বৃহস্পতিবার, ২ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা
অষ্টম কলাম

রূপপুর নিয়ে প্রশ্নে খেপে গেলেন মন্ত্রী

নিজস্ব প্রতিবেদক

রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের অগ্রগতি নিয়ে প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের ওপর খেপে গেলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী ইয়াফেস ওসমান। বিষয়বহির্ভূত প্রশ্ন করায় সাংবাদিকদের মান নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, ‘সাংবাদিকতার সনদ নিয়েই সাংবাদিকতা   করা উচিত।’ একপর্যায়ে সাংবাদিকরা তার সংবাদ সম্মেলন থেকে বেরিয়ে যান। গতকাল সচিবালয়ে মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে ‘স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রণালয়ের করণীয়’ বিষয়ে কর্মশালার উদ্বোধন অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি মন্ত্রী।

কর্মশালার বিষয় নিয়ে মন্ত্রীর প্রায় আধঘণ্টার বক্তব্য শেষে এক সাংবাদিক বলেন, ‘আমরা এক-দুইটা প্রশ্ন করে চলে যেতে চাই।’ এ সময় মন্ত্রী বলেন, ‘বলো ভাই, তোমাদের তো আবার সময়ের দাম আছে! তো এতগুলো কথা বললাম, এগুলো কি একটাও কাজের কথা হয় নাই? আচ্ছা বলো।’ রাশিয়ার ওপর মার্কিন নিষেধাজ্ঞায় রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্রের মালামাল সরবরাহে কত দেরি হতে পারে- এমন প্রশ্নে মন্ত্রী বলেন, ‘ওই ব্যাপারে এখন কিছু বলব না। এত কথার মধ্যে তোমরা চলে গেলে রূপপুরে?’ এ সময় মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব জিয়াউল হাসান বলেন, ‘আজকের ওয়ার্কশপের সঙ্গে এই প্রশ্ন সংগতিপূর্ণ নয়।’ সিনিয়র সচিবের কথা শেষ না হতেই মন্ত্রী বলেন, ‘আমি বুঝি না, তোমরা প্রফেশনাল না? আর ইউ প্রফেশনাল? লেট মি দিস আনসার। ইউ আর প্রফেশনাল, লাইক মি আর্কিটেকচার। তোমরা তো প্রফেশনাল। তোমাদের রেগুলার প্রফেশনাল স্টাডির ব্যবস্থা আছে? নাই।’ উপস্থিত কয়েকজন সাংবাদিক এ সময় বলেন, ‘আছে আছে।’

তখন মন্ত্রী বলেন, ‘ঘোড়ার ডিম আছে তোমাদের। আমাদের একটা ইনস্টিটিউট আছে ওখান থেকে যদি সার্টিফিকেট না পাও, ইউ ক্যান নট প্র্যাকটিস। কারণ হলো, ওটার (ইনস্টিটিউট) শুরুটা হয় আমার হাত দিয়ে। ওগুলো করো আগে। বিকজ, আমরা বাংলাদেশকে ওই জায়গায় নিতে চাই।’ এক সাংবাদিক বলেন, ‘আমাদের বাধ্যবাধকতা নাই যে, সনদ ছাড়া সাংবাদিকতা করা যাবে না।’ এরপর মন্ত্রী বলেন, ‘ওইটাই তো প্রবলেম। তোমার যদি একটা ব্যাকগ্রাউন্ড না থাকে, কালকে বলে দিলা তুমি সাংবাদিক। তুমি তো প্রফেশনালিজমের কিছু বোঝোই না। একটা প্রফেশন, তার একটা ব্যাকগ্রাউন্ড থাকতে হবে। একটা কথা বলে দিলা, যে কোনো জায়গা থেকে চলে আস্লে, তার মানে তোমাদের কোনো স্ট্যান্ডার্ড নাই।’ ইয়াফেস ওসমান বলেন, ‘তোমার প্রফেশনালি যদি জ্ঞান-গরিমা থাকে, ন্যাচারালি তখন তুমি একভাবে বলবা, আর যদি না থাকে আরেকভাবে বলবা। এর পরও তুমি বলছ, আমরা আসতে পারি যে কোনো জায়গা থেকে? এ নিয়ে ভাই আমি তোমার এই কথায় যেতে চাই না। একদিন আইসো, তোমাদের বসদের সাথে কথা হয় তো, ওদের সাথেই কথা বলবো। তোমাদের সাথে বলে আর লাভ নাই।’ মন্ত্রী বলেন, ‘আচ্ছা। এই সাবজেক্ট বাদ দিয়ে দাও। আমি ওই জন্য বলছি, এটা বাদ দিয়ে তুমি চলে গেলে অন্য জায়গায়। এটা নিয়ে আর কোনো কথাই হবে না। তুমি এখানে আসছ কী জন্য? তুমি রূপপুরের ব্যাপারে কথা বলতে আসছ? এখান থেকে তোমার প্রশ্ন বের করতে হবে, উত্তর নিতে হবে। সেটা হলে তুমি প্রোপার জিনিসটা করলা।’ এক সাংবাদিক বলেন, ‘আমরা যারা সাংবাদিকতায় কাজ করি তারা সাবজেক্টের বাইরেও প্রশ্ন করতে পারি। আপনাকে আমরা পাই না। গত আট-নয় মাসে আপনার প্রোগ্রামে আসিনি। এই প্রথম আসলাম। তাও আবার জরুরি ভিত্তিতে আসতে বলেছেন। ১১টার প্রোগ্রাম, ১১টা ১০ মিনিটে আমাদের জানিয়েছেন। আমরা বড় জিনিস মনে করে চলে এসেছি। রূপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র নিয়ে জনগণের জানার আগ্রহ আছে। জনসাধারণের ভিউ থেকে আমাদেরও অনেক কিছু জানতে হয়।’ তখন মন্ত্রী ধমকের সুরে বলেন, ‘আমি একটা কথা পরিষ্কার বলে যাই। ইউ লিসেন টু মি। আপনারা যদি না আসতে চান, চলে যান।’ মন্ত্রী ধমকের সুরে কথা বলায় সাংবাদিকরা বের হয়ে যেতে উদ্যত হন। তখন মন্ত্রী বলেন, ‘ইউ শুড গো। আমি বললাম, প্রশ্নটা ওটার ওপর না করে এটার ওপরে করেন। এটা বলতে পারব না আমি।’

সর্বশেষ খবর