বুধবার, ২৫ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিকট বিস্ফোরণে কাঁপল মগবাজার

প্রকৌশলীসহ আহত ৫

নিজস্ব প্রতিবেদক

রাজধানীতে প্লাস্টিকের ড্রামে বিস্ফোরণে প্রকৌশলীসহ পাঁচজন আহত হয়েছেন। গতকাল সকাল ৯টা ৫০ মিনিটে মগবাজার ওয়্যারলেস মোড়ে বেসরকারি সেন্ট মেরিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুল ভবনের সামনে এ ঘটনা ঘটে। বড় ধরনের নাশকতা ঘটানোর জন্য অপরাধীরা আগে থেকে ড্রামে বোমা রেখেছিল বলে র‌্যাব-পুলিশের প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে।

প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেন, সকালে অ্যাসেম্বলি চলছিল স্কুলের শিক্ষার্থীদের। ঠিক তখনই প্লাস্টিকের ড্রামটি বিকট শব্দে বিস্ফোরিত হয়। বিস্ফোরণে আহতরা হলেন- প্রকৌশলী সাইফুল ইসলাম (৩৬), ডিপিডিসির শ্রমিক মোহাম্মদ তারেক (২০), মো. শাহিন (২৫), আবুল কালাম (২৫) ও পথচারী আকিলুর রহমান (১৫)। গুরুতর আহত একজনকে ঢাকা মেডিকেল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। তিনজনকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ বলছে, একটি পরিত্যক্ত প্লাস্টিকের ড্রাম থেকে বিস্ফোরণের ঘটনাটি ঘটে। বিশেষজ্ঞরা তদন্ত করে দেখতে পেয়েছেন, ড্রামটিতে ইমপ্রোভাইজড এক্সপ্লোসিভ ডিভাইসের (আইডি) অস্তিত্ব রয়েছে। অপরাধীকে শনাক্ত করতে আশপাশ এলাকার সব সিসিটিভি ফুটেজ সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সরেজমিন দেখা যায়, ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) রমনা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনারের (ডিসি) কার্যালয়ের ৪০০ মিটার দূরত্বে ছয় তলা ভবন। নিচতলা থেকে তৃতীয় তলা পর্যন্ত চলে সেন্ট মেরিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কার্যক্রম। নিচতলায় ফার্স্ট ফার্মা লিমিটেড নামে একটি ওষুধের ও মেট্রো ডিপার্টমেন্টাল স্টোর নামে আরও একটি দোকান রয়েছে। ফার্স্ট ফার্মার সামনে ফুটপাত ঘেঁষে রাখা ছিল ড্রামটি। বিস্ফোরণে ফুটপাতের বেশ খানিক আস্তর উঠে গেছে। ভেঙে চুরমার হয়ে গেছে ফার্মেসিটির থাই গ্লাস, ঝুলে পড়েছে শাটারের একাংশও। ফার্মেসির ভিতরে থাকা টিউবলাইটগুলো ভেঙে গেছে। ভবনের চতুর্থ তলা পর্যন্ত জানালার গ্লাস ভেঙে গেছে। ছিন্নভিন্ন হয়ে গেছে স্কুলটির ব্যানার। আশপাশে ছড়িয়ে থাকতে দেখা গেছে অসংখ্য স্পিøন্টার, কাচের টুকরো এবং বিস্ফোরণে উড়ে যাওয়া ড্রাম ও এর ঢাকনা, টাইলস্, ইটের টুকরা। পলিথিনে থাকা কিছু আবর্জনা ও প্লাস্টিকের বোতলও দেখা গেছে। পাশের ভবন রমনা কিড্স কিন্ডারগার্টেন স্কুলের পিয়ন আবদুল আওয়াল বলেন, একটি ছোট ছেলে এসে ড্রামের ঢাকনা খোলে। তখনই সেখানে বিকট শব্দে বিস্ফোরণ ঘটে।

সেন্ট মেরিস ইন্টারন্যাশনাল স্কুলের কেয়ারটেকার পলাশ বলেন, ঢাকনা লাগানো থাকলেও তখন ড্রামটি খালি ছিল বলে মনে হয়েছে। আহত নির্মাণ প্রকৌশলীকে হাসপাতালে নিয়ে আসা সহকর্মী সালাউদ্দিন বলেন, সবুজবাগের বাসা থেকে তার কর্মস্থলে যাওয়ার সময় বিস্ফোরণে আহত হন সাইফুল ইসলাম। এ সময় কাচের টুকরোয় তার দুই হাত ও পা ক্ষতবিক্ষত হয়।

বিস্ফোরণের পর ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের কাউন্টার টেররিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান ডিএমপির অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার আসাদুজ্জামান বলেন, আমরা প্রাথমিক ধারণা করছি, আগে থেকেই ড্রামে কেউ ককটেল জাতীয় বোমা রেখে দিয়েছিল। অসাবধানতাবশত ফেলে দেওয়ার কারণে বিস্ফোরণটি ঘটে। তবে বোমাটি কে রেখেছিল বা কীভাবে এখানে এসেছে তা উদঘাটনে আমরা কাজ করছি। এ বিস্ফোরণের সঙ্গে জঙ্গিসংশ্লিষ্টতা থাকতে পারে কি না- জানতে চাইলে এই পুলিশ কর্মকর্তা বলেন, আমরা এখনো এমন কোনো বিষয়ে সন্দেহ করছি না। তবে প্রাথমিকভাবে সব বিষয় সামনে রেখে কাজ করছি।

ঘটনাস্থল পরিদর্শনকারী ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) হারুন-অর রশীদ বলেন, ময়লার ড্রামটিতে শক্তিশালী বিস্ফোরক রাখা ছিল। বিস্ফোরিত হওয়ার পর এবং ঘটনাস্থলে অসংখ্য স্পিøন্টার পাওয়া গেছে। একটা স্কুলের সামনে এটা কেন রাখা হয়েছিল তা আমরা বের করার চেষ্টা করছি।

রমনা বিভাগের ডিসি মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ বলেন, আমরা সর্বোচ্চ গুরুত্ব দিয়ে বিষয়টি খতিয়ে দেখছি। আশপাশ এলাকার ক্লোজ সার্কিট ক্যামেরা থেকে ছবি সংগ্রহ করা হচ্ছে।

সর্বশেষ খবর