বৃহস্পতিবার, ১৬ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা
দুই বিশ্ববিদ্যালয়ে সংঘাত

ইবির প্রভোস্ট লাঞ্ছিত কার্যালয় ভাঙচুর

ইবি প্রতিনিধি

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের (ইবি) জিয়াউর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থীদের তথ্য নিতে গিয়ে হলের প্রভোস্ট সহকারী অধ্যাপক আবদুল জলিল পাঠানকে লাঞ্ছিত ও কার্যালয় ভাঙচুর করার অভিযোগ উঠেছে ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে। মঙ্গলবার রাত সাড়ে ১০টার দিকে এ ঘটনা ঘটে।

জানা যায়, সোমবার হলের বিভিন্ন সমস্যা নিরসনে প্রভোস্ট শিক্ষার্থীদের নিয়ে আলোচনায় বসেন। এতে আবাসিকতার বিষয়টি তোলেন শিক্ষার্থীরা। পরদিন মঙ্গলবার রাত ৯টার দিকে আবাসিক ও অনাবাসিক শিক্ষার্থীদের তথ্য সংগ্রহ করতে হলের রুমগুলোতে পরিদর্শনে যান হলের প্রভোস্ট, হাউস টিউটর ও কর্মকর্তারা। এ সময় প্রভোস্টদের ব্যঙ্গ করে বিভিন্ন গালিগালাজ করেন ছাত্রলীগ কর্মীরা। এ ছাড়া ফোন করেও ছাত্রলীগ কর্মীরা অসদাচরণ করেছেন বলে জানা গেছে। ব্যঙ্গ করে বিভিন্ন স্লোগানও দেন তারা। পরে হল থেকে নিচে নামলে প্রভোস্টের সঙ্গে ছাত্রলীগ কর্মীদের বাগবিতণ্ডার সৃষ্টি হয়।

এ সময় প্রভোস্ট কার্যালয় ভাঙচুর করেন তারা। ঘটনাস্থলে ছাত্রলীগ কর্মীসহ শিক্ষার্থীরা উপস্থিত ছিলেন। সরেজমিনে প্রভোস্ট কার্যালয়ের জানালার কাচ ভাঙা পড়ে থাকতে দেখা যায়। এরপর হল থেকে প্রভোস্ট চলে যান। এ সময় হলের প্রভোস্ট আবদুল জলিল পাঠান, হাউস টিউটর প্রকাশ চন্দ্র বিশ্বাস, হলের উপ-রেজিস্ট্রার তারিক উদ্দীন আহমেদসহ অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

হল সূত্রে জানা যায়, হলের মোট সিটসংখ্যা ৩৯৬টি। এর মধ্যে ৮০ জন শিক্ষার্থী আবাসিকতাপ্রাপ্ত। বাকি সবাই অনাবাসিক।

কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতার সঙ্গে কথা বললে তারা ভাঙচুরের বিষয়টি অস্বীকার করেন। তারা বলেন, ‘পূর্বনির্দেশনা ছাড়াই হলে রেড দিয়েছে। হঠাৎ রেড দেওয়ায় অনেকে আতঙ্কিত হয়ে পড়েছে। এ জন্য শিক্ষার্থীরা হল থেকে নিচে নেমে ক্ষুব্ধ হয়ে এমনটি করেছে।’ এ বিষয়ে হলের প্রভোস্ট আবদুল জলিল পাঠান বলেন, ‘গতকাল আবাসিক ও অনাবাসিক ছাত্রদের তথ্য নিতে গেলে আমাকে লাঞ্ছিত করা হয়েছে। আমার উপস্থিতিতে কার্যালয় ভাঙচুরও করেছে। অনায্য ও অছাত্রসুলভ আচরণ করেছে ছাত্রলীগ। তবে সাধারণ ছাত্রদের সহযোগিতা পেয়েছি।’

তিনি বলেন, ‘গত ১০ বছরে শিক্ষার্থীদের কোনো তথ্য হালনাগাদ করা হয়নি। জিয়া হল যেন একটা আবর্জনায় পরিণত হয়েছে। প্রভোস্ট হিসেবে আমি যে কদিন আছি নিয়মের মধ্য থেকে কাজ করব। কোনো অন্যায় মেনে নেওয়া হবে না।’

