চলতি মাসেই চালু হতে যাচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে বনানী সাড়ে ৭ কিলোমিটার উড়ালসড়ক। গাড়ি চলবে অন্তত ৮০ কিলোমিটার গতিতে। বদলে যাবে ঢাকার দৃশ্যপট। রাজধানীর যানজট কমাতে সহায়ক ভূমিকা রাখবে এ প্রকল্প। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন হলে দিনে অন্তত ৮০ হাজার যানবাহন চলাচল করবে নির্বিঘ্নে। থাকবে না কোনো সিগন্যাল। প্রকল্পের প্রথম অংশের কাজ এগিয়েছে ৯৫ শতাংশ। দ্বিতীয় অংশ বনানী-তেজগাঁওয়ের কাজ এগিয়েছে ৫০ শতাংশ। তৃতীয় অংশ তেজগাঁও-কুতুবখালীর কাজও এগিয়ে চলেছে পুরোদমে। এ প্রকল্প চালু হলে একদিকে যেমন যানজট কমবে, অন্যদিকে মূল্যবান কর্মঘণ্টাও সাশ্রয় হবে। পরিবহন খরচও কমে আসবে। এতে ঢাকা ও চট্টগ্রামে খাদ্যসহ অন্যান্য পণ্য পরিবহন খরচ উল্লেখযোগ্য হারে কমে আসবে বলে মনে করেন প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা। যার একটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে দেশের সামষ্টিক অর্থনীতিতে।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের প্রকল্প পরিচালক এ এইচ এম সাখাওয়াত আকতার বাংলাদেশ প্রতিদিনকে বলেন, বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের কাজ প্রায় শেষ। এ অংশের কাজ এগিয়েছে ৯৫ শতাংশ। টোল প্লাজাসহ অন্যান্য ফিনিশিংয়ের বাকি কাজ শেষ হয়ে গেলে তখন বলা যাবে কবে নাগাদ এটা চালু করা যাবে। এদিকে বনানী থেকে তেজগাঁও অংশের কাজও দ্রুত এগোচ্ছে। জুনের মধ্যে এ অংশের কাজ শেষ হয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশে সরেজমিন ঘুরে দেখা যায়, কাজ এগিয়েছে অনেক দূর। বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশের চলার পথ পুরোটাই প্রস্তুত প্রায়। বসেছে সড়কবাতি, ওঠানামার র্যাম্পের সঙ্গে সড়ক সংযোগের কাজ কিছুটা বাকি রয়েছে। টোল প্লাজার কাজ চলমান। টোল প্লাজার কাজ শেষ হলেই বিমানবন্দর থেকে বনানী অংশ খুলে দেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন প্রকল্প পরিচালক।বিমানবন্দর থেকে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের কুতুবখালী পর্যন্ত ৪৬ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার (র্যাম্পসহ) প্রকল্প নেওয়া হয় তিন ভাগে। এর মধ্যে মূল উড়ালসড়কের দৈর্ঘ্য ১৯ দশমিক ৭৩ কিলোমিটার। কিন্তু ভূমি অধিগ্রহণ, নকশা বদল, অর্থের সংস্থানসহ নানা জটিলতায় চারবার পিছিয়ে দেওয়া হয় নির্মাণকাজ শেষ করার সময়সীমা। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ব্যয় বাড়লেও প্রকল্পটি সমাপ্ত হতে যাচ্ছে এটা একটা স্বস্তির বিষয়। তবে সময় বৃদ্ধির কারণে যে ব্যয় বেড়েছে এতে সরকারের অর্থেরও অপচয় হয়েছে বলে মনে করেন বিশ্লেষকরা। প্রকল্প-সংশ্লিষ্টরা বলছেন, প্রকল্প বাস্তবায়িত হলে চট্টগ্রাম ও সিলেটসহ পূর্বাঞ্চল এবং পদ্মা সেতু হয়ে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের যানবাহন ঢাকায় প্রবেশ না করে সরাসরি উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে প্রবেশ করবে। আবার উত্তরাঞ্চল থেকে আসা যানবাহনগুলোও ঢাকাকে পাশ কাটিয়ে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলে সরাসরি যাতায়াত করতে পারবে। ফলে ঢাকা ও পার্শ্ববর্তী এলাকার যানজট কমবে। কমবে ভ্রমণের সময় এবং খরচ। মেগা সিটি ঢাকার সঙ্গে অন্যান্য জেলার যোগাযোগব্যবস্থার সহজীকরণ ও আধুনিকায়নের পাশাপাশি এ প্রকল্প দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে উল্লেখযোগ্য প্রভাব ফেলবে বলে আশা করা হচ্ছে। জানা গেছে, বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মতো এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে টোল দিয়ে চলাচল করবে সব ধরনের যানবাহন। প্রকল্প ব্যয় ও টোলের হার বৃদ্ধি-সংক্রান্ত প্রস্তাব ২০১৩ সালের নভেম্বরে অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে অনুমোদন করা হয়। তবে প্রকল্প চালুর আগে সেটা সংশোধিত হয়ে আবার অর্থনৈতিক বিষয়-সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটিতে আসবে বলে জানা গেছে। প্রাথমিক প্রস্তাব অনুযায়ী টোল ধরা হয়েছে প্রাইভেট কারসহ অন্যান্য মোটরগাড়িতে ১২৫ টাকা, যাত্রীবাহী বাসে ২৫০ টাকা, ৬ চাকার ট্রাকে ৫০০ টাকা আর ৬ চাকার বেশি ট্রাকের জন্য ৬২৫ টাকা। নির্মাতা প্রতিষ্ঠান ইতালিয়ান থাই ডেভেলপমেন্ট পাবলিক কোম্পানি লিমিটেডের সঙ্গে আলাপ-আলোচনার ভিত্তিতে তিন বছর পর পর টোলের হার পুনর্নির্ধারণ করা হবে। এক্সপ্রেসওয়ে থেকে ২৫ বছর টোল আদায় করবে নির্মাতা প্রতিষ্ঠান। তবে টোলের এ হার এখনো চূড়ান্ত নয়।
নির্মাণ শুরুর প্রায় ১২ বছর পর অবশেষে যান চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হচ্ছে ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের একাংশ (বিমানবন্দর থেকে বনানী)। যদিও এ প্রকল্পের মেয়াদ ধরা হয়েছিল পাঁচ বছর। ঢাকা এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে নির্মাণ প্রকল্প শেষ হওয়ার কথা ছিল ২০১১ সালের জুলাই থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বরে। এখন চলে ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপের (পিপিপি) ভিত্তিতে বাস্তবায়নাধীন এ প্রকল্পের প্রথম অংশ বিমানবন্দর থেকে বনানী পর্যন্ত প্রায় সাড়ে ৭ কিলোমিটারের কাজ এগিয়েছে ৯৫ শতাংশ। সম্পন্ন হয়েছে পিচ ঢালাই। বসানো হয়েছে সড়ক, সড়ক বিভাজক, সড়কবাতি ও রেলিং। টোল প্লাজায় মেশিন বসানোর কাজ চলছে। এ ছাড়া চলছে রঙের কাজ। প্রকল্পের প্রথম অংশের উদ্বোধন করা হতে পারে চলতি মাসেই। ১২ বছরে এ প্রকল্প সংশোধন হয়েছে পাঁচবার। ব্যয় বেড়েছে প্রায় সাড়ে চার গুণ। শুরুতে ২০১১ সালে ব্যয় ধরা হয় ৩ হাজার ২১৬ কোটি ৮৭ লাখ টাকা। সব শেষ মেয়াদ বাড়ানো হয়েছে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত। আর এতে ব্যয় দাঁড়িয়েছে ১৩ হাজার ৮৫৮ কোটি টাকা।