বুধবার, ১ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সমন্বয়হীনতা ২৩ মন্ত্রণালয়ের

পুষ্টি কার্যক্রমে জরুরি সমন্বিত মহাপরিকল্পনা

জয়শ্রী ভাদুড়ী

সমন্বয়হীনতা ২৩ মন্ত্রণালয়ের

দেশের পুষ্টি সূচককে এগিয়ে নিতে কাজ করছে ২৩টি মন্ত্রণালয়। পুরো পুষ্টি কার্যক্রমকে মাস্টারপ্ল্যানের আওতায় না নিয়ে আলাদা প্রকল্প নিচ্ছে মন্ত্রণালয়গুলো। এতে কাক্সিক্ষত লক্ষ্যে পৌঁছাচ্ছে না দেশের পুষ্টি কার্যক্রম। বিভিন্ন বয়সী মানুষ ভুগছে অপুষ্টিতে। অপুষ্টির দুষ্টচক্র থেকে বের হতে পারছে না দেশ।

অপুষ্টি দূর করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের পাশাপাশি খাদ্য, দুর্যোগ ও ত্রাণ ব্যবস্থাপনা, মহিলা ও শিশু, তথ্য, শিক্ষা, মৎস্য ও প্রাণিসম্পদ, স্থানীয় সরকারসহ সরকারের ২৩টি মন্ত্রণালয় বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ নানা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। চিকিৎসা, সরাসরি খাদ্য বিতরণ ও ভিটামিন, ক্যালসিয়াম, আয়োডিন, এমআইএনটি পাউডার, মিনারেল খাওয়ানোর মতো কর্মসূচিগুলোকে বিবেচনা করা হয় প্রত্যক্ষ কার্যক্রম হিসেবে। পরোক্ষ কার্যক্রম হিসেবে ধরা হয় অপুষ্টি দূরীকরণ সংক্রান্ত সভা, সেমিনার, প্রশিক্ষণ, সচেতনতা বাড়ানো ইত্যাদি কর্মসূচিকে। মোটা দাগে ১৩টি মন্ত্রণালয় এসব কার্যক্রম বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে মূল ভূমিকা পালন করছে।

বিএনএনসি ও জনস্বাস্থ্য পুষ্টি প্রতিষ্ঠানের তথ্য অনুযায়ী, দেশে সরকারি ও বেসরকারিভাবে পুষ্টির বিষয়ে বিভিন্ন পর্যায়ে প্রায় ৩০০ কর্মসূচি চলমান রয়েছে। এর মধ্যে সরকারের বহুমুখী কর্মপরিকল্পনা রয়েছে ৩১টি। এ ৩১ পরিকল্পনার মধ্যে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় বাস্তবায়ন করছে ১৯টি। সরকারের চলমান এ কর্মসূচি ২০২৩ সাল পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। জাতীয় পুষ্টি পরিষদের প্রকাশনার তথ্য অনুযায়ী, পুষ্টি খাতে সর্বাধিক ৮০ শতাংশ ব্যয় করে ৪টি মন্ত্রণালয়। এর মধ্যে খাদ্য মন্ত্রণালয় ৩৪ শতাংশ, স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ২৩ শতাংশ, প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয় ১৩ শতাংশ এবং মহিলা ও শিশুবিষয়ক মন্ত্রণালয় ৭ শতাংশ   ব্যয় করেছে। বাংলাদেশ জাতীয় পুষ্টি পরিষদের (বিএনএনসি) উপ-পরিচালক ডা. নুসরাত জাহান বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা ২২টি মন্ত্রণালয়ের সমন্বয় জোরদার করতে মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের মাধ্যমে চিঠি দেওয়ার চেষ্টা করছি। দুই মাস পর পর কমিটিগুলোর নির্ধারিত মিটিং যেন হয় সে বিষয়ে জোর দেওয়া হচ্ছে। মিটিং হলে সমন্বয় কার্যক্রম বেগবান হবে। বিএনএনসি সরাসরি প্রধানমন্ত্রীর আওতায়। তাই প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয় যদি প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের ভিতরে হতো তাহলে কার্যক্রম আরও ত্বরান্বিত হতো।’  মাল্টিপল ইন্ডিকেটর ক্লাস্টার সার্ভে-২০২১ (এমআইসিএস)-এর তথ্য অনুযায়ী, আগের তুলনায় দেশে অপুষ্টি বেড়েছে ৯ শতাংশ। পরিসংখ্যানে দেখা যায়, ২০২১ সালে দেশের হাসপাতালে চিকিৎসা নিতে আসা মারাত্মক অপুষ্টিতে ভোগা শিশুর সংখ্যা ৭২ শতাংশেরও বেশি বেড়েছে। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের পাবলিক হেলথ অ্যান্ড ইনফরমেটিকস বিভাগের ২০২১ সালের এক গবেষণার তথ্য বলছে, দেশের এক-চতুর্থাংশ প্রবীণ অপুষ্টিতে ভুগছেন। এ প্রসঙ্গে জ্যেষ্ঠ জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খণ্ডকালীন শিক্ষক ড. আবু জামিল ফয়সাল বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুষ্টি নিয়ে কাজ করা ২৩টি মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বিত অ্যাকশন প্ল্যান থাকতে হবে। সে অনুযায়ী সবাইকে কাজ করতে হবে। দেশ পুষ্টি সূচকে এখনো অনেক পিছিয়ে আছে। এই পরিস্থিতিতে প্রত্যেক মন্ত্রণালয় যদি আলাদাভাবে কাজ করে তাহলে কাক্সিক্ষত লক্ষ্য অর্জন বাধাগ্রস্ত হবে। তাই সবাইকে একটি মহাপরিকল্পনার আওতায় প্রকল্প নিতে হবে।’ সম্প্রতি এক অনুষ্ঠানে গ্লোবাল এলায়েন্স ফর ইমপ্রুভড নিউট্রিশন (গেইন) বাংলাদেশের পোর্টফোলিও লিড ড. আশেক মাহফুজ বলেছেন, ন্যাশনাল মাইক্রো নিউট্রিয়েন্ট সার্ভে ২০১৯-২০ এর ফলাফল অনুযায়ী বাংলাদেশে এখনো অপুষ্টিজনিত সমস্যা রয়েছে। আমাদের অষ্টম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা থেকে ইউএন ফুড সিস্টেমে ন্যাশনাল পাথওয়ে ডকুমেন্ট, ইউএন ফুড সিস্টেম সামিটসহ অন্য সরকারি নীতির সবই পুষ্টি গুরুত্বপূর্ণ স্থান পেয়েছে এবং আমরা ধীরে ধীরে খাদ্যনিরাপত্তা তথা পুষ্টিনিরাপত্তা নিশ্চিতে জোর দিচ্ছি। এর জন্য সরকারের উদ্যোগ ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সহায়তা প্রয়োজন।’ এ ব্যাপারে এমিনেন্স অ্যাসোসিয়েটস ফর সোশ্যাল ডেভেলপমেন্টের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ডা. শামীম তালুকদার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, ‘পুষ্টি নিয়ে ২৩টি মন্ত্রণালয় তো দূরের কথা আন্তমন্ত্রণালয়েই সমন্বয়ের অভাব রয়েছে। বিভিন্ন কর্মসূচি আলাদাভাবে কাজ করে। পুষ্টি কার্যক্রমকে এগিয়ে নিতে মাল্টিসেক্টরাল কার্যক্রমে জোর দিতে হবে। নয়তো পুষ্টিহীনতার চক্র থেকে বের হতে পারবে না দেশ।’

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর