখা, উৎপাদনকারীদের বাজারজাতকৃত পণ্যের মূল্যের হ্রাস বৃদ্ধির পূর্বে সরকারকে জানানো বাধ্যতামূলক করা এবং কাঁচামালের মূল্য বিবেচনায় উৎপাদন ব্যয় কমিয়ে আনার বিষয়ে তদারকির সুপারিশও করেছে কমিশন।

সর্বশেষ খবর