বৃহস্পতিবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

যুদ্ধ তহবিল খোলার আহ্বান ইয়াহিয়ার

নিজস্ব প্রতিবেদক

যুদ্ধ তহবিল খোলার আহ্বান ইয়াহিয়ার

আজ ৮ ডিসেম্বর। ১৯৭১-এর এই দিনে পাকিস্তানি বাহিনী বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে সম্পূর্ণভাবে অবরুদ্ধ হয়ে পড়ে। যৌথবাহিনীর আক্রমণে তাদের জানমাল ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বন্ধ হয়ে যায় খাবার, অস্ত্রসহ সব ধরনের যুদ্ধ সরঞ্জাম সরবরাহ। এদিন পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান নাগরিকদের যুদ্ধ তহবিল খোলার আহ্বান জানিয়ে বলেন, নাগরিকদের বেতনের একটি অংশ এখন থেকে প্রতিরক্ষা তহবিলে দিতে হবে।

এদিকে ভারতীয় সেনাবাহিনীর প্রধান জেনারেল মানেকশ বিভিন্ন ভাষায় হানাদার বাহিনীকে আত্মসমর্পণের আহ্বান জানিয়ে আকাশ থেকে লিফলেট ছড়িয়ে দেন। তাতে বলা হয়, আত্মসমর্পণ করলে তাদের প্রতি জেনেভা কনভেনশনের রীতি অনুযায়ী সম্মানজনক ব্যবহার করা হবে। কিন্তু পাক সামরিক শাসকরা কিছুতেই আত্মসমর্পণের দিকে না গিয়ে সর্বোচ্চ শক্তি দিয়ে যুদ্ধ চালিয়ে যেতে বাংলাদেশে অবস্থানরত সেনা সদস্যদের নির্দেশ দেয়। বাংলাদেশের বিভিন্ন স্থানে যুদ্ধের তীব্রতা বাড়তে থাকে। প্রতি ক্ষেত্রে হানাদার বাহিনীকে একের পর এক পরাজিত করতে থাকে মুক্তিবাহিনী। হানাদার বাহিনীর বিমানবন্দরের ঘাঁটিতে মুক্তিসেনারা আর্টিলারি আক্রমণ চালিয়ে শেষ রাতের দিকে তাদের আত্মসমর্পণ করাতে সক্ষম হয়। তবে রাতব্যাপী যুদ্ধে ২৬ মুক্তিযোদ্ধা শহীদ হন।

এদিন ব্রাহ্মণবাড়িয়া ও সরাইল হানাদারমুক্ত হয়। ৭ ডিসেম্বর রাতের আঁধারে পাকিস্তানি বাহিনীর সদস্যরা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহর ছেড়ে আশুগঞ্জের দিকে পালিয়ে গেলে ৮ ডিসেম্বর বিনা বাধায় বীর মুক্তিযোদ্ধারা ব্রাহ্মণবাড়িয়া শহরে প্রবেশ করে স্বাধীনতার বিজয় পতাকা উত্তোলন করেন। পালিয়ে যাওয়ার সময় পাকবাহিনীর সদস্যরা কলেজ হোস্টেল, অন্নদা স্কুল বোডিং, বাজার, গুদামসহ বিভিন্ন স্থানে অগ্নিসংযোগ করে। এ ছাড়া ৬ ডিসেম্বর ব্রাহ্মণবাড়িয়া কলেজের অধ্যাপক কে এম লুৎফুর রহমানসহ কারাগারে আটক থাকা অর্ধশত বুদ্ধিজীবী ও সাধারণ মানুষকে চোখ বেঁধে শহরের কুরুলিয়া খালের পাড়ে নিয়ে নির্মমভাবে হত্যা করে। মুক্তিযুদ্ধের এই দিনে মুক্ত হয় পটুয়াখালী, কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ও মিরপুর, চট্টগ্রামের মিরসরাই, কুমিল্লা, চাঁদপুর, পিরোজপুরসহ বিভিন্ন এলাকা।

এদিন মুজিবনগর থেকে দেওয়া দেওয়া এক বেতার ভাষণে প্রবাসী বাংলাদেশ সরকারের প্রধানমন্ত্রী তাজউদ্দীন আহমদ জাতির উদ্দেশে বলেন, ‘স্বাধীন ও সার্বভৌম বাংলাদেশ এখন একটি প্রতিষ্ঠিত সত্য। পাকিস্তানি হানাদাররা এখন প্রাণ বাঁচাতে পালাচ্ছে। বাংলাদেশে পাকিস্তানিদের পরাজয় এখন কেবল সময়ের অপেক্ষা। আজ আমাদের সবাইকে একসঙ্গে দাঁড়িয়ে শত্রুর ওপর শেষ আঘাত হানতে হবে এবং বাংলাদেশের মাটিতে তাদের কবর রচনা করতে হবে।’ একই সঙ্গে তাজউদ্দীন আহমদ নিরাপত্তা পরিষদে ভেটো দেওয়ার জন্য সোভিয়েত ইউনিয়নের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানান।

৮ ডিসেম্বর কলকাতায় পশ্চিমবঙ্গবিষয়ক কেন্দ্রীয় মন্ত্রী সিদ্ধার্থশঙ্কর রায় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে বলেন, ‘আগামী তিন দিনের মধ্যেই বাংলাদেশের ভেতরে যুদ্ধ শেষ হয়ে যাবে। তবে পশ্চিম রণাঙ্গনে আরও কয়েকদিন যুদ্ধ চলবে। বাংলাদেশের অভ্যন্তর থেকে পশ্চিম পাকিস্তানি সেনাবাহিনী সম্পূর্ণ বিতাড়িত। আমি জাতিসংঘ বুঝি না। আমাদের নেত্রী ইন্দিরা গান্ধী না বলা পর্যন্ত ভারতীয় সেনারা এগিয়ে যাবে। নিক্সন কিংবা ইয়াহিয়া তাদের গতিরোধ করতে পারবে না।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর