বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

৩৫ গুণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে দূষণমাত্রা

-ড. আবদুস সালাম

৩৫ গুণ ছাড়িয়ে যাচ্ছে দূষণমাত্রা

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়ন বিভাগের অধ্যাপক ও বায়ুদূষণবিষয়ক গবেষক ড. আবদুস সালাম বলেছেন, শুধু ঢাকা নয়, বর্তমানে সারা দেশই ভয়াবহ বায়ুদূষণের কবলে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবগুলো দেশে দূষণ বাড়ছে। তার মধ্যে বাংলাদেশে দূষণ সবচেয়ে বেশি। আর মাত্রাতিরিক্ত যানবাহন, যানজট, ফিটনেসবিহীন গাড়ি, শিল্প-কারখানার দূষণ, নির্মাণবিধি না মেনে নির্মাণকাজ, রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি ও চারপাশ ঘিরে থাকা ইটভাটার কারণে ঢাকার বাতাস সবচেয়ে দূষিত। সন্ধ্যার পর কখনো কখনো বাতাসে দূষণ উপাদান বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার বেঁধে দেওয়া সীমার চেয়ে ৩৬ গুণ পর্যন্ত বেড়ে যাচ্ছে।

তিনি বলেন, বঙ্গোপসাগরের কাছাকাছি ভোলার বাতাসেও দূষণমাত্রা ভয়াবহ। রাজশাহীতে যন্ত্র বসিয়েছি। সেখানেও দূষণ বিপজ্জনক পর্যায়ে। এ দূষণের পেছনে আমাদের অভ্যন্তরীণ কারণ যেমন আছে, কিছু দূষণ শীতকালে উত্তরের বাতাসের সঙ্গে সীমান্তের ওপার থেকে আসছে। অধিক কয়লাভিত্তিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, দ্রুত ও অনিয়ন্ত্রিতভাবে অবকাঠামো নির্মাণ এবং নগরায়ণের কারণে দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার সবগুলো দেশই দূষণের কবলে। গতকাল সন্ধ্যায়ও বিশ্বের মধ্যে সবচেয়ে দূষিত শহর ছিল ঢাকা। দ্বিতীয় পাকিস্তানের লাহোর, তৃতীয় ভারতের দিল্লি, চতুর্থ উজবেকিস্তানের তাসখন্দ ও পঞ্চম ভারতের কলকাতা। সবগুলোই এ অঞ্চলের শহর।

ড. সালাম বলেন, বৃষ্টিপাত না থাকায় নভেম্বর থেকে ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত চার মাস দূষণ বাড়তেই থাকে। ইটভাটাগুলোও শীতকালে চলে। রাস্তা খোঁড়াখুঁড়ি, বিভিন্ন নির্মাণকাজ, ট্রাফিক জ্যাম তো আছেই। এসব নিয়ে অনেক দিন ধরেই কথা বলছি। দূষণের উৎস বন্ধ করতে আইন আছে। আইন কঠোরভাবে বাস্তবায়ন করলে দূষণ কমে আসবে। ঢাকায় প্রচুর মোটরসাইকেল ও ছোট যানবাহন বেড়েছে। এগুলো জীবাশ্ম জ্বালানি পোড়াচ্ছে। কালো ধোঁয়ার গাড়ি নিয়ে কথা বলার কেউ নেই। নির্মাণকাজে ধুলা নিয়ন্ত্রণ করা হচ্ছে না। বায়ুদূষণ পরিমাপে ঢাকায় ৭০-৮০টি যন্ত্র বসিয়েছি আমরা। তাতে দেখেছি শহরের মাঝখানের চেয়ে উত্তরা, সায়েদাবাদা, গাবতলীর মতো সীমানা এলাকায় দূষণ বেশি। কারণ, এখানে গাড়ি বেশি। গাড়ির ধোঁয়া যেমন আছে, তেমনি সড়কের ধুলাও গাড়ির চাকার সঙ্গে উড়ে পুরো এলাকা ধূসর করে ফেলে। দূষণমাত্রা বাড়তে থাকে রাত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে। তাপমাত্রা কমলে ও আর্দ্রতা বাড়লে ওপর থেকে দূষিত পদার্থ নিচে নেমে আসে। এ ছাড়া রাতে ঢাকায় ট্রাক চলাচল শুরু হয়। কখনো কখনো প্রতি ঘনমিটার বাতাসে সবচেয়ে ক্ষতিকর দূষক উপাদান পিএম-২.৫ (অতি সূক্ষ্ম বস্তুকণা) ৩৫০ মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে যায়। আর বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা নির্ধারিত বাতাসে দূষণের অন্যতম উপাদান পিএম-২.৫-এর সহনীয় মাত্রা হচ্ছে (২৪ ঘণ্টার গড়) প্রতি ঘনমিটারে ১০ মাইক্রোগ্রাম। আর বার্ষিক গড় থাকবে সর্বোচ্চ ৫ মাইক্রোগ্রাম।

 

সর্বশেষ খবর