শুক্রবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০২২ ০০:০০ টা

তৃতীয়-চতুর্থ শ্রেণির সব নিয়োগ এক পরীক্ষায়

সহজ হচ্ছে সরকারি কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া

উবায়দুল্লাহ বাদল

সরকারি দফতর ও সংস্থাগুলোর ১৩ থেকে ২০ গ্রেডে (সাবেক তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি) বেতনক্রমের কর্মচারী নিয়োগ প্রক্রিয়া আরও সহজ করতে যাচ্ছে সরকার। এসব পদে বারবার নিয়োগ পরীক্ষা না নিয়ে একটি পরীক্ষার মাধ্যমে তৈরি করা হবে কর্মচারী নিয়োগ প্যানেল। সেখান থেকে মেধাক্রম অনুযায়ী বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থাগুলোর চাহিদামতো লোকবল নিয়োগ দেওয়া হবে। বর্তমানে পিএসসির অধীনে বিসিএস পরীক্ষায় উত্তীর্ণ অপেক্ষমাণ প্রার্থীদের মধ্য থেকে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়, দফতর ও সংস্থায় নন-ক্যাডার পদে নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। একই আদলে সরকারি দফতরগুলোর তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণি পদে নিয়োগে প্যানেল পদ সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। এ লক্ষ্যে সম্প্রতি জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিবকে (বিধি) আহ্বায়ক করে সাত সদস্যের কমিটি গঠন করেছে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। আগামী এক মাসের মধ্যে এ বিষয়ে সুপারিশ দিতে বলা হয়েছে কমিটিকে।

৮ ডিসেম্বর প্রকাশ করা ‘সরকারি দফতর, স্বায়ত্তশাসিত, আধা-স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান এবং বিভিন্ন করপোরেশনের চাকরিতে ১৩-২০ গ্রেড পদে কর্মচারী নিয়োগ প্যানেল সংরক্ষণ-সংক্রান্ত বিষয়টি পরীক্ষা-নিরীক্ষাপূর্বক সুপারিশ প্রণয়নের লক্ষ্যে’ গঠিত কমিটির প্রধান ছিলেন জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব আবুল কাশেম মো. মহিউদ্দিন। তিনি ২২ ডিসেম্বর পদোন্নতি পেয়ে আইএমইডির সচিব হয়েছেন। কমিটির সদস্য সচিব হয়েছেন একই অনুবিভাগের উপসচিব ড. ফরিদুর রহমান। এ ছাড়া কমিটিতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, অর্থ বিভাগ, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়, লেজিসলেটিভ বিভাগ ও পিএসসির যুগ্ম-সচিব মর্যাদার কর্মকর্তাদের সদস্য হিসেবে রাখা হয়েছে। তবে কমিটি চাইলে যে কোনো বিশেষজ্ঞ ব্যক্তিকে সদস্য হিসেবে নিতে পারবে। কমিটির জন্য নির্ধারিত কার্যপরিধিতে বাংলাদেশ কর্ম কমিশনের (পিএসসি) আওতাবহির্ভূত বেতন গ্রেড ১৩ থেকে ২০ পর্যন্ত পদে নিয়োগের লক্ষ্যে অপেক্ষমাণ তালিকা প্রণয়ন-সংক্রান্ত বিভিন্ন দিক পর্যালোচনা করতে বলা হয়েছে। একই সঙ্গে বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগ থেকে প্রাপ্ত তথ্যও পর্যালোচনা করবে কমিটি।জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন পদ্ধতিতে সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ বিষয়ে জটিলতা কমানো যাবে। নিযুক্ত কর্মচারীদের কারও চাকরি চলে গেলে, কেউ ভিন্ন চাকরি বা পেশায় চলে গেলে দ্রুত শূূন্যস্থান পূরণ করা যাবে। দীর্ঘদিন অপেক্ষা করতে হবে না। তবে প্রস্তাবিত পদ্ধতির কিছু জটিলতাও রয়েছে বলে জানিয়েছেন জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এ পদ্ধতি কার্যকর করতে হলে একটি নির্দিষ্ট বিধিমালা করতে হবে। পাশাপাশি কাজের ধরন অনুযায়ী গ্রুপভিত্তিক একাধিক নিয়োগ প্যানেল এবং পিএসসির আদলে আলাদা নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ গঠন করতে হবে। স্ট্যাটিসস্টিকস অব সিভিল অফিসার অ্যান্ড স্টাফস ২০২১-এর তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে বেসামরিক প্রশাসনে সরকারি কর্মচারীর পদ রয়েছে ১৯ লাখ ১৩ হাজার ৫৫২টি। এসব পদের বেশির ভাগই তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির। এখন তৃতীয় শ্রেণির কর্মচারী ৯ লাখ ৫৭ হাজার ৯৬৭ জন। তারা মোট সরকারি কর্মচারীর ৬২ শতাংশের বেশি। চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারীর সংখ্যা ২ লাখ ৩১ হাজার ৯২, যা মোট সরকারি কর্মচারীর ১৫ শতাংশ। সরকারি কর্মচারীদের ২০ লাখের মধ্যে তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী প্রায় ১২ লাখ। এত বিশালসংখ্যক কর্মচারী নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারের পক্ষ থেকে এমন উদ্যোগ অনেক আগেই প্রত্যাশিত ছিল বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে জনপ্রশাসন বিশেষজ্ঞ ও প্রশাসন-বিষয়ক বহু গ্রন্থ প্রণেতা মো. ফিরোজ মিয়া গতকাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘সরকারের এ উদ্যোগ বাস্তবায়ন করতে হলে বেশ কিছু জটিলতার সমাধান করতে হবে। প্রথমেই এ-সংক্রান্ত বিধিমালা প্রণয়ন করতে হবে। সেখানে কাজের ধরন অনুযায়ী একাধিক গ্রুপভিত্তিক প্যানেল তৈরি করতে হবে। একই পদের হলেও কাস্টমস, ইনকাম ট্যাক্সসহ গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে নিয়োগের চাহিদা বেশি। কম গুরুত্বপূর্ণ দফতরগুলোতে অনেকে যেতে চাইবেন না। সে ক্ষেত্রে কার ওপর কার প্রাধান্য থাকবে। কোনো কোনো দফতরে বিজ্ঞানের বা বাণিজ্যের ব্যাকগ্রাউন্ডসম্পন্ন লোকবল দরকার। সে ক্ষেত্রে মানবিক বিভাগের লোকবল মেধা তালিকায় এগিয়ে থাকলে তার কী হবে? এ ছাড়া লাখ লাখ লোক নিয়োগ দেওয়ার জন্য আলাদা একটি নিয়োগকারী কর্তৃপক্ষ অথবা পিএসসির অধীনে আরও একটি আলাদা উইং গঠন করা যেতে পারে, যারা শুধু ১৩ থেকে ২০তম গ্রেডের বেতনভুক্ত কর্মচারী নিয়োগ নিয়ে কাজ করবে।’

সর্বশেষ খবর