শিরোনাম
বৃহস্পতিবার, ২৩ ফেব্রুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

যুদ্ধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি পুতিন-বাইডেন

প্রতিদিন ডেস্ক

যুদ্ধ নিয়ে পাল্টাপাল্টি পুতিন-বাইডেন

মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের কিয়েভ সফর এবং পোল্যান্ডে ভাষণ দেওয়ার জেরে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ (নিউ স্টার্ট) চুক্তি স্থগিত করে দিয়েছেন। একই সঙ্গে তিনি ঘোষণা করেছেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালালে রাশিয়াও প্রস্তুত। মার্কিন পরমাণু অস্ত্রে জবাব রাশিয়াও দেবে।’ সূত্র : রয়টার্স, আল জাজিরা, বিবিসি। প্রাপ্ত খবর অনুযায়ী, মস্কোর স্থানীয় সময় গত মঙ্গলবার ফেডারেল অ্যাসেম্বলিতে জাতির উদ্দেশে দেওয়া ভাষণে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন বলেন, ‘আমি আজ এ ঘোষণা দিতে বাধ্য হলাম যে, স্ট্র্যাটেজিক অফেনসিভ আর্মস ট্রিটিতে অংশগ্রহণ স্থগিত করছে রাশিয়া। যুক্তরাষ্ট্র যদি দ্রুত পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা চালায়, তাহলে রাশিয়ারও পারমাণবিক অস্ত্র পরীক্ষার জন্য প্রস্তুত।’ রুশ প্রেসিডেন্ট আরও বলেন, ‘সপ্তাহখানেক আগে?আমি একটি ডিক্রিতে স্বাক্ষর করেছি। সে অনুযায়ী, ইউক্রেন যুদ্ধে নতুন স্থল-ভিত্তিক কৌশলগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আমরা তাদের (ওয়াশিংটন) জবাব দেব তাদের মতো করে।’ পুতিন আরও উল্লেখ করেন, ‘আমি আবার বলতে চাই, পশ্চিমারা যুদ্ধ শুরু করেছে। আমরা এখন পর্যন্ত কেবল তাদের থামাতে শক্তি প্রয়োগ করছি। পশ্চিমা প্রভাবশালীরা তাদের লক্ষ্য গোপন রাখেনি। তারা রাশিয়ার কৌশলগত পরাজয় নিশ্চিত করতে চায়। এর অর্থ, তারা আমাদের একেবারে শেষ করে দিতে চায়।’

অপরদিকে গ্রিস সফরে থাকা মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিঙ্কেন মস্কোর চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্তকে ‘দুঃখজনক’ ও ‘দায়িত্বজ্ঞানহীন’ উল্লেখ করে বলেছেন, ‘রাশিয়া কী করছে, আমরা তা সতর্কভাবে দেখছি।’ এদিকে আরেক প্রতিক্রিয়ায় মার্কিন সামরিক জোট ন্যাটোর প্রধান জেনস স্টলটেনবাগ রুশ প্রেসিডেন্ট পুতিনকে ‘নিউ স্টার্ট’ চুক্তি স্থগিতের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেন, ‘পুতিনই যুদ্ধ অব্যাহত রেখেছেন। তাই ইউক্রেন যাতে প্রয়োজনীয় অস্ত্রের জোগান পায় তা নিশ্চিত করতে ন্যাটো অস্ত্র সংগ্রহ বিশেষজ্ঞদের সঙ্গে একটি বৈঠকের পরিকল্পনা করছে।’

মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব : এসব ঘটনার মধ্যেই গতকাল রাশিয়ায় মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে তলব করে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। পরে রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের এক বিবৃতিতে বলা হয়, ইউক্রেনে যুক্তরাষ্ট্রের অযাচিত হস্তক্ষেপের জন্য মার্কিন রাষ্ট্রদূত লিন ট্রেসিকে তলব করা হয়। তাকে বলা হয়, যুক্তরাষ্ট্র কিয়েভকে অস্ত্র সরবরাহের মাধ্যমে একটি আক্রমণাত্মক পথ বেছে নিয়েছে। এ সময় লিন ট্রেসির কাছে দেওয়া ‘নোট অব প্রোটেস্ট’-এ ইউক্রেন থেকে ন্যাটোর সরঞ্জাম প্রত্যাহার করে যুদ্ধ উত্তেজনা বন্ধের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের প্রতি আহ্বান জানানো হয়। রুশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতিতে আরও উল্লেখ করা হয়, ‘মার্কিন রাষ্ট্রদূতকে বলা হয়েছে যে, ইউক্রেন ইস্যুতে আমেরিকা রাশিয়ার সঙ্গে সব ক্ষেত্রে গভীর সংঘাতে জড়িত হচ্ছে, যা হিতেবিপরীত হবে। পরিস্থিতি স্বাভাবিক করার জন্য ইউক্রেন থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের সেনা প্রত্যাহারে ওয়াশিংটনকে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নিতে হবে। পাশাপাশি রুশ-বিরোধী সব তৎপরতা বন্ধ করতে হবে।’ বিবৃতিতে বলা হয়, ‘ইউক্রেনে অস্ত্রের বন্যা বইয়ে দেওয়া এবং গোয়েন্দা তথ্য দিয়ে রাশিয়ার ভূখণ্ডে ইউক্রেনকে হামলায় সহায়তা করার মধ্যদিয়ে প্রমাণ হয় যে, ইউক্রেন সংঘাতে আমেরিকা কোনো পক্ষ নয় বলে যে দাবি করে আসছে- তা সম্পূর্ণ মিথ্যা।’

পুতিনের সঙ্গে শীর্ষ চীনা কূটনীতিকের বৈঠক : চীনের শীর্ষ কূটনীতিক ওয়াং-ই এখন রাশিয়ায় অবস্থান করছেন। স্থানীয় সময় গতকাল বুধবার রাশিয়ার পররাষ্ট্রমন্ত্রী সের্গেই ল্যাভরভের সঙ্গে সাক্ষাতের পর ওয়াং-ই প্রেসিডেন্ট পুতিনের সঙ্গে বৈঠকে বসেন। বৈঠকে রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট পুতিন বলেন, ‘চীনের সঙ্গে সম্পর্ক বেশ উন্নতি হচ্ছে। চলতি বছর মস্কো ও বেইজিং ব্যবসায় নতুন লেভেলে পৌঁছাতে পারে।’ চীনের শীর্ষ কূটনীতিককে পুতিন বলেন, কঠিন এই বৈশ্বিক পরিস্থিতিতে তার সঙ্গে (ওয়াং-ইর সঙ্গে) কথা বলতে অপেক্ষা করছিলেন তিনি। ওয়াং-ই জবাবে পুতিনকে বলেন, ‘অন্য কোনো দেশের চাপে চীন-রাশিয়ার সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না। মস্কোর সঙ্গে কৌশলগত সম্পর্ক বাড়াতে তার দেশ প্রস্তুত।’

চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং-ই এক বিবৃতিতে আরও জানিয়েছেন, রাশিয়ার সঙ্গে তার দেশের সম্পর্ক অনেক বেশি শক্তিশালী এবং স্থিতিশীল। এই সম্পর্ক অনেকটা পাথরের মতো শক্ত যা বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় সক্ষম। তিনি বলেন, ‘চীন ও রাশিয়ার মধ্যকার সম্পর্ক সবক্ষেত্রে লাভজনক এবং কল্যাণকর। দুই দেশই নিজেদের জাতীয় স্বার্থ এবং মর্যাদা রক্ষার জন্য প্রস্তুত। জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের স্থায়ী সদস্য হিসেবে বিশ্বে শান্তি বজায় রাখার ক্ষেত্রে চীন এবং রাশিয়ার দায়িত্ব রয়েছে।’ খবরে বলা হয়, পশ্চিমারা ওয়াং-ইর মস্কো সফরকে গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছে। রাশিয়া-চীনের এমন সম্পর্ক ইউক্রেন যুদ্ধে প্রভাব ফেলতে পারে বলে বিশেষজ্ঞদের ধারণা। আবার অনেকে বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র এখন দুই ফ্রন্টে শত্রুদের মোকাবিলা করছে। একটা রাশিয়া আর অন্যটা চীন।

জাতিসংঘের আহ্বান : জাতিসংঘের মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেস রাশিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে শিগগিরই আলোচনার টেবিলে আসার আহ্বান জানিয়ে বলেছেন, ‘পারমাণবিক অস্ত্র নিয়ন্ত্রণ ছাড়া বিশ্ব বড় ধরনের ঝুঁকিতে পড়বে এবং অস্থিতিশীল পরিস্থিতি তৈরি হবে।’

সর্বশেষ খবর