নির্বাচন কমিশনে নানা দাবিদাওয়া নিয়ে সরব রয়েছেন বঞ্চিত কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। একই সময়ে নিবন্ধনবঞ্চিত রাজনৈতিক দলগুলোও বিক্ষোভ করছেন ইসির সামনে। প্রতিদিন বিভিন্ন অনিবন্ধিত দলের নেতা-কর্মীরা বিক্ষোভের পাশাপাশি ইসি ভবনে ঢুকেও নিজেদের দাবির পক্ষে আওয়াজ তুলছেন। নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিরাপত্তাকর্মীরাও নেমেছেন আন্দোলনে। দাবি তুলেছেন পদোন্নতি ব্যবস্থা চালুসহ ওভার টাইম প্রদানের। একই সঙ্গে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সুরক্ষা সেবা বিভাগে অধীনে নেওয়ার আইন বাতিল এবং এনআইডি নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনেই রাখার দাবি জানিয়েছেন ইসি কর্মকর্তারা। এর মধ্যে প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আউয়ালের কাছে এ বিষয়ে স্মারকলিপিও দিয়েছেন তারা।
ইসির কর্মকর্তাদের দাবি, ছাত্র-জনতার সফল বিপ্লব ও আত্মত্যাগের বিনিময়ে গত ৫ আগস্ট ফ্যাসিস্ট শাসনামলের পতনের মধ্য দিয়ে নতুন বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে। ফলস্বরূপ অন্তর্বর্তী সরকার বৈষম্যহীন বাংলাদেশ বিনির্মাণে নবযাত্রা শুরু করেছে। তাই ডাটাবেজ ম্যানুপুলেট করার হাত থেকে রক্ষা করতে হবে। বিগত সরকার সুশীল সমাজ, রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞদের মতামত উপেক্ষা করে দুরভিসন্ধিমূলকভাবে নাগরিকদের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিগত ও গোপনীয় তথ্য যথেচ্ছ ব্যবহারের লক্ষ্যে রুলস অব বিজনেস সংশোধন করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাচন কমিশনের পরিবর্তে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের অধীন ন্যস্তকরণের সিদ্ধান্ত নেয়। জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০১০ বাতিলপূর্বক জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ প্রণয়ন করা হলেও বর্তমানে নির্বাচন কমিশনের অধীনে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। এর পক্ষে ‘জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন সংক্রান্ত কার্যক্রম নির্বাহী বিভাগের দায়িত্বের অন্তর্ভুক্ত’ এবং ‘বিভিন্ন দেশে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় উক্ত দায়িত্ব পালনে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ’ হিসেবে অপযুক্তি দেখানো হলেও প্রকৃতপক্ষে পৃথিবীর বহু দেশে নির্বাচন কমিশন, স্থানীয় সরকার, পুলিশ ও সংবিধিবদ্ধ কর্তৃপক্ষ এ দায়িত্ব পালন করে।
স্মারকলিপিতে বলা হয়, স্বাধীনতাত্তোর বাংলাদেশে নাগরিকদের নিয়ে যেসব ডাটাবেজ তৈরি হয়েছে, তার মধ্যে একমাত্র ভোটার তথা এনআইডি ডাটাবেজ ছাড়া অন্য কোনো ডাটাবেজ শতভাগ আস্থা ও গ্রহণযোগ্যতা পায়নি। এ কারণে বাংলাদেশের প্রতিটি প্রতিষ্ঠান নাগরিকদের পরিচিতি নিশ্চিতকরণে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন কর্তৃক প্রস্তুতকৃত ডাটাবেজ ও নাগরিক সেবার ওপর আস্থাশীল, যা নির্বাচন কমিশনের এক অনন্য অর্জন। এ জন্য জাতীয় স্বার্থে অমূল্য এ তথ্যভা ারকে সুসংহত রেখে অব্যাহত নাগরিক সেবা নিশ্চিতকল্পে নির্বাচন কমিশন হতে জাতীয় পরিচয়পত্র কার্যক্রম সুরক্ষা সেবা বিভাগে ন্যস্তকরণের সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনা করে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন আইন-২০২৩ বাতিল সংক্রান্ত অধ্যাদেশ জারির কার্যকর উদ্যোগ নিতে বিনীত অনুরোধ জানান কর্মকর্তারা। বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশন অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের ব্যানারে কর্মকর্তারা এ স্মারকলিপি জমা দেন। এতে আরও বলা হয়, সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে নির্বাচন কমিশনের অধীনে নাগরিকদের তথ্য সংরক্ষিত থাকায় কোনো তথ্য বিকৃতিসহ তথ্যের অপব্যবহারের সুযোগ কম। বর্তমানে সুরক্ষা সেবা বিভাগের অধীনে বাংলাদেশি নাগরিকদের পাসপোর্ট সংক্রান্ত কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। একই প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এনআইডি কার্যক্রম পরিচালনা করা হলে ডাটাবেজ ম্যানুপুলেট করার শঙ্কা দেখা দেবে এবং বিদ্যমান চেক অ্যান্ড ব্যালেন্স বিনষ্ট হবে। এতে বলা হয়, ২০০৭-০৮ সালে দল-মতনির্বিশেষে সবার আস্থার জায়গা থেকে আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের প্রত্যক্ষ তত্ত্বাবধানে এবং বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর সার্বিক সহযোগিতায় বাংলাদেশ সরকার ও ইউএনডিপিসহ নয়টি আন্তর্জাতিক দাতাসংস্থার আর্থিক সহায়তায় আন্তর্জাতিক মান অনুসরণ করে ছবিযুক্ত ভোটার তালিকা প্রণয়নের উদ্যোগ নেওয়া হয়। গত ২ মার্চ জাতীয় ভোটার দিবস উপলক্ষে প্রকাশিত চূড়ান্ত ভোটার তালিকা অনুসারে এ ডাটাবেজে প্রায় ১২ দশমিক ১৯ কোটি নাগরিকের তথ্য রয়েছে।
এদিকে এনআইডি শাখায় কর্মরতদের অনেকের চাকরিজীবন কর্মজীবনের প্রায় অর্ধেক পেরিয়ে গেছে। তাই তাদের প্রকল্প থেকে রাজস্ব খাতে না নেওয়াটা অমানবিক মনে করছেন অনেকে। এর মধ্যে জাতীয় পরিচয় নিবন্ধন (এনআইডি) আইডিইএ দ্বিতীয় পর্যায় প্রকল্পের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা তাদের কর্মবিরতির কর্মসূচি স্থগিত করলেও দাবি আদায়ে ৫১ সদস্যে আহ্বায়ক কমিটি গঠন করেছে। তাদের দাবি, চাকরি রাজস্ব খাতে নেওয়া ও এনআইডি কার্যক্রম স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে নেওয়ার সিদ্ধান্ত বাতিল করে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) অধীনেই রাখা। এ দাবিতে তারা গত ২১ আগস্ট ও ২২ আগস্ট নির্বাচন ভবনে সামনে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। এতে সারা দেশে এনআইডি কার্যত বন্ধ হয়ে যায়। পরে দাবির পরিপ্রেক্ষিতে যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়ার আশ্বাস দেন ইসি সচিব শফিউল আজিম।
পদোন্নতি-ওভার টাইম চান নিরাপত্তাকর্মীরা : নির্বাচন কমিশনের (ইসি) নিরাপত্তাকর্মীরা পদোন্নতি ব্যবস্থা চালু করা এবং ওভার টাইমের দাবি জানিয়েছেন। এ-সংক্রান্ত আবেদন ইসি সচিব শফিউল আজিমের কাছে জমা দিয়েছেন তারা। নিরাপত্তাকর্মীদের সঙ্গে কথা বলে বিষয়টি জানা গেছে। আবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, ইসিতে কর্মরত নিরাপত্তা প্রহরীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা অষ্টম থেকে স্নাতকোত্তর পর্যন্ত। আমাদের নিরাপত্তা প্রহরীদের শিক্ষাগত যোগ্যতা ও কারিগরি দক্ষতা থাকা সত্ত্বেও ওই পদে কোনো পদোন্নতির সুযোগ নেই। কিন্তু অন্যান্য দপ্তরে নিরাপত্তা প্রহরী পদ থেকে পদোন্নতি পেয়ে তৃতীয় শ্রেণির পদে পদোন্নতি পেয়ে আসছে। আমরা বাংলাদেশের প্রজাতন্ত্রের কর্মচারী হয়েও এসব সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত। এ ছাড়া আমরা ২৪ ঘণ্টা এবং সপ্তাহে সাত দিন অফিসের সার্বক্ষণিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করে থাকি। আমাদের কর্মঘণ্টা বিবেচনা করে অতিরিক্ত খাটুনি ভাতা/ওভার টাইম প্রদানে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা জরুরি।