রবিবার, ৮ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

শৈত্যপ্রবাহের কবলে দেশের ১৭ জেলা, সর্বনিম্ন চুয়াডাঙ্গায় ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস, ঢাকায় ১১.৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

শীতে বিপর্যস্ত জনজীবন

শৈত্যপ্রবাহের কবলে দেশের ১৭ জেলা। দেশব্যাপী বেড়েছে শীত ও কুয়াশার দাপট। ভরদুপুরেও মিলছে না রোদের দেখা। দিনের অল্প যেটুকু সময় কুয়াশা ভেঙে সূর্যের দেখা পাওয়া যায়, তার বাইরে সারা দিনই গরম কাপড় গায়ে চাপিয়ে থাকতে হচ্ছে।

কুয়াশার সঙ্গে উত্তরের হিম বাতাসে নাকাল হতে হচ্ছে খেটে খাওয়া মানুষকে। হাসপাতালে বেড়েছে ঠান্ডা রোগীর ভিড়। সকাল সকাল কাঁপতে কাঁপতে স্কুলমুখী হচ্ছে স্কুল শিক্ষার্থীরা। নগরীর শ্রমজীবী আর পেশাজীবীরাও গায়ে মোটা কাপড় জড়িয়ে ছুটছেন গন্তব্যে। গতকাল রাজধানী ঢাকায় এ মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। এ ছাড়া সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা গতকাল চুয়াডাঙ্গাতে ছিল ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। আপাতত দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আজ থেকেই দিনের কুয়াশা অনেকটা কমে যাবে। তবে রাতের কুয়াশা থাকবে। কিন্তু আজ থেকে তাপমাত্রা একটু বাড়তির দিকে থাকলেও ১০ অথবা ১১ জানুয়ারি তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমতে থাকবে। এক্ষেত্রে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নামতে পারে। এদিকে দেশের ‘ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৭টি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ আছে। শনিবার সারা দেশের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা চুয়াডাঙ্গাতে ৮.৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস এবং ঢাকাতে মৌসুমের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ১১.৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়েছে। আপাতত দিনের তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাচ্ছে। গতকাল আবহাওয়াবিদ মো. ওমর ফারুক স্বাক্ষরিত আবহাওয়ার পূর্বাভাস সংক্রান্ত এক তথ্য বিবরণী থেকে এ তথ্য জানা গেছে। শৈত্যপ্রবাহের বিষয়ে তিনি জানিয়েছেন, ‘ঢাকা, খুলনা, রংপুর ও রাজশাহী বিভাগের ১৭টি জেলায় শৈত্যপ্রবাহ আছে। ফরিদপুর, মাদারীপুর, কিশোরগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, রাজশাহী, ঈশ্বরদী, বগুড়া, নওগাঁ, নাটোর, দিনাজপুর, নীলফামারী, পঞ্চগড়, সাতক্ষীরা, যশোর, চুয়াডাঙ্গা, কুষ্টিয়া এবং বরিশালের ওপর দিয়ে শৈত্যপ্রবাহ বয়ে যাচ্ছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘আপাতত দিনের তাপমাত্রা বাড়বে। এর ফলে কুয়াশার প্রভাব কিছুটা কমবে।

আবহাওয়া অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, আজ থেকেই দিনের কুয়াশা অনেকটা কমে যাবে। তবে রাতের কুয়াশা থাকবে। মূলত আজ থেকে তাপমাত্রা একটু বাড়তির দিকে থাকলেও ১০ অথবা ১১ জানুয়ারি তাপমাত্রা ব্যাপকভাবে কমতে থাকবে। তার মানে সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৬ থেকে ৮ ডিগ্রিতে নামতে পারে।

আমাদের নিজস্ব প্রতিবেদক ও প্রতিনিধিদের পাঠানো খবর-

মৃদু শৈতপ্রবাহের প্রভাবে চুয়াডাঙ্গায় একটানা তীব্র শীত অনুভূত হচ্ছে। সঙ্গে ঘন কুয়াশা। একবেলা সূর্র্যের দেখা মিলছে ক্ষীণভাবে। তাতে নেই কোনো উত্তাপ। ফলে দুর্ভোগে পড়ছে খেটে খাওয়া মানুষেরা। শনিবার সকাল ৯টায় জেলার তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয়েছে ৮ দশমিক ৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এ অবস্থার কারণে দিনব্যাপী কনকনে শীত অনুভূত হচ্ছে। এতে বিশেষ প্রয়োজন ছাড়া ঘরের বাইরে আসছে না সাধারণ মানুষেরা। ঠাকুরগাঁওয়ে রাতে শীতের সঙ্গে কুয়াশা, আর দিনের অর্ধেকটা সময় দেখা নেই সূর্যের। কুয়াশার সঙ্গে বইছে মৃদু শৈত্যপ্রবাহ। বিপাকে পড়েছেন বেশির ভাগ খেটে খাওয়া মানুষ। টানা কয়েক দিনের হিমেল বাতাসে জবুথবু হয়ে পড়েছে উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ের জনজীবন। শনিবার জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে এমনি দৃশ্য চোখে পড়ে। পৌষের শেষ দিকে এসে কয়েকদিন ধরেই উত্তরের জেলা ঠাকুরগাঁওয়ে বইছে উত্তরের ঝিরিঝিরি হিমেল বাতাস। শীতের দাপট বেড়ে যাওয়ায় ভোগান্তিতে পড়েছেন জেলার সাধারণ মানুষ। কনকনে ঠান্ডা অনুভূত হওয়ায় কাজে ব্যাঘাত ঘটছে খেটে খাওয়া মানুষের। সকালের হিমশীতল বাতাসে কাবু হয়ে পড়া মানুষদের অনেকে গরম কাপড়ের পাশাপাশি খড়কুটো জ্বালিয়ে শীত নিবারণের চেষ্টা করেছেন। হিমেল হাওয়ায় মৃদু শ্বৈত্যপ্রবাহে দিনাজপুরে তীব্র শীত জেঁকে বসেছে। কয়েকদিনের হিমেল হাওয়ায় এ অঞ্চলের জনজীবনে নেমে এসেছে স্থবিরতা। উত্তরের কনকনে শীতল বাতাসে কাহিল হয়ে পড়ছে ছিন্নমূলের খেটে খাওয়া মানুষ। শীতে কাজে যেতে না পেরে বিপাকে পড়েছেন নিম্ন আয়ের মানুষ। সেই সঙ্গে শীতজনিত বিভিন্ন রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। তীব্র শীতে শ্বাসকষ্ট, ডায়রিয়া ও নিউমোনিয়াসহ শীতজনিত নানা রোগে আক্রান্ত হচ্ছে মানুষ। বেশি আক্রান্ত হচ্ছে শিশু ও বয়স্করা। হাসপাতালে বেড়েছে এসব রোগী। রোগীদের চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছে কোনো কোনো হাসপাতাল। ঠান্ডা থেকে বাঁচতে ভিড় বেড়েছে গরম কাপড়ের দোকানগুলোতে। অপরদিকে বোরো ধানের বীজতলা নিয়ে চিন্তিত কৃষক। কেউ কেউ পলিথিন দিয়ে ঢেকে বীজতলা বাঁচানোর চেষ্টায় মরিয়া। এদিকে, বিকাল থেকে হিমেল হাওয়ার সঙ্গে বাড়তে থাকে কনকনে ঠান্ডা। সন্ধ্যার পর থেকে কুয়াশায় ঢেকে যায় সর্বত্র। গতকালও সকাল ১১টা পর্যন্ত সূর্যের দেখা মিলেনি। কুড়িগ্রামে গত দুই সপ্তাহ ধরে জেঁকে বসেছে শীত। দিন ও রাতের তাপমাত্রা কমে যাওয়ায় বেশি শীত অনুভূত হচ্ছে। গতকাল সকালে জেলায় সর্বনিম্ন তাপমাত্রা রেকর্ড করা হয় ১০ দশমিক ৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস। কুয়াশার পাশাপাশি তীব্র হিমেল হাওয়ার কারণে সকালে প্রয়োজন ছাড়া মানুষ বের হচ্ছে না। অনেক কর্মজীবী মানুষ ঠান্ডাকে উপেক্ষা করে কাজে বের হলেও তীব্র শীতে ভোগান্তিতে পড়েছেন। এদিকে শীতজনিত কারণে শিশু ও বয়স্করা শ্বাসকষ্ট, নিউমোনিয়া ও ডায়রিয়া রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। প্রতিদিন জেনারেল হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছে প্রায় ৩০ থেকে ৪০ জন শীতজনিত রোগী। রোগীর চাপ সামাল দিতে হিমশিম খাচ্ছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।

 

 

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর