শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছর

জয়শ্রী ভাদুড়ী

ডেঙ্গুতে সর্বোচ্চ মৃত্যুর বছর

করোনাভাইরাস মহামারির প্রকোপ কমে এলেও ডেঙ্গুজ্বরে কেঁপেছে দেশ। দেশে ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগী শনাক্তের ইতিহাসে এ বছর সর্বোচ্চ মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। গতকাল পর্যন্ত ডেঙ্গুজ্বরে মারা গেছেন ২৮১ জন। আক্রান্ত হয়ে সারা দেশের হাসপাতালে এ বছর ভর্তি হয়েছেন ৬২ হাজার ২৫৬ জন। ঢাকার পর এ বছর সবচেয়ে বেশি কক্সবাজারে ডেঙ্গুতে মৃত্যুর ঘটনা ঘটেছে। জুনে বছরের প্রথম একজন মারা যান ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে। জুলাইয়ে মারা যান নয়জন, আগস্টে ১১, সেপ্টেম্বরে ৩৪, অক্টোবরে ৮৬, নভেম্বরে ১১৩ এবং ডিসেম্বরে মারা গেছেন ২৭ জন। এডিস মশার কামড়ে ঝড়েছে প্রাণ। হাসপাতালে প্রতিদিনই ভেঙেছে রোগী ভর্তির রেকর্ড। রোগীর চাপে রাজধানীর হাসপাতালগুলোতে ছিল ঠাঁই নেই ঠাঁই নেই অবস্থা। অন্যান্য বছর ডেঙ্গু রোগী রাজধানীতে বেশি দেখা যায়। এ বছর প্রায় সব জেলাতেই ছড়িয়ে পড়েছে ডেঙ্গুজ্বর। ঢাকার বাইরের হাসপাতাল থেকে সংকটাপন্ন রোগী রেফার্ড হয়ে ঢাকার হাসপাতালে আসায় চাপ ছিল কয়েক গুণ বেশি। এ বছর আক্রান্তের তুলনায় মৃত্যু বেশি হওয়ায় দুশ্চিন্তার ভাঁজ ছিল চিকিৎসকদের কপালে। রোগী ম্যানেজমেন্টে চিকিৎসা গাইডলাইন আপডেট করেছে স্বাস্থ্য অধিদফতর। এর সঙ্গে চিকিৎসকদের সুবিধায় প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে তৈরি করা হয়েছে পকেট গাইডলাইন। 

ভবিষ্যতের দিকনির্দেশনা দিয়ে ইমেরিটাস অধ্যাপক মেডিসিন বিশেষজ্ঞ ডা এ বি এম আবদুল্লাহ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেঙ্গু আক্রান্ত প্রতিরোধে এডিস মশার বংশবিস্তার নির্মূলে নজর দিতে হবে। মশা বাড়লেই রোগী বাড়বে। স্বচ্ছ পানিতে বেড়ে ওঠে প্রাণঘাতী এই মশা। প্রাণহানি ঠেকাতে সিটি করপোরেশন, পৌরসভাকে বছরব্যাপী কাজ করতে হবে। শুধু মৌসুম দেখে মশা তাড়ালে চলবে না। এর পাশাপাশি নগরবাসীকেও সচেতন হতে হবে। কারণ বাসাবাড়িতে জমে থাকা পানি মশার বংশবিস্তারের অন্যতম উৎস।’

জুলাই-সেপ্টেম্বর ডেঙ্গুর মৌসুম হলেও এখন সারা বছরই মানুষ ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হচ্ছে। তাই মৌসুমভিত্তিক মশক নিধনের কার্যকারিতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। এ ব্যাপারে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক কীটতত্ত্ববিদ ড. কবিরুল বাশার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, সরকারি হিসাব মতে বাংলাদেশের ইতিহাসের সবচাইতে বেশি মানুষ ডেঙ্গুতে মারা গেছে এ বছর। ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নেওয়া রোগীর সংখ্যা ও সর্বোচ্চ দ্বিতীয়। নতুন করে অনেক জেলায় ডেঙ্গু বিস্তৃত হয়েছে। ডেঙ্গু এবং এর বাহক মশা এখন বাংলাদেশের ৬৪টি জেলায় ছড়িয়ে পড়েছে। ডেঙ্গুর মৌসুমও পরিবর্তিত হয়েছে, যা অন্য বছরের মতো নয়। ডেঙ্গু ভবিষ্যতে বাংলাদেশে আর মৌসুমি রোগ হিসেবে থাকবে না। তাই ডেঙ্গু নিয়ন্ত্রণ ব্যবস্থা বছরব্যাপী চালাতে হবে। তিনি আরও বলেন, ডেঙ্গু সমস্যা সমাধানের জন্য বাংলাদেশের কীটতত্ত্ববিদদের পরামর্শ অনুযায়ী সমন্বিত মশক ব্যবস্থাপনার বিজ্ঞানভিত্তিক প্রয়োগ করা প্রয়োজন। কীটনাশকের মান ও এর কার্যকারিতা যাচাই করে ক্রয় ও ব্যবহার করা উচিত। কীটনাশকের পাশাপাশি মশার প্রজননস্থল পরিষ্কার ও জীবজ নিয়ন্ত্রণ, জলাশয়ে মশাখেকো গাপ্পি মাছের ব্যবহার ও জনগণকে মশা নিয়ন্ত্রণে সম্পৃক্ত করা প্রয়োজন।

সর্বশেষ খবর