বৃহস্পতিবার, ২৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

শক্ত ভিত্তি নিয়ে লড়াই দুই দলের

সাইফউদ্দীন আহমেদ লেনিন, কিশোরগঞ্জ

শক্ত ভিত্তি নিয়ে লড়াই দুই দলের

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে সব রাজনৈতিক দলই প্রস্তুতি নিতে শুরু করেছে। জেলার ছয়টি নির্বাচনী এলাকার সবকটিতেই ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের যেমন রয়েছে শক্ত ভিত্তি, প্রধান বিরোধী দল বিএনপিরও রয়েছে ভালো অবস্থান। অন্যদিকে জাতীয় পার্টি, বিভিন্ন ইসলামী ও বাম দলগুলোরও নির্বাচনকেন্দ্রিক তৎপরতা লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বর্তমানে জেলার ছয়টি আসনের মধ্যে মহাজোটকেন্দ্রিক আওয়ামী লীগের পাঁচটি এবং একটি জাতীয় পার্টির। নির্বাচন সামনে রেখে প্রায় প্রতিটি আসনেই আওয়ামী লীগ ও বিএনপির একাধিক প্রার্থী তৎপরতা চালাচ্ছেন।

কিশোরগঞ্জ-১ (সদর-হোসেনপুর) : এ আসনের বর্তমান সংসদ সদস্য শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলামের কন্যা ও আওয়ামী লীগের প্রয়াত সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট বোন ডা. সৈয়দা জাকিয়া নূর লিপি। এ আসনে আগামী নির্বাচনেও তিনি মনোনয়নপ্রত্যাশী। তাছাড়া আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে এলাকায় তৎপরতা চালাচ্ছেন প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী মসিউর রহমান হুমায়ুন। প্রয়াত সৈয়দ আশরাফুল ইসলামের ছোট ভাই মেজর জেনারেল (অব.) সৈয়দ শাফায়েতুল ইসলামের নামও সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে শোনা যাচ্ছে।

বিএনপি থেকে বিগত নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি রেজাউল করিম খান চুন্নু। তিনি ছাড়া সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে জেলা বিএনপির সাবেক সাধারণ সম্পাদক ভিপি ওয়ালীউল্লাহ রাব্বানীর নাম শোনা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-২ (কটিয়াদী-পাকুন্দিয়া) : এ আসনে আওয়ামী লীগের বর্তমান সংসদ সদস্য পুলিশের সাবেক আইজিপি নূর মোহাম্মদ। সদালাপী, মিশুক এবং ব্যক্তিত্বসম্পন্ন হিসেবে খ্যাতি রয়েছে তার। আগামী নির্বাচনেও তিনি দলীয় মনোনয়ন চাইবেন। জাতীয় পার্টি থেকে আসা সাবেক এমপি বর্তমানে পাকুন্দিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট সোহরাব উদ্দিন তার প্রধান প্রতিদ্বন্দ্বী। এ আসনে আগামী সংসদ নির্বাচনে নূর মোহাম্মদ ও সোহরাব উদ্দিন ছাড়াও পাকুন্দিয়া উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম রেনু মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। এ আসনে বিএনপি থেকে এর আগে একাধিকবার এমপি ছিলেন মেজর (অব.) আখতারুজ্জামান। তিনি বর্তমানে বহিষ্কৃত। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে বর্তমানে যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন জেলা বিএনপির সহসভাপতি রুহুল আমিন আকিল ও আশফাক আহম্মেদ জুন, সুইডেন প্রবাসী শহীদুজ্জামান কাকন ও পাকুন্দিয়া উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক অ্যাডভোকেট মো. জালাল উদ্দিন।

কিশোরগঞ্জ-৩ (করিমগঞ্জ-তাড়াইল) : এ আসনের সংসদ সদস্য জাতীয় পার্টির মহাসচিব মুজিবুল হক চুন্নু। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বাধীন মহাজোটের প্রার্থী হিসেবে তিনি এমপি হয়েছেন। জাতীয় পার্টি পৃথকভাবে নির্বাচন করলে আগামীতে তিনিই হবেন জাতীয় পার্টির প্রার্থী। তাকে নিয়ে আওয়ামী লীগের মধ্যে রয়েছে নানা ক্ষোভ। নৌকা প্রতীকে দলীয় প্রার্থীর দাবি তৃণমূলের। দলের এমপি না থাকায় এ আসনে আওয়ামী লীগের ভিত্তি অনেকটিা নড়বড়ে হয়ে গেছে বলে অনেকের মন্তব্য।

এ আসনে আওয়ামী লীগের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মাঠে রয়েছেন করিমগঞ্জ উপজেলা আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক ও উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান নাসিরুল ইসলাম খান আওলাদ। এ ছাড়া আওয়ামী লীগ থেকে আরও যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তাদের মধ্যে প্রেসিডেন্ট আবদুল হামিদ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. আ ন ম নৌশাদ খান, ব্যবসায়ী ও শিল্পপতি এরশাদ উদ্দিন ও শেখ কবির আহমেদ। বিএনপি থেকে এ আসনে এমপি ছিলেন সাবেক শিক্ষামন্ত্রী ড. এম ওসমান ফারুক। বেশ কয়েক বছর ধরে তিনি দেশের বাইরে। পরিবেশ অনুকূলে থাকলে তিনি প্রার্থী হতে পারেন বলে জানালেন জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক মাজহারুল ইসলাম। এ ছাড়া যাদের নাম শোনা যাচ্ছে তারা হলেন- জেলা বিএনপির সহসভাপতি জাহাঙ্গীর আলম মোল্লা ও অ্যাডভোকেট জালাল মোহাম্মদ গাউস।

কিশোরগঞ্জ-৪ (ইটনা-মিঠামইন-অষ্টগ্রাম) : হাওর অঞ্চল হিসেবে পরিচিত এ আসনের সংসদ সদস্য রাষ্ট্রপতিপুত্র প্রকৌশলী রেজওয়ান আহাম্মদ তৌফিক। পিতার পদাঙ্ক অনুসরণ করে তিনিও হাওর ও মানুষের জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে ব্যাপক ভূমিকা রেখে চলেছেন। আগামী নির্বাচনে এখন পর্যন্ত তিনিই দলের একমাত্র প্রার্থী। এ আসনে আওয়ামী লীগের শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী মনে করা হয় বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা অ্যাডভোকেট ফজলুর রহমানকে। এ আসনে বিএনপি থেকে মুক্তিযোদ্ধা প্রজন্ম দলের সহসভাপতি ডা. ফেরদৌস আহমেদ চৌধুরী লাকী ও হিন্দু-বৌদ্ধ-খ্রিস্টান কল্যাণ ফ্রন্টের কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান সুরঞ্জন ঘোষের নামও শোনা যাচ্ছে।

কিশোরগঞ্জ-৫ (বাজিতপুর-নিকলী) : এ আসনের বর্তমান এমপি বাজিতপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. আফজাল হোসেন। আগামীতেও তিনি দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী। এ আসনে ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অজয় কর খোকন, ব্যারিস্টার রফিকুল ইসলাম মিল্টন, সাবেক কৃষক লীগ নেতা ফারুক আহাম্মদ মনোনয়ন চাইবেন বলে শোনা যাচ্ছে। তবে এলাকায় দলীয় কর্মকান্ডে তাদের কোনো তৎপরতা নেই বলে অভিযোগ রয়েছে।

এ আসনে বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা কমিটির সহসভাপতি শেখ মুজিবুর রহমান ইকবাল। বন্যা ও করোনা মহামারিসহ বিভিন্ন দুর্যোগে সহায়তা নিয়ে মানুষের দ্বারে দ্বারে গিয়েছেন। দলীয় কর্মকান্ডের পাশাপাশি স্থানীয়ভাবে নানা কর্মসূচিতে সক্রিয় তিনি।

কিশোরগঞ্জ-৬ (ভৈরব-কুলিয়ারচর) : সাবেক রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানের পুত্র, বিসিবির সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন এ আসনের এমপি। আগামী নির্বাচনেও তাকে দলের সম্ভাব্য প্রার্থী হিসেবে মনে করা হচ্ছে। বিএনপির সম্ভাব্য প্রার্থী রয়েছেন- দলের কেন্দ্রীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য ও জেলা বিএনপির সভাপতি মো. শরীফুল আলম। দলীয় কর্মসূচিসহ নানা কর্মকান্ড নিয়ে তিনি এলাকায় সক্রিয়।

সর্বশেষ খবর