সোমবার, ২০ মার্চ, ২০২৩ ০০:০০ টা

অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যে চীনের বিকল্প বাংলাদেশ

রুকনুজ্জামান অঞ্জন

অস্ট্রেলিয়ার বাণিজ্যে চীনের বিকল্প বাংলাদেশ

ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ব বাণিজ্য ব্যবস্থায় যে বদল ঘটছে- তাতে রপ্তানির উৎস দেশ হিসেবে বাংলাদেশকে চীনের বিকল্প ভাবছে অস্ট্রেলিয়া। দেশটির সরকারি প্রতিনিধিরা সম্প্রতি অনুষ্ঠিত এক দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে সরাসরি বলেছেন, তারা চীন থেকে আমদানি কমিয়ে এশিয়ার অন্য দেশগুলো থেকে পণ্য নিতে চায়। বাংলাদেশ সেই সুযোগ নিতে পারে।

সম্প্রতি ঢাকায় অনুষ্ঠিত যৌথ ওয়ার্কিং গ্রুপ (জেডব্লিউজি)-এর বৈঠকে এসব বিষয়ে দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনা হয়েছে বলে জানা গেছে। দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্য ও বিনিয়োগ সংক্রান্ত চুক্তি (টিফা)’র আওতায় গঠিত এই গ্রুপে বাংলাদেশের পক্ষে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব তপন কান্তি ঘোষ এবং অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে দেশটির পররাষ্ট্র ও বাণিজ্য দফতরের ফার্স্ট অ্যাসিসট্যান্ট সেক্রেটারি (নর্থ অ্যান্ড সাউথ এশিয়া ডিভিশন) মি. গ্যারি কাওয়ান নেতৃত্ব দেন।

বৈঠকে উপস্থিত সূত্রগুলো জানায়, পরিবর্তিত বিশ্ব ব্যবস্থায় চীন থেকে আমদানি কমাতে চায় অস্ট্রেলিয়া। এ জন্য তারা বিকল্প উৎস খুঁজছে। তারা বলেছে, বাংলাদেশ চাইলে সেই বিকল্প উৎস হতে পারে। এক্ষেত্রে তাদের তৈরি পোশাক ও কৃষিপণ্য নেওয়ার আগ্রহ রয়েছে। তবে বাংলাদেশ এসব পণ্য ছাড়াও ওষুধ, আইসিটি, জ্বালানি, চামড়া ও চামড়াজাত খাত এবং ইলেকট্রনিক্স শিল্পে অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগ চেয়েছে। জ্বালানি খাতে সহায়তার অংশ হিসেবে বাংলাদেশে গ্যাস অনুসন্ধানের বিষয়েও দেশটির বিনিয়োগ চেয়েছে। বিপরীতে বাংলাদেশে উল সুতা, গরু ও ভেড়ার মাংস রপ্তানির প্রস্তাব দিয়েছে অস্ট্রেলিয়া। শিক্ষা খাতে সহায়তার অংশ হিসেবে ঢাকায় বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনের বিষয়েও প্রস্তাব দিয়েছে দেশটির প্রতিনিধি দল। সূত্র জানায়, বৈঠকে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে অস্ট্রেলিয়ায় কৃষি ও কৃষিজাত পণ্য রপ্তানির প্রস্তাব দেওয়ার পর অস্ট্রেলিয়া বলেছে, কৃষিপণ্য আমদানিতে তাদের কিছু শর্ত রয়েছে। বাংলাদেশ সেই শর্ত পূরণ করলে তারা কৃষিপণ্য আমদানি বাড়াবে। কর্মকর্তারা জানান, বাংলাদেশের আম নেওয়ার ক্ষেত্রে তারা হট ওয়াটার ট্রিটমেন্টের শর্ত দিয়েছে। বাংলাদেশের কৃষকেরা এখন হট ওয়াটার ট্রিটমেন্ট সুবিধা ব্যবহার করছে। এ ছাড়া অন্যান্য কৃষিপণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার কাছে টেকনিক্যাল সহায়তা চাওয়া হয়েছে। এ বিষয়ে একটি যৌথ কমিটি গঠনের সিদ্ধান্তও হয়েছে।  সংশ্লিষ্টরা বলছেন, করোনা মহামারি ও ইউক্রেন যুদ্ধের পরও অস্ট্রেলিয়ায় বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে উল্লেখযোগ্য হারে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরো (ইপিবি)’র হিসাবে চলতি অর্থবছরের জুলাই-জানুয়ারি প্রান্তিকে দেশটিতে বাংলাদেশের রপ্তানি বেড়েছে প্রায় ৩০ শতাংশ। তারপরও দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের পরিমাণ খুব বাড়েনি। ক্যানবেরায় অবস্থিত বাংলাদেশ হাইকমিশনের এক কৌশলপত্রে দেখা গেছে, দুই দেশের বাণিজ্যের পরিমাণ প্রায় ২০০ কোটি ডলার হলেও প্রতিযোগী দেশগুলোর তুলনায় বাংলাদেশে অস্ট্রেলিয়ার বিনিয়োগ সন্তোষজনক নয়। সংশ্লিষ্টরা জানান, অস্ট্রেলিয়ায় বিনিয়োগ বাড়ানোর জন্য কিছু কৌশল গ্রহণ করা হচ্ছে। এর মধ্যে (১) বাংলাদেশ ও এর আশপাশের দক্ষিণ এশিয়ার স্থল বেষ্টিত অঞ্চলের প্রায় ৩০ কোটি ভোক্তার বাজারে প্রবেশের জন্য অস্ট্রেলিয়া বাংলাদেশকে প্রবেশ পথ হিসেবে ব্যবহার করতে পারে; (২) বাংলাদেশের অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোতে অস্ট্রেলিয়া যেমন বিনিয়োগ করতে পারে তেমনি অস্ট্রেলিয়ার শিল্পজাত পণ্যের সরবরাহকারী দেশ হিসেবেও বাংলাদেশকে বিবেচনা করতে পারে এবং (৩) বাংলাদেশে শিল্প-কারখানা স্থাপন করে শুল্কমুক্ত সুবিধায় তৃতীয় দেশে পণ্য রপ্তানির সুযোগও নিতে পারে অস্ট্রেলিয়ার উদ্যোক্তারা। তবে এ ধরনের সুবিধা নিতে হলে এলডিসি থেকে উত্তরণের পরও নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত বাংলাদেশের শুল্ক সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে অস্ট্রেলিয়াকে। বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ বাংলাদেশ প্রতিদিনকে জানান, অস্ট্রেলিয়ার সঙ্গে বৈঠকে আমাদের দিক থেকে প্রস্তাব ছিল শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা অব্যাহত রাখা। তারা এ বিষয়ে আমাদের আশ্বস্ত করেছে। অস্ট্রেলিয়ার প্রতিনিধি দল বলেছে, স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উত্তরণের পরও তারা বাংলাদেশকে শুল্কমুক্ত বাজার সুবিধা দেবে।

সর্বশেষ খবর