ছাত্রী নির্যাতনে শোকজের জবাব দেননি তিন অভিযুক্ত : ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) দেশরত্ন শেখ হাসিনা হলে ছাত্রী নির্যাতনের ঘটনায় অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে হাই কোর্টের নির্দেশে সাময়িক বহিষ্কার করেছিল বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। একই সঙ্গে অভিযুক্ত পাঁচ ছাত্রীকে শোকজ করে সাত কার্যদিবসের মধ্যে জবাব দিতে বলা হয়। ৪ মার্চ উপাচার্যের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত শৃঙ্খলা কমিটির সভায় এ সিদ্ধান্ত নেয় কর্তৃপক্ষ। গতকাল তাবাসসুম ইসলাম ও মোয়াবিয়া জাহান শোকজের জবাব দিয়েছেন। তবে ছাত্রলীগ নেত্রী সানজিদা চৌধুরী অন্তরা, হালিমা আক্তার উর্মী ও ইসরাত জাহান মিম জবাব দেননি। সময় বাড়ানোর আবেদন করেছেন তারা। একই সঙ্গে তারা আবেদনে কর্তৃপক্ষের কাছে তদন্ত প্রতিবেদনের কপি ও হাই কোর্টের নির্দেশনার কপি চেয়েছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার দফতর ও একাডেমিক শাখা সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে। এদিকে পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ চেয়ে গত ৬ মার্চ উপাচার্য বরাবর আবেদন করেছেন তাবাসসুম ও মুয়াবিয়া। ১৮ মার্চ তাদের প্রথম বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। রবিবার তাবাসসুম ইসলাম পরীক্ষায় অংশ নিতে বিভাগীয় সভাপতি ড. বখতিয়ার হোসেন বরাবর উকিল নোটিস পাঠিয়েছেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিভাগীয় সভাপতি নোটিস সংযুক্ত করে রেজিস্ট্রার বরাবর চিঠি পাঠিয়েছেন। চিঠিতে তিনি পরীক্ষার বিষয়ে সুস্পষ্ট সিদ্ধান্ত প্রদানের অনুরোধ জানান।

ভাত দিতে দেরি, হোটেল ভাঙচুর, মালিককে মারধর : ভাত দিতে দেরি করায় ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনের হোটেলের মালিক পিন্টুকে মারধর ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে হোটেল তালাবদ্ধ করার ঘটনা ঘটেছে। রাজনৈতিক পরিচয়ে কয়েকজন শিক্ষার্থী এ ঘটনা ঘটায়। মঙ্গলবার বেলা ৩টার দিকে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে গতকাল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন বরাবর পাঁচ দফা দাবি-সংবলিত স্মারকলিপি দিয়েছে দোকান মালিক সমিতি।

স্মারকলিপিতে বলা হয়, রাজনীতির দোহাই দিয়ে ইদানীং বিশ্ববিদ্যালয়ের কিছু শিক্ষার্থী বিশ্ববিদ্যালয় প্রধান ফটকের দোকানগুলোসহ শেখপাড়া বাজার, মধুপুর, লক্ষ্মীপুর ও হরিনারায়ণপুর বাজারের দোকানদারদের সঙ্গে খারাপ আচরণ করে চলেছে। এরই ধারাবাহিকতায় সোমবার পিন্টুর হোটেলে ভাত ফুরিয়ে যাওয়ার অপরাধে ইবি থানার এসআইসহ শ খানেক লোকের সামনে শিক্ষার্থী তুষার ও তার দলবল হোটেলমালিক পিন্টুকে বেধড়ক মারধর ও চেয়ার-টেবিল ভাঙচুর করে হোটেল তালাবদ্ধ করে। ঘটনার তদন্তপূর্বক সুষ্ঠু বিচারসহ পাঁচ দফা দাবি জানায় দোকান মালিক সমিতি। এদিকে ঘটনার পরদিন গতকাল ফের দোকান বন্ধ করে দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তুষার ও তার সহযোগীদের বিরুদ্ধে। এ সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক এলাকায় শিক্ষার্থী ও দোকানদারদের মধ্যে বাগবিতণ্ডা ও উত্তপ্ত পরিবেশ সৃষ্টি হয়।

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